শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সব সূচকেই অবনতি

এইচএসসি-আলিম পরীক্ষার ফল ঘোষণা : পাসের হার ৮৫.৯৫ পাসের হারে কারিগরি , জিপিএ-৫ ঢাকা শতভাগ পাসের শীর্ষে মাদরাসা বোর্ড

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

করোনা মহামারী এবং বন্যার কারণে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৮ মাস পর ২০২২ সালের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা গতবছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে, সংক্ষিপ্ত সময় এবং নম্বর বন্টনে পরিবর্তন এনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয় ব্যতীত ৬টি বিষয়ের ১২টি পত্রে শিক্ষার্থীরা সেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। পরীক্ষা শেষে নির্ধারিত ৬০ দিনের আগে ৫৭ দিনেই এই পরীক্ষার ফলাফল গতকাল বুধবার ঘোষণা করা হয়েছে। প্রকাশিত ফলাফলে ৯টি সাধারণ বোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এবার সার্বিক পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

তবে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষায় সব সূচকেই অবনতি হয়েছে। কমেছে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পাসের হার, জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা, শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। আর বেড়েছে শূণ্য পাসের প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী কমেছে ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৯৪ জন। পাসের হার কমেছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ, জিপিএ-৫ এর সংখ্যাও কমেছে ১২ হাজার ৮৮৭ জন। যা অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ১৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। শতভাগ পাস করেছে এক হাজার ৩৩০টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আর একজনও পাস করতে পারেনি ৫০টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

পাসের হারে সবার শীর্ষে রয়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের গড় ৯৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। সবার নিচে রয়েছে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ০৮ শতাংশ। বরাবরের মতো এবারও পাস ও জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক দিয়ে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে আছে মেয়েরাই। ১১টি বোর্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ৬২ হাজার ৪২১ জন।

গতকাল বুধবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ২০২২ সালের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে ফলাফলের সার্বিক দিক তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এর আগে সকালে সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ২০২২ সালের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান। পরে প্রধানমন্ত্রী কম্পিউটারের মাউস চেপে ফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা সারেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, কোভিড-১৯ ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে এবারও নির্ধারিত সময়ের পরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার ৬টি বিষয়ের ১২টি পত্রে পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে, সংক্ষিপ্ত সময়ে এবং নম্বর বন্টনে পরিবর্তন এনে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়েছে। পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসের মধ্যে দুইটি আবশ্যিক, তিনটি নৈর্বাচনিক ও একটি চতুর্থ বিষয়সহ ৬টি বিষয়ে ১২টি পত্র। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের নম্বর এসএসসি, আলিম ও সমমান এবং জেএসসি, জেডিসি ও সমমান থেকে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে জেএসসি/জেডিসি/সমমানের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি/দাখিল/সমমানের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

প্রকাশিত ফল থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষায় মোট ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৭ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। যা আগের বছর ছিল ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৮১ জন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন। সার্বিকভাবে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। যা আগের বছর ছিল ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। এবার অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর পাশাপাশি কমেছে পাসের হারও। আগের বছরের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। ২০২১ সালে রেকর্ড সংখ্যক ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার এই সংখ্যাটি কমেছে ১২ হাজার ৮৮৭জন। ১১টি বোর্ডে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২জন। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়ার হার ১৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। যে কয়জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তাদের সকলেই পাস করেছেন অর্থ্যাৎ শতভাগ পাস করেছে এমন প্রতিষ্ঠান এবার ১ হাজার ৩৩০টি। যা আগের বছরের তুলনায় কমেছে ৬০৪টি। ২০২১ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ১ হাজার ৯৩৪। অন্যদিকে একজনও পাস করতে পারেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ১০ গুণ। আগের বছর শূণ্য পাসের প্রতিষ্ঠান ছিল ৫টি, এবার একজনও পাস করতে পারেনি ৫০টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী।

সাধারণ শিক্ষা বোর্ড: ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৩৩৮টি শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৮ লাখ ১৭ হাজার ২৩০ জন। সাধারণ বোর্ডে সম্মিলিত পাসের হার ৮৪ দশমিক ৩১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৫জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাসের হার কুমিল্লা বোর্ডে ৯০ দশমিক ৭২ শতাংশ, সর্বনিম্ন দিনাজপুর বোর্ডে ৭৯ দশমিক ০৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রেও সবার শীর্ষে ঢাকা বোর্ড। সাধারণ বোর্ডগুলোতে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান ২৯৭টি এবং শূণ্য পাস করা প্রতিষ্ঠান ৪৪টি।

মাদরাসা বোর্ড: মাদরাসা বোর্ডের অধীনে ২০২২ সালের আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ছিল ৯০ হাজার ২৬৬জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৮৩ হাজার ৫৫৩জন। পাসের হার সার্বিকভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এই বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৪২৩জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। মাদরাসা বোর্ডে শতভাগ পাস করেছে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৮১৪টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে শূণ্য পাস করেছে ৪টি প্রতিষ্ঠান।

কারিগরি বোর্ড: এই বোর্ডে এবার অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৮৩ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ২০৪ জন। পাসের হার ৯৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ১০৪ জন। জিপিএ-৫ এর হার ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ। কারিগরে বোর্ডে শতভাগ পাস করেছে ২১৯টি প্রতিষ্ঠান এবং শূণ্য পাস করেছে ২টি প্রতিষ্ঠান।

ফলাফল ঘোষণা শেষে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, যদি মূল্যবোধ তৈরি না হয় তাহলে শুধু বেশি নম্বর পেয়ে কি হবে, মানবিক গুণে গুণান্বিত হও, চারপাশে তাকাও, মানুষকে ভালোবাস। নীতি-নৈতিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠো, স্বদেশ প্রেমে উজ্জীবিত হও, নিঃস্বার্থ চিত্তে মানব কল্যাণে নিবেদিত হওয়। অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, সন্তানকে অসুস্থ প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দিবেন না, স্বার্থপর হিসেবে গড়ে তুলবেন না। দেশের কল্যাণে, মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হওয়ার শিক্ষা যদি আপনার সন্তান না পায়, মনে রাখবেন এ শিক্ষা অর্থবহ হবে না, শিক্ষার আসল উদ্দেশ্যই বৃথা যাবে। শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা শিক্ষকতা পেশায় আছেন তাদের দ্বায়িত্বই অনেক বেশি। শিক্ষার গুণগত পরিবর্তনে বিষয়ভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে শিক্ষকদের ভূমিকায় প্রধান। মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক তৈরির ক্ষেত্রেও শিক্ষকদেরকেই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Muhammad Shahadat Hossain ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:৫৬ এএম says : 0
· দিনশেষে রেজাল্ট একটা সংখ্যা। মানুষকে মূল্যায়নের সর্বেশেষ পদ্ধতি হচ্ছে পরীক্ষা পদ্ধতি। লাখ লাখ A+ ধারী বের হচ্ছে প্রতিবছর। অথচ হাজারো সফল মানুষ আছে যাদের রেজাল্ট প্রথাগত ভবে ভালো নয়। বাচ্চাদের যেকোনো রেজাল্টাই উৎসাহিত করা উচিত। সব রকম রেজাল্টধারী পরীক্ষার্থীদের জন্য রইলো ভালোবাসা। সামনে এগিয়ে যাও..
Total Reply(0)
Mahbub Bin Razzak ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:৫৬ এএম says : 0
এক সময় সবাই মিলে একসাথে বেকারত্বের সাধ উপভোগ করবো
Total Reply(0)
Giringibuzz-গিরিঙ্গীবাজ ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৮:৫৭ এএম says : 0
· ভালো রেজাল্ট হচ্ছে এ প্লাস এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু দেশে সুশিক্ষিতের সংখ্যা দিন দিন ব্যাপক হারে কমতেছে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন