কিশোরগঞ্জের ভৈরবের কালিপুর গ্রামে গরিব-দুস্থদের অর্ধেক দামে চাল-ডাল দেওয়ার নামে কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন মোহাম্মদ মামুন (৪০) নামে এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তি ১২০০ টাকায় এক বস্তা (৫০ কেজি) করে চাল দেবেন বলে জানান ভুক্তভোগীদের। এছাড়া তেল, ডাল, আলু, চিনিও বাজারমূল্যের অর্ধেকের কমে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। কম দামে পণ্য পাওয়ার আশায় গত এক মাসে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ মামুনকে টাকা দিয়েছিলেন, যার পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়াবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোহাম্মদ মামুন ভৈরবের বাসিন্দা নন। দুই বছর ধরে ভৈরবে তার আসা যাওয়া। এক বছর আগে কালিপুর মহল্লায় জমি কিনে একটি দোতলা ভবন নির্মাণ করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে সেটি বিক্রিও করে দেন। মাস ছয়েক আগে উপজেলার চাঁনপুর গ্রামে বিয়ে করেন তিনি। এলাকায় তিনি নিজেকে কখনো সাংবাদিক, কখনো কমিউনিটি পুলিশের সদস্য পরিচয় দেন।
দুই মাস ধরে স্ত্রীকে নিয়ে পৌর শহরের ১২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি নীল মিয়ার বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস শুরু করেন। মাস দেড়েক আগে এলাকার কিছু গরিব মানুষকে বিনামূল্যে চাল-ডাল দেন। তখন সবার কাছে দানশীল হিসেবে তিনি পরিচিতি পান। এরপর তিনি দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করেন। একটি প্যাকেজে ১ হাজার ২০০ টাকায় এক বস্তা চাল পাওয়ার কথা বলা হয়। অন্য প্যাকেজে ছিল তেল, ডাল, চিনি ও আলু।
এলাকায় তিনি প্রচার করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা মন্ত্রণালয় থেকে তার কাছে অনুদান আসে। গরিব মানুষকে তিনি ওই অনুদান থেকে সাহায্য করছেন। তার এই কাজে স্থানীয় কয়েকজন সহযোগী ছিলেন।
নামমাত্র মূল্যে খাদ্যপণ্য বিতরণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর প্রতিদিন কয়েকশ মানুষ মামুনের বাড়িতে ভিড় করতে শুরু করেন। কয়েকদিন তিনি ঘোষিত মূল্যে মানুষের হাতে খাদ্যপণ্য তুলেও দেন। এই খবর আরও ছড়িয়ে পড়লে অধিক লাভের আশায় কেউ কেউ ২০ বস্তা চালের টাকাও জমা দিয়ে যান।
টাকাপ্রাপ্তির বিপরীতে নিজের একাধিক ধরনের ভিজিটিং কার্ড দেন মামুন। এক সপ্তাহ কিংবা দুই সপ্তাহের ব্যবধান রেখে কার্ডে পণ্য গ্রহণের তারিখ দেওয়া হয়। তবে গত শুক্রবার তিনি ঘর তালাবদ্ধ করে লাপাত্তা হয়ে যান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালিপুর এলাকায় যে বাসায় তিনি থাকতেন সেই বাসার দরজায় তালা ঝুলছে। বাসার মালিক যুবলীগ নেতা নীল মিয়া বলেন, গত শুক্রবার সকালে কাজের মেয়ের কাছে চাবিটি দিয়ে চাল আনতে যাচ্ছেন বলে বের হন মামুন। এরপর আর ফেরেননি।
পলতাকান্দা এলাকার বাসিন্দা আসমা বেগম বলেন, মানুষের কাছে শুনেছি অর্ধেক দামে চাল-ডাল দিচ্ছেন তিনি। সেজন্যই এক বস্তা চাল, আর তেল, ডাল, আলু, চিনি নিতে তার কাছে দুই হাজার টাকা দিই। তিনি বলেছিলেন আগামী শনিবার আমাকে কমদামের জিনিস দেবেন। কিন্তু লোকমুখে শুনছি তিনি নাকি পালিয়েছেন। এখন আমাদের কী হবে, কার কাছে বিচার চাইবো?
খোদেজা বেগম বলেন, অন্যদের দেখাদেখি আমিও মামুনের বাড়িতে গিয়েছিলাম। টাকাও দিয়েছি। কিন্তু এখন তাকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। নিজেদের টাকা ফিরে পাওয়া নিয়ে এখন শঙ্কায় আছি।
এ বিষয়ে ভৈরব পৌর মেয়র ইফতেখার হোসেন বলেন, গত ২৯ জানুয়ারি জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ রাসেল শেখ এক মতবিনিময় সভায় ভৈরবে আসেন। সেখানে মামুন দলবল নিয়ে থানা চত্বরে উপস্থিত হন। সভায় মামুনের বিষয়টি এসপির নজরে এনে প্রতারিত হওয়ার শঙ্কার কথা বলেছিলাম। আমি যথাসময়ে সতর্ক করেছি। কিন্তু কেউ সতর্ক হয়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম জানান, এই ঘটনাটি মৌখিকভাবে শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কারো কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাইনি। যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন