হাঁটু মুড়ে বসে প্রপোজ করা নাইটহুড অর্থাৎ মধ্যযুগের সময়কার একটি ঐতিহ্য। এ সময়ে বিবাহ এবং ধর্ম একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল। এমন পরিস্থিতিতে পুরুষদের নতজানু হয়ে তাদের নারী সঙ্গীদের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিতে হত, যেমন একজন সৈনিক তার প্রভুর সামনে নতজানু হয়ে শ্রদ্ধা ও আনুগত্য প্রদর্শন করেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে প্রেম নিবেদনের এমন রীতি চালু হল কোথা থেকে?
সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের উলটে দেখতে হবে ইতিহাসের পাতা। যার থেকে জানা যায়, হাঁটু মুড়ে বসে প্রেম প্রস্তাব দেয়ার রীতি এসেছে মূলত পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকেই। ভিক্টোরিয়ান যুগের সমাজে মেনে চলতে হত সৌজন্য প্রকাশের হাজারও খুঁটিনাটি। রাজারাজড়াদের সামনে মাথা তুলে কথা বলার অধিকারটুকু ছিল না সাধারণ মানুষের। রাজদরবারে হোক বা রাস্তাঘাটে, রাজপরিবারের কাউকে দেখলেই বিশেষ কিছু ভঙ্গিতে জানাতে হত সম্মান। আর তার মধ্যেই পড়ত হাঁটু মুড়ে বসে সম্মান জানানোর প্রথা। বিশেষ করে অভিজাত নারীদের সামনে এভাবেই শিভ্যালরি প্রকাশ করত মধ্যযুগের যোদ্ধারা।
অন্যদিকে কোনও যুদ্ধে জিতে ফেরার পর মনের মানুষকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই রেওয়াজ বজায় রাখতেন সৈনিকরা। সেই থেকেই এর শুরু। তবে সৈনিক ছাড়া, সাধারণ পুরুষরাও পছন্দের মানুষটিকে এইভাবেই প্রেম নিবেদন করতেন। ধীরে ধীরে সেই প্রথা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বেই। আবার প্রাচীন যুগে প্রজা কিংবা রাজদরবারের কোনও বন্দিকেও হাঁটু মুড়ে বশ্যতা প্রদর্শনে বাধ্য করা হত। অনেকসময় তেমন নিয়ম খাটত উপনিবেশের মানুষের ক্ষেত্রেও। হয়তো সেই বশ্যতার কথা মনে রেখেই ভালবাসার নারীর কাছে হাঁটু মুড়ে বসতেন প্রেমিক পুরুষেরা। আশ্বাস দিতেন, সেই নারীর একান্ত অনুগত হয়ে থাকার। আর সেই চলই স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। বর্তমান যুগে দাঁড়িয়ে একপ্রকার ধরেই নেয়া হয়, প্রেম কিংবা বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার জন্য সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য এই ভঙ্গিটিই।
তবে সঙ্গীকে প্রপোজ করার পদ্ধতি স্থানভেদে ভিন্ন হতে পারে। যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাতে কোনো মেয়েকে প্রপোজ করতে হলে প্রথমে ছেলেটিকে তার মায়ের সাথে কথা বলতে হয়। একই সময়ে, আয়ারল্যান্ডে প্রস্তাব দেয়ার জন্য একটি বিশেষ ধরনের আংটি পরান হয়। সূত্র: এমএসএন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন