হাটি হাটি পা পা করে প্রথম ১৫দিন পার করলো অমর একুশে বইমেলা। গতকাল বুধবার মেলার ১৫তম দিনে মেলা প্রাঙ্গন ঘুরে এর মধ্যেই আঁচ করা গেল বিক্রির শীর্ষে থাকা বইগুলোর তালিকা। মেলার এই সময়ে দাঁড়িয়ে পাঠকরা সহজেই খুঁজে নিতে পারছেন তাদের পছন্দের বই। কারণ মোটামুটি প্রত্যাশিত সব লেখকের বই ইতোমধ্যেই মেলায় প্রাকশিত হয়েছে। ফলে এখন আর লেখকের বই প্রকাশের জন্য কোন ধরনের অপেক্ষা করতে হচ্ছেনা বা যাচাই করতে হচ্ছেনা। পাঠকরা আগে পড়ে যে বইগুলোর রিভিও ভালো বলছেন সেগুলো অতি সহজেই কিনে নিতে পারছেন তারা।
এদিকে বিগত কয়েক বছর ধরেই বইমেলায় নবীন ও তরুণ সেলিব্রিটি লেখকদের বই বিক্রির শীর্ষে থাকছে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এসব তরুণ লেখকদের ভীড়ে হারিয়ে যায়নি কিংবদন্তি লেখকরা। মেলা ঘুরে পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, এখনো তরুণ সব জনপ্রিয় লেখকের ভীড়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে কিংবদন্তি লেখকরা। গতকাল বুধবার এবারের বইমেলায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ বিক্রিত বইগুলোর খোঁজে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় প্রকাশনীতে কথা হয় ইনকিলাবের এই প্রতিবেদকের।
জানা যায় এবারের বইমেলায় প্রকাশনা সংস্থা মিজান পাবলিশার্সে সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে লেখক ও অভিনেত্রী রওনক বিশাকা শ্যামলীর লিখা পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই, আনিসুল হকের চার কিশোর গোয়েন্দা ও ধর্মীয় বই দুআ-ই ইবাদত। চারুলিপি প্রকাশনীতে বিক্রির শীর্ষে রয়েছে শহীদুল্লাহ কায়সারের সারেং বৌ, সংশপ্তক, জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি। ঐতিহ্য প্রকাশনীতে পাওয়া যাচ্ছে বর্তমান বিশ্বের অর্থনীতি নিয়ে লিখা মোহাইমিন পাটোয়ারীর লিখা গল্পে গল্পে অর্থনীতি, ব্যাংক ব্যবস্থা ও টাকার গোপন রহস্য, ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থার শুভংকরের ফাঁকি।
শব্দশৈলীতে বিক্রির শীর্ষে রয়েছে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের আদর্শ হিন্দু হোটেল, নাফিজ ফুয়াদের সাইকোলজিক্যাল বই পজিটিভ সাইকোলজি অ্যান্স মেন্টাল হেলথ, কামরুন নাহার মুক্তির দ্য ইন্ড অফ মেন্টাল ডিসঅর্ডার। তাম্রলিপিতে বিক্রির শীর্ষে রয়েছে তরুণ কার্টুনিস্ট অন্তিক মাহমুদের লিখা দুইশ পঞ্চাশ, মুহম্মদ জাফর ইকবালের লিখা ফেরা ও তাশফিকাল সামির রোমান্টিক উপন্যাস নব্বই দশকের ভালোবাসা।
মাওলা ব্রাদার্সের শীর্ষে রয়েছে আহমদ ছফার যদ্যপি আমার গুরু, শাহাদুজ্জামানের ক্রাচের কর্ণেল। হুমায়ূন প্রেমীরা খুঁজতে খুঁজতে চলে আসেন অন্যপ্রকাশে। এই প্রকাশনীতে বেস্ট সেলারে রয়েছে কিংবদন্তি এই কথাসাহিত্যিকের লিখা উপন্যাস দেয়াল, মাতাল হাওয়া, নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল, মধ্যাহ্ন অখণ্ড।
অনন্যাতেও রয়েছে কিংবদন্তি এই কথাসাহিত্যিকের সারি সারি বই। বিক্রয়কর্মীরা জানান, এখানেও পাঠক চাহিদার শীর্ষে রয়েছে হুমায়ূন আহমেদ। হুমায়ূন আহমেদের বাইরে এখানে বিক্রির শীর্ষে রয়েছে হানিফ সংকেতের লিখা আবেগ যখন বিবেকহীন, নিশাত ইসলামের তবুও জীবনে প্রেম আসে, মোহাম্মদ এজাজ হোসেনের একাত্তর ও আমার শৈশব।
অনিন্দ্য প্রকাশনীতে বেস্ট সেলারে রয়েছে মোশতাক আহমেদের প্যারাসাইকোলজি থ্রিলার স্বপ্নখুনি, ভৌতিক থ্রিলার ছায়াআত্মা ও সায়েন্স ফিকশন নিতিনা। আরকান ফয়সালের ক্রাইম থ্রিলার ডার্ক কিলার ও ডার্ক মাইন্ড গ্রুপ বইটিও রয়েছে বিক্রির শীর্ষে। রোমান্টিক উপন্যাসের মধ্যে বেশি বিক্রি হচ্ছে রেদোয়ান মাসুদের ভালোবাসি, জুলফিকার শাহিনের যে সুতোয় তুমি স্বপ্ন বোনো। এছাড়া গতকাল মেলায় এসেছে ডি অমিতাভের রঙিন ইঙ্গিত।বিপণনকর্মী মো. আবু ফাহিম বলেন, বিক্রির শীর্ষে রয়েছে থ্রিলার বই। মোশতাক আহমেদের বইগুলো সবথেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে।
অন্যধারায় বিক্রির শীর্ষে রয়েছে জনপ্রিয় তরুণ লেখক সাদাত হোসাইনের লিখা স্মৃতিগন্ধা, শেষ অধ্যায় নেই, ছদ্মবেশ, সত্যটা মিথ্যা ও নির্বাসন। থ্রিলার বইয়ের মধ্যে রয়েছে রবিন জামান খানের সপ্তরিপু, রাজদ্রোহী ও রুদ্ধরাত। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সে রোমান্টিক ধারার উপন্যাস হাসানাত লোকমানের লিখা অপ্রেম, জাহিদুন্নবীর কৃষ্ণপক্ষের ধ্রুব ও মারুফ রসূলের মুহূর্ত থামো, তুমি সুন্দর বইটির কাটতি বেশি বলে জানান বিক্রয়কর্মী জাহিদ। এছাড়া থ্রিলারের মধ্যে রয়েছে অরুণ কুমার বিশ্বাসের চিলিংহ্যাম দুর্গে আতঙ্ক ও সাইকোপ্যাথ। জাহিদ বলেন, কবিতার বই বেশি প্রকাশ হলেও মূলত বিক্রি বেশি গল্প, উপন্যাস। অন্যদিকে থ্রিলার বইয়ের জনপ্রিয়তা ছাড়িয়ে যাচ্ছে সবকিছুকে। মেয়েরা বেশিরভাগ প্রেমের উপন্যাসই বেশি কিনছে। গতকাল বুধবার মেলায় নতুন বই এসেছে ৮৪টি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন