বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সিংগাইরে ২ ব্রিজের নির্মাণ কাজ বন্ধ

চুক্তির মেয়াদ শেষ : কাজ নিয়ে অনিশ্চয়তা

মানিকগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০২ এএম

ব্রিজের নির্মাণ কাজে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েও মানিকগঞ্জের সিংগাইরে প্রায় ৫ কোটি টাকা বরাদ্দের দু’টি ব্রিজের কাজ বন্ধ রয়েছে। এতে জনদুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে। ব্রিজ দুটির নির্মাণ কাজ সমাপ্তি নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এদিকে দুর্ভোগ লাগবে দ্রুত ব্রিজ দুটি নির্মাণের দাবী জানিয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
জানা যায়, ব্রিজ দুটির একটি হচ্ছে উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের ভূমদক্ষিণ হতে খাসেরচর রাস্তার নয়াপাড়া গ্রামে। ১২ মিটার দৈঘের্যর এ ব্রিজটির নির্মাণ ব্যয় ১ কোটি ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এ ব্রিজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে ঢাকার বারিধারা ডিওএইচএস-এর মেসার্স মোমিনুল হক, আদর এন্টারপ্রাইজ এবং হাসিনা আলম এন্ড সন্স। ঠিকাদার ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে নির্মাণ কাজ শুরু করে শুধু পাইলিং করেই তা বন্ধ করে চলে যায়। এ পর্যন্ত আর কোন কাজ না হলেও সমাপ্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে।
অপর ব্রিজটি সিংগাইর-মানিকনগর-সিরাজপুর সড়কের সায়েস্তা ইউনিয়নের ঝিকাতলায়। ৪৬ মিটার দৈর্ঘ্যরে এ ব্রিজের নির্মাণ ব্যয় ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৪ হাজার টাকা। এ ব্রিজেরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে মেসার্স মোমিনুল হক এবং আদর এন্টারপ্রাইজ। অনুরূপভাবে ঠিকাদার ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে কাজ শুরু করে শুধু পাইলিং করেই কাজ বন্ধ রেখেছে। এটির নির্মাণ সময় শেষ হচ্ছে আগামী মার্চ মাসে। বতর্মানে ব্রিজ দুটি এলাকাবাসির কাছে যেন অভিশপ্ত হয়ে ওঠেছে।
উপজেলা প্রকৌশল (এলজিইডি) অফিস সূত্রে জানা যায়, দুটি ব্রিজেরই মোট কাজের মাত্র ২০শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দু’টি ব্রিজেরই কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো মানুষ তো দূরের কথা, নির্মাণসামগ্রীর কিছুও আশপাশে নেই। শুধু মরিচা পড়া পাইলিংয়ের রড বের হয়ে আছে। এলাকাবাসী জানান, ব্রিজ দু’টি নির্মাণ না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
এদিকে নয়াপাড়া ব্রিজটির কাজ বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে নয়াপাড়া মডেল একাডেমির পরিচালক মো. সারোয়ার হোসেন জানান, অনিরাপদ ডাইভারসন দিয়ে যাতায়াতে মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ভূমদক্ষিণ-নয়াপাড়া হয়ে খাসেরচর এবং মেদুলিয়া-ধল্লাবাজার-ফোর্ডনগর হয়ে সাভার এবং একইভাবে সিংগাইর উপজেলা সদরে যাতায়াতকারী লোকজন। এছাড়া যাত্রী ও কাঁচামাল এবং বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহনও চলছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দ্রুত ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে অনুরোধ করেন তিনি।
অপরদিকে ঝিকাতলা ব্রিজটির কাজ বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. আওলাদ হোসেন বলেন, সংস্কার কাজ বন্ধ থাকা খানাখন্দে ভরপুর যান চলাচলের অনুপোযোগী সিংগাইর-মানিকনগর সড়কে ঝিকাতলা ব্রিজটির কাজ বন্ধ থাকায় উপজেলার প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রায় নেমে এসেছে মরার ওপর খরার ঘাঁ। সড়কটি দিয়ে যান্ত্রিক গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা পায়ে হেঁটেও চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দ্রুত ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে মানুষের ভোগান্তি কমবে।
নয়াপাড়া ব্রিজ প্রসঙ্গে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসিনা আলম এন্ড সন্সের মালিক মো. রবিউল হোসেন বলেন, কাজ শুরুর পর হঠাৎ করেই নির্মাণ সামগ্রীর উচ্চহারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। এখন কাজ সম্পাদনে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য পুনঃনির্ধারণ এবং বর্ধিত সময়ের ব্যবস্থা করে না দিলে আমার পক্ষে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব না। আমি লোকশান দিয়েতো আর কাজ করবো না।
এদিকে একই অভিযোগ করে ঝিকাতলা ব্রিজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মোমিনুল হক এবং আদর এন্টারপ্রাইজের সত্বাধীকারী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য পুনঃনির্ধারণসহ বর্ধিত সময়ের ব্যবস্থা করে দিতে। তবে যাই হোক আমি শিঘ্রই কাজ শুরু করবো।
স্থানীয় মো. হাবিবুর রহমান জানান, একদিকে রাস্তার বেহাল দশা, অপর দিকে ব্রিজ নির্মাণ কাজ বন্ধ। এতে আমরা চরম ভোগান্তিতে আছি। জনদুর্ভোগ লাগবে ঝিকাতলা ব্রিজটির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে আমি কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে ধল্লা ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম ভূইঁয়া বলেন, ভূমদক্ষিণ হতে খাসেরচর রাস্তার নয়াপাড়া ব্রিজটি অত্যান্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর যাতায়াতের সুবিধার্থে বন্ধ থাকা ব্রিজটির নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার ব্যাপারে আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবো।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, বন্ধ থাকা ব্রিজ দুটির কাজ সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদারদের একাধিকবার বলেছি। সর্বশেষ তারা গত ২৯ জানুয়ারি আমাকে এ বিষয়ে একটি আপডেট তথ্য জানাতে চেয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা কোন প্রকার সিদ্ধান্ত জানাইনি। শিঘ্রই যদি তারা কাজ শুরু করে তাহলে ভালো। অন্যথায় আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন