শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ইমিগ্রেশনের আচরণ সভ্য হওয়া দরকার

| প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০১ এএম

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের দ্বারা বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক নেতা, মানবাধিকার কর্মী ও সরকারের সমালোচকদের হয়রানির অভিযোগ নতুন নয়। এই হয়রানি থেকে সংবাদপত্রের সম্পাদক, সাংবাদিক, বিশিষ্ট নাগরিক এমনকি সাধারণ যাত্রীরও রেহাই মেলে না। ইংরেজি দৈনিক ‘নিউ এজ’এ প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা, মানবাধিকার কর্মী ও সরকারের সমালোচক সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, তারা প্রায়শই বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হন। বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, তাদের অধিকাংশ শীর্ষস্থানীয় নেতার বিমানবন্দরে অপেক্ষায় রাখা ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিমান ছাড়ার প্রাক্কালে তাদের অনুমোদন মেলে বিমানে চড়ার। বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও অনুরূপ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মাদ নুর খান বিমানবন্দরে একই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি তার যুক্তরাজ্য ও নেপাল সফরে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’র সাধারণ সম্পাদক আদিলুর রহমান খানও একই ধরনের হয়রানির মুখোমুখী হয়েছেন। জাতিসংঘের তিন র‌্যাপোটিয়ার এক যৌথ ঠিচিতে আদিলুর রহমান খানের হয়রানির বিষয়টি জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির কাছে জানিয়েছেন। সাধারণত সাদা পোশাকে আসা কোনো ব্যক্তি পরিচয় গোপন রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ইমিগ্রেশন ডেস্কে কর্মরত ব্যক্তিরা ‘উপরের নির্দেশে’ বিমান ছাড়ার পূর্ব পর্যন্ত বসিয়ে রাখেন।

বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে কাজ করে স্পেশাল ব্রাঞ্চ। এই বিভাগের একজন কর্মকর্তা নিউ এজ’কে জানিয়েছেন, মানুষ এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে, সেটা তার জানা নেই। কেউ এমন অভিযোগ তোলেনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের এমন কোনো নির্দেশনা নেই। তিনি অবশ্য উল্লেখ করেছেন, কারো বিরুদ্ধে দুদকের কোনো বিষয় থাকলে অনেক সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। বিমানযাত্রীদের যাওয়া ও আসার সময় বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালানোর জন্য যতটা সময় নেয়া প্রয়োজন তা নিতে এবং যতটুকু জ্ঞিসাবাদ করা দরকার, তা করতে কারো আপত্তি থাকতে পারে না। কিন্তু কাউকে ভীত-সন্ত্রস্ত করার জন্য কিংবা হয়রানির উদ্দেশ্যে বসিয়ে রাখা এবং অপ্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ করা কোনো বিবেচনাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্মকর্তা বা স্বরাষ্টমন্ত্রী যাই বলুন, যাত্রীদের বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনে যে অহেতুক, অপ্রয়োজনে এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে হয়রানি করা হয়, সেটা বহুল আলোচিত ও প্রমাণিত। মোহাম্মাদ নূর খান ও আদিলুর রহমান খানের সঙ্গে যা হয়েছে, তা কি অস্বীকার করা যাবে? বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের হয়রানির কথা তো বলাই বাহুল্য। এমন সম্পাদক ও সাংবাদিক আছেন, যারা একইভাবে হয়রানির মুখে পড়েছেন। বলা বাহুল্য, সরকারের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া এরকম বিব্রতকর ও হয়রানিমূলক ঘটনা ঘটতে পারে বলে কেউ মনে করে না।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নানামুখী উন্নয়ন কাজ চলছে। থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হলে এর পরিসর, সক্ষমতা, সুযোগ-সুবিধা অনেক বাড়বে। তবে শুধু অবকাঠামোগত দিক দিয়ে এ বিমানবন্দর যতই আন্তর্জাতিকমানের হোক না কেন, তাতে কোনো লাভ নেই, যদি সেবার মান আন্তর্জাতিক মানদ-ে উন্নীত না হয়। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, সেবামানের বিবেচনায় এ বিমানবন্দর অনেক পিছিয়ে আছে। ইমিগ্রেশনে বিলম্ব ও হয়রানি ছাড়াও নানারকম অব্যবস্থা রয়েছে। অনিরাপত্তা, লাগেজ চুরি, মালামাল লোপাট পরিণত হয়েছে সাধারণ ঘটনায়। বিমানবন্দরে বহু সংস্থা কাজ করে। তাদের সকলের আচরণ একরকম নয়। পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের আচরণ বিতর্কিত, তাদের আচার-আচরণ নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন উঠেছে। আজো তাতে তেমন ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেনি। উল্লেখ্য যে, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পুলিশের ভাবমর্যাদা সন্তোষজনক নয়। গণনিপীড়ন ও মানবাধিকার লংঘনের জোর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। যা হোক, অন্যান্য দেশে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে বিমানবন্দর ব্যবস্থাপনা কতটা উন্নত ও দৃষ্টিনন্দন ওয়াকিবহাল ব্যক্তিদের তা অজানা নেই। দু’তিন মিনিটে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষ করা কোনো বিরল নজির নয় ওইসব বিমানবন্দরে, সেখানে বিভিন্ন কাজে যাদের দায়িত্ব রয়েছে, তারা সর্বদা সক্রিয় থাকে যাত্রীদের সর্বাত্মক সেবা দেয়ার জন্য। আর আমাদের দেশের বিমানবন্দর সম্পর্কে অভিযোগের অন্ত নেই, বিশৃঙ্খলার শেষ নেই। বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা তরিত্ব, হয়রানিমুক্ত ও নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। সরকার, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহ একাট্টা হয়ে সেবাসুষমা ও আচরণগত সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
hassan ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:১৫ পিএম says : 0
যতদিন পর্যন্ত আমাদের দেশে আল্লাহর আইন দিয়ে দেশ শাসন করা হবে না ততদিন পর্যন্ত এইসব নামধারী নরপিচাশ নরাধমের হাতে আমাদেরকে অত্যাচারিত হতে হবে
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন