মিঞা মুজিবুর রহমান : মাদক এখন সামাজিক ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে। কেননা মাদক সমাজকে এমনভাবে গ্রাস করেছে যে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা আমাদের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। মাদক আগ্রাসন যুবসমাজকে কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে সে প্রশ্ন এখন জনমনে। মাদকের কুপ্রভাব যেভাবে বিস্তৃত হয়ে পড়ছে তাতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারা যায় না। এর ভয়াল আগ্রাসন দেশের যুবসমাজকে সর্বনাশের পথে নিয়ে যাচ্ছে। এ সর্বনাশা নেশা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের মাঝে। ইদানীং এ নেশা মধ্যবিত্ত এমনকি নি¤œবিত্ত পরিবারেও বিস্তার লাভ করেছে। নেশার জন্য ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানদের অনেকে দুর্বৃত্তপনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়। নেশার টাকা জোগাড় করতে হাইজ্যাকসহ দস্যুপনার সঙ্গেও জড়িত হচ্ছে।
ফেনসিডিল, ইয়াবা, ভায়াগ্রার জীবনবিনাশী আগ্রাসনের শিকার হয়ে দেশের যুবসমাজ নৈতিক ও শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। দেশের সীমান্তরক্ষীদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে মাদকের গডফাদাররা সীমান্তের পেশাদার, দাগী চোরাকারবারিদের মাধ্যমে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার মাদক দেশের ভেতরে নিয়ে আসছে আর আমাদের যুবসমাজ ক্রমাগতভাবে মাদকের ভয়াবহ ছোবলে ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের আইনানুগ মনিটরিংয়ের অভাবে মাদকের দেশী-বিদেশী সিন্ডিকেট সারা দেশেই অতি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
দেশ, জাতি ও সমাজের উজ্জ্বল নক্ষত্র হচ্ছে তারুণ্যের দীপ্ত শিখা। তরুণরা আগামী দিনের কর্ণধর। তবে বেকার সমস্যা, পারিবারিক সমস্যা এবং নানাবিধ সামাজিক সমস্যা এর প্রধান কারণ। আমরা যদি পরিবারের কথাই বলি তাহলে দেখা যাবে অনেক পরিবারেই বাবা-মায়ের কলহ কিংবা মনোমালিন্যের প্রভাব পড়ে সন্তানদের ওপর। স্বামী স্ত্রীর মনোমালিন্যতার কারণে অনেক সময় সংসারও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন দেখা যায় পিতা মাতা দুজন বিচ্ছিন্ন হয়ে দুই মেরুর বাসিন্দা হয়ে পড়েন। আর সন্তানরা এক্ষেত্রে অনেকটাই অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়ে। এই অভিভাবক শূন্যতা এবং পারিবারিক দুশ্চিন্তার ফলে উদীয়মান তরুণ শক্তিকে গ্রাস করে মাদক।
আবার অনেক সময় অধিকাংশ বাবা-মা খবর রাখেন না যে, তার আদরের সন্তান ঘরের বাইরে কী করে? এমনকি অনেক বাবা মা ঘরের ভেতরে সন্তান কী করে সে খবরও জানেন না। বাবা-মায়ের এই অসতর্কতার কারণেও অনেক সময় ছেলে মেয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই কমবেশি মাদক সমস্যা বিদ্যমান। বাংলাদেশেও মাদক ও মাদকাসক্তি এক জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। দেশের অধিকাংশ মাদকসেবী কিশোর-কিশোরী এবং যুবক-যুবতী। যে যুবসমাজের ওপর দেশের শিক্ষা-দীক্ষা, উন্নতি, অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল, তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ যদি মাদকাসক্তিতে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে সে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এ ভয়ঙ্কর অভিশাপ থেকে আমাদের যুবসমাজকে রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমাদের যুবসমাজের প্রাণশক্তি ও উদ্দীপনা দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য। তারুণ্যের শক্তি যেমন দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পারে, ঠিক তেমনি এর উল্টোটি দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতির কারণও হতে পারে।
তরুণ সমাজের একটি অংশ নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণের পাশাপাশি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের আপলোডের মাধ্যমে ভিনদেশী অপসংস্কৃতি অপপর্নোগ্রাফিতেও আসক্ত হয়ে পড়ছে। এর কুফলে দিনকে দিন ইভটিজিং, অপহরণ, ধর্ষণ, খুন, গুম ও অপমৃত্যুর হার বেড়ে চলেছে। নেশার ছোবলে যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় এবং সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে। দেশের যুবসমাজকে সর্বনাশা নেশার ছোবল থেকে রক্ষায় সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কী কোনো দায়-দায়িত্ব নেই? আমরা দেশের যুবসমাজকে নেশার ছোবল থেকে সুরক্ষায় দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা চাই।
ষ লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল ও চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মিডিয়া এন্ড ম্যানেজম্যন্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন