সাশ্রয়ী নৌযানগুলো বসিয়ে রাখায় বিআইডব্লিউটিসি’র লোকসান বাড়ছে
নাছিম উল আলম : বিআইডব্লিউটিসি তার অভ্যন্তরীণ নৌপথে ব্যয় সাশ্রয়ী প্যাডেল জাহাজগুলো নানা অজুহাতে বসিয়ে রেখে অধিক পরিচালন ব্যয়ের স্ক্রু-হুইল নৌযান চালিয়ে সংস্থাটির যাত্রী পরিবহন ইউনিটের লোকশানের বোঝা ক্রমশ বৃদ্ধি করছে বলে অভিযোগ উঠছে। গত দু’বছরে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সংগৃহীত ‘এমভি বাঙালী’ ও ‘এমভি মধুমতি’ নামের ব্যয় বহুল দুটি যাত্রীবাহী নৌযানের পরিচালন লোকশান হয়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকা। এসব নৌযানের পরিচালন ব্যয় পুরনো প্যাডেল জাহাজগুলোর প্রায় আড়াই গুণ। অথচ যাত্রীবান্ধব না হওয়ায় এসব নৌযানে ভ্রমণে যাত্রীদের আগ্রহও কম।
অভিযোগ রয়েছে অধিক জ্বালানি ব্যয়ের এসব নৌযান পরিচালনের নামে সংস্থাটিতে ব্যাপক লুটপাট চলছে। যার পেছনে রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটির নিম্ন পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায়ের যোগশাজস রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এব্যাপারে সংস্থার প্রধান নির্বাহী ও চেয়ারম্যানের সাথে তার সেলফোন ও ল্যান্ডফোনে যোগাযোগের বহু চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি। সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমান আগামীকাল (৩০ ডিসেম্বর) প্রাক অবসরকালীন ছুটিতে যাচ্ছেন। অথচ গত ১২ থেকে ১৯ ডিসেম্বর সংস্থাটির নির্মাণাধীন দুটি উপকূলীয় নৌযানের ইঞ্জিন পরিদর্শনের নামে বেলজিয়াম সফর করে এসেছেন। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তাসহ সংস্থার প্রধান প্রকৌশলীও তার সফরসঙ্গী ছিলেন। বিআইব্লিউটিসি’র নৌবহরে ৪টি প্যাডেল জাহাজের মধ্যে পিএস মাহসুদ, পিএস অষ্ট্রিচ ও পিএস লেপচা ১৯৯৫ সালে আধুনিকায়ন ও পুনর্বাসন শেষে চালু করা হয়। ২০০২ সালে পিএস টার্ণ নামের অপর নৌযানটিও নতুন ইঞ্জিন সংযোজন শেষে চালু করা হলেও বিগত দীর্ঘদিনেও এসব নৌযানের মূল ইঞ্জিনসমূহ ‘মেজর ওভারহলিং’ করা হয়নি। এমনকি এর প্যাডেল ও গীয়ারসমূহও কখনো পরিপূর্ণ মেরামত করা হয়নি। উপরন্তু নৌযানগুলোর যেসব যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করতে হচ্ছে তাও স্থানীয়ভাবে প্রস্তুত অতি নিম্নমানের। ফলে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের নামে বিপুল অর্থের অপচয় হলেও তার ফলাফল নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই।
এমনকি এসব প্যাডেল জাহাজগুলো রুটিন মাফিক রক্ষণাবেক্ষণও হচ্ছে না। কতৃপক্ষের অবহেলায় এসব নৌযানের নিয়মিত সার্ভে পর্যন্ত হচ্ছে না। এরপরেও দীর্ঘদিন যাবত এসব নৌযান নির্ভরতার সাথেই যাত্রী পরিবহন করেছে। তবে বর্তমানে ৪টি প্যাডেল জাহাজের দুটিই বন্ধ। এরমধ্যে পিএস মাহসুদ জাহাজটি গত ৪ জুলাই বরিশাল বন্দরের অদূরে বিপরীত দিক থেকে আসা বেসরকারী নৌযান এমভি সুরভী-৭’এর সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবার ৪ মাস পরে মেরামতে পাঠানো হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই এর মেরামত সম্পন্ন করে যাত্রী পরিবহনে দেয়ার কথা। গতকাল এব্যাপারে সংস্থার প্রধান প্রকৌশীলের সাথে আলাপ করা হলে মাহসুদ-এর মেরামত সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। সংস্থার জিএম-বাণিজ্য এনএস শাহদাত আলী বলেন, চলতি মাসের মধ্যেই নৌযানটির মেরামত সম্পন্ন হবার কথা থাকলেও কারিগরি পরিদফতর থেকে কিছু বলা হয়নি।
অপরদিকে পিএস অষ্ট্রিচ গত ৯ নভেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে। ১৮ নভেম্বর মেরামত সম্পন্ন হলেও নানা কারিগরি ত্রুটির কথা বলে তা যাত্রী পরিবহনে দেয়া হচ্ছে না। তবে একাধিক সূত্রের মতে নৌযানটিতে আপাতত কোন কারিগরি ত্রুটি না থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তা যাত্রী পরিবহনে দেয়া হচ্ছে না। তবে পিএস অষ্ট্রিচ নিয়ে আগামীকাল সংস্থার বিদায়ী চেয়ারম্যানসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নৌ ভ্রমণের কথা রয়েছে।
বর্তমানে ঢাকা থেকে চাঁদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠী ও পিরোজপুর হয়ে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত সপ্তাহে ৫ দিন ও অপর একদিন খুলনা পার্যন্ত রকেট স্টিমার পরিচালনা করছে বিআইডব্লিউটিসি। এসব রুটে ‘এমভি মধুমতি ও এমভি বাঙালী’ নামের দুটি স্বেতহস্তী সপ্তাহে দুদিন চলছে। যাতে সংস্থার লোকশান হচ্ছে গড়ে প্রায় ৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে এমভি মধুমতি খুলনা পর্যন্ত যাতায়াতেই প্রায় ৩ লাখ টাকা লোকশান হচ্ছে। পিএস টার্ণ ও পিএস লেপচা অপর ৪ দিন চলাচল করছে।
এসব ব্যাপারে গতকাল সংস্থার পরিচালক-বাণিজ্যর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, আমরা চেষ্টা করছি প্যাডেল জাহাজগুলোকে টেকশই মেরামত করে তা যাত্রী পরিবহনে দেবার। যাতে লোকশান কিছুটা হলেও হ্রাস করা সম্ভব হবে বলেও তিনি জানান। তার মতে, মেরামত শেষে পিএস মাহসুদ যাত্রী পরিবহনে ফেরার পরেই অষ্ট্রিচ’কে ডকিং করা হবে। ঢাকা-বরিশাল খুলনা রুটে প্যাডেল জাহাজ পরিচালনা করার ব্যাপরে তিনি একমত পোষণ করে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন