বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে পারা কিংবা না পারা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন সরকারের মন্ত্রীরা। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তিতে রাজনীতি না করার কোন শর্ত নেই, শর্ত ছিল বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। এর বাইরে কোন শর্ত নেই। আবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া কি দÐাদেশ থেকে মুক্তি পেয়েছেন? তিনি কি মুক্তি পেয়েছেন? যেটুকু পেয়েছেন, সেটা মানবিক কারণে। শেখ হাসিনার উদারতার জন্য পেয়েছেন। অসুস্থ মানুষকে মানবিক কারণে তার দÐাদেশ থেকে মুক্ত নয়, স্থগিত করা হয়েছে। কী জন্য? তিনি অসুস্থ। অসুস্থ না হলে তিনি কারাগারে থাকতেন। তাহলে রাজনীতি করার সুযোগ কোথায়?
অন্যদিকে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, খালেদা জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে ঘরে থাকার অনুমতি দিয়েছে তার স্বাস্থ্য বিবেচনায়। তার শারীরিক অবস্থা ও বয়স বিবেচনায় তাকে শর্তসাপেক্ষে কারাগারের বাইরে ঘেের অবস্থান করার অনুমতি দিয়েছে। সেই শর্ত অনুযায়ী তিনি রাজনীতিও করতে পারেন না।
খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে পারা নিয়ে যখন সরকারের মন্ত্রীরা দুইরকম বক্তব্য দিচ্ছেন তখন এসব বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপির কোন আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। গতকাল বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি একথা জানান। তবে এ বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, বিএনপি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। এটি নতুন কোনো জাল কি না, সেটি বুঝতে চাইছে।
মান্না বলেন, এ রকম একটা প্রস্তাব যখন আসে, তখন আমি বলব বিএনপি বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। বেগম জিয়া ইজ এ প্রোডাক্ট অব পলিটিকস। উনি পলিটিকস করবেন না, এটা তো কখনোই হতে পারে না। কিন্তু এটা বলে নতুন করে আরও কোনো জাল বিছানো হচ্ছে কি না, আমার মনে হচ্ছে বিএনপি এটা বুঝতে চাইছে এবং বোঝার এই চেষ্টাটা ঠিক আছে তাদের।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, তারপর যখন বুঝে ক্লিয়ার হবেন, তখন ওনারা তো বলবেন, আমরাও বলব জোটের নেত্রী হিসেবে উনি (খালেদা জিয়া) সামনে আসুক। ব্যাপারটি একেবারেই বিএনপির সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। তার বক্তব্যটি একান্তই নিজের জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু তাঁরা একসঙ্গে আন্দোলন করছেন এবং সুখ-দুঃখের অনেক কিছু শেয়ার করেন, সে কারণে তিনি কিছু কথা বললেন।
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়কারী ও রাষ্ট্রচিন্তার হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ওনারা (ক্ষমতাসীন) যদি বোঝেন যে ওনার (খালেদা জিয়া) রাজনীতি করার অধিকার আছে। সে অধিকার তো জেলে থাকলেও থাকে। জেলে থেকে নির্বাচনও করতে পারেন। এখানে আসলে তারা (সরকার) একধরনের ধোঁয়াশা তৈরি করার চেষ্টা করছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকেরা প্রথম প্রশ্ন করেন বিএনপির নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদকে। প্রশ্নটি ছিল এমন, সরকারি দলের একজন সংসদে বলেছেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেকা দিয়েছেন। এখন বলা হচ্ছে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন। একটি দল থেকেই বারবার এসব বলা হচ্ছে। হঠাৎ করে এ প্রসঙ্গটা কেন এল, আপনারা কী মনে করেন।
জবাবে ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, এই যে হঠাৎ করে বলা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন। এ কথা বলার আগে যেসব কথাবার্তা বলেছে ওরা, সেগুলোকে এক করেন। বুঝবেন, ওরা কী মিন (বোঝাতে) করতেছে। এটা নিয়ে আমরা খুব ইন্টারেস্টেড না। এটাকে আমরা অবান্তর মনে করি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করলে জেলে পাঠিয়ে দেব আবার। আবার তাঁরই আইনমন্ত্রী বলছেন, রাজনীতি করতে মানা নেই। আমরা কোনটা ধরব। ওরা কী বলে ওরাই জানে। বিএনপি এই বক্তব্য নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন না।
এদিকে, এই প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২৫ ফেব্রæয়ারি জেলা পর্যায়ে যুগপৎ পদযাত্রা কর্মসূচি হবে। যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা এবং পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেভাবে ছাত্রীদের নির্যাতন-অত্যাচার করা হচ্ছে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের প্রতিবাদে সারা দেশে যুগপৎ কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন