দীর্ঘ ৭ বছর পর বাংলাদেশ সফর করতে এই মুহূর্তে ঢাকায় ইংল্যান্ড জাতীয় ক্রিকেট দল। সফরে তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির সিরিজ খেলবে দুই ফরম্যাটের বর্তমান বিশ^চ্যাম্পিয়নরা। ওয়ানডে দিয়ে আর মাত্র দু’দিন পর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হবে মাঠের লড়াই। কোথায় এই সিরিজে সফলতা পেতে পথ খুঁজবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, সেখানে দুটি শব্দে ঘুরপাক খাচ্ছে টাইগার শিবির- স্বাস্থ্যকর আর অস্বাস্থ্যকর। তবে কি দলে অসুস্থ্য আর রোগাক্রান্ত ক্রিকেটারে ভরে উঠল? এমন প্রশ্ন মনে আসা খুব একটা অমূলক হবে না। আর এই প্রশ্নের উদ্রেকদাতা স্বয়ং বিসিবি প্রেসিডেন্ট না নাজমুল হাসান পাপন।
নতুন করে প্রধান কোচের দায়িত্ব নিয়ে ক’দিন আগেই বাংলাদেশে এসেছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। পুরনো কড়া এই হেড মাস্টারের কাছে বিসিবি বসের চাওয়া স্বাস্থ্যকর ড্রেসিংরুম। এই কথার পরই নতুন করে প্রশ্ন ওঠে, তবে কি বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে কোনো অস্থিরতা আছে? তার উত্তর মেলে দু’দিন আগে একটি সংবাদমাধ্যমকে দেয়া নাজমুল হাসানের এক সাক্ষাৎকারে। যেখানে তিনি প্রকাশ্যে এনেছেন অপ্রিয় এক প্রসঙ্গ- সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবালের অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব। তাতেই ওলট পালট ক্রিকেটপাড়া। যার প্রভাব পড়েছে ক্রিকেটারদের অনুশীলনেও। ওয়ানডে সিরিজের আগে অধিনায়ক তামিমের যেখানে কথা বলার কথা সিরিজের প্রস্তুতি আ পরিকল্পনা নিয়ে, সেখানে তাকে মুখ খুলতে হয়েছে সতীর্থ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিবের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আর দলের গ্রুপিং নিয়ে!
গতকাল অনুশীলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে তামিমের কাছে প্রথম প্রশ্নই এলো সাকিবের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে। পরে ঘুরেফিরে সেই প্রসঙ্গ এলো বারবার। পেশাদার জায়গায় সব কিছু ঠিক থাকলেও নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকার কথা একবারও অস্বীকার করেননি তামিম। এমনকি এই তেতো সম্পর্ক একদিন ঠিক যাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনাও দেখেন তিনি। নিজেদের মধ্যে সম্পর্কটা আসলে কোন জায়গায় এই নিয়ে সরাসরি প্রশ্নে কেবল মাঠের পেশাদার সময়টুকুর কথা বললেন তামিম, ‘আমার কাছে সবচেয় গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হলো আমি, সাকিব যখন বাংলাদেশ দলের জার্সি পরি, মাঠে যখন আমি নামি আমি আমার সেরাটা দেই, সে তার সেরাটা দেয়। আমি যখন অধিনায়কত্ব করি তখন যেকোনো পরামর্শ চাই। সে আমাকে পরামর্শ দেয়। আবার সে যখন অধিনায়কত্ব করে তখন তার কোনো পরামর্শের প্রয়োজন হলে আমি সেটার জন্য প্রস্তুত থাকি। এর বাইরে কিছু নেই। আমার কাছে মনে হয় এই জিনিসগুলো যদি ঠিক থাকে... আমি একটা সংস্করণের অধিনায়ক, যখনই আমার সহায়তার প্রয়োজন হয় সে করে। আমি আপনাকে এটা নিশ্চিত করছি সে যখন অধিনায়কত্ব করে এবং আমি টেস্ট খেলি কোনো পরামর্শের প্রয়োজন হলে আমি সবসময় আছি। এটাই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। এর বাইরে কিছু নেই।’ তবে আগামীতে ব্যক্তিগত তেতো সম্পর্ক মধুর হয়ে যাওয়া অসম্ভব দেখেন না তিনি, ‘সম্ভব সবকিছুই। এভ্রিথিং ইজ পসিবল।’
তামিম সবচাইতে বেশি বিব্রত হয়েছেন বিসিবি প্রধানের আরো একটি মন্তব্যে। ইংল্যান্ড সিরিজের ওয়ানডে স্কোয়াডে নাসুম আহমেদের বদলে তাইজুল ইসলামকে দলা রাখা হয়। দল নির্বাচনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নাজমুল জানিয়ে দেন, নাসুমের বদলে তাইজুলকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল তামিমের। তবে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভেতরের আলোচনা এভাবে বেরিয়ে আসা স্বাস্থ্যকর মনে করছেন না ওয়ানডে অধিনায়ক। ওয়ানডে দলের পারফরম্যান্স ধারাবাহিক হওয়ায় খুব বেশি জায়গা নিয়ে উঠে না প্রশ্ন। ঘরের মাঠে সিরিজ হলে সাকিবের সঙ্গে রাখা হয় বাড়তি একজন বাঁহাতি স্পিনার। ভারতের বিপক্ষে যেমন স্কোয়াডে ছিলেন নাসুম। একটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাকারে বোর্ড প্রধান সরাসরি বলেন, তামিমের চাওয়াতেই আসে এই সিদ্ধান্ত। তামিমেম মতে দল বাছাইয়ের সভায় অনেকের অনেক মতামত নিয়েই আলোচনা হয়। সেসব কথা বাইরে বেরিয়ে আসা স্বাস্থ্যকর না, ‘দল বাছাইয়ের বৈঠকে অনেক কিছুই আলোচনা হয়। বন্ধ দরজার ভেতরে অনেক কথা হয়। অনেক কিছুতে আমি একমত হই, কিংবা একমত হই না। নির্বাচকদের ক্ষেত্রেও তা-ই। অনেক মতভেদ হয়। তবে আমরা সবাই মিলে একটি দল। আমি, প্রধান কোচ, নির্বাচক... আমরা সবাই একটি দল। আমি এখানে বসে বলব না, এটা উনার কাজ বা ওটা আরেকজনের কাজ। যদি ব্যর্থ হই, তাহলে আমরাই ব্যর্থ হবো। ফলাফল পেলেও আমরা দল হিসেবেই পাবো। ওখান (বন্ধ দরজার বৈঠক) থেকে কোনো কিছু বেরিয়ে আসা খুব স্বাস্থ্যকর নয়।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন