শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খালেদা জিয়ার প্রতি আ.লীগের হঠাৎ এতো দরদ উথলে উঠল কেনো?

আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০২৩, ১২:০০ এএম

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকার নাটক করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে, তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। কিন্তু তাকে নিয়ে সরকার বিভিন্নভাবে নাটক শুরু করেছেন। তাদের মন্ত্রীরা একবার বলে যে, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না। আরেকজন বলে যে, তার রাজনীতি করতে বাধা নেই। এই কিসের মাজেজা ভাই। হঠাৎ করে আপনাদের এতো দরদ উতলে উঠলো কেনো যে, আপনারা বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার ব্যাপারে একেবারে পাগল হয়ে গেলেন? গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য একেবারেই খারাপ। তারা দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়, দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু আমাদের সামনে দৃষ্টি মাত্র একটাই। আমাদের অধিকার, ভোটের অধিকার ফেরত চাই, এই সরকারকে আর দেখতে চাই না। এই সরকারকে এই মুহুর্তেই পদত্যাগ করতে হবে এবং সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। ওই সমস্ত কথা বলে জনগণকে ভিন্ন পথে মন ভোলানো যাবে না।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যখন রাজনীতি করার সময় আসবে উনি রাজনীতি করবেন। সে কারাগারেই থাকুক, জেলে থাকুক আরে যেখানেই থাকুক তিনি অবশ্যই রাজনীতি করবেন। কারণ তিনি এদেশের জনগণের সবচাইতে জনপ্রিয় নেত্রী এবং গণতন্ত্রের মাতা। সুতরাং আপনাদের (সরকার) এই নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন নেই। তার সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন, দল নেবে। আপনাদের আগ বাড়িয়ে এসব বলার দরকার নেই। আর এতো যদি চান তাহলে খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিন। তাকে দিয়েছেন ছয় মাসের সাজা স্থগিত। আর বলছেন যে তিনি সব কিছু করতে পারবেন। এই সমস্ত কথা বলে মানুষকে বোকা বানিয়ে কোনো লাভ হবে না।

সরকারকে জনগণের অসুখের দিকে তাঁকানোর আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনগণের যে অসুখ সেটার দিকে তাঁকান। জনগণের অসুখ একটাই যে, তারা ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে না। জনগণের পার্লামেন্ট নেই। তারা কথা বলতে পারে না। সেজন্য আমাদের সবচেয়ে বড় দাবি এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে, যার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে এবং সকলের অংশগ্রহণে নতুন নির্বাচন হবে, নতুন সরকার গঠন হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে নেই বলে সরকার যে বক্তব্য রাখছে তার জবাব দিতে গিয়ে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, তোমরা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলে তখন কি সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিলো? ছিলো না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন দেখেছেন যে, জনগণ এটা চায়, এটা করলে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে, তখন তিনি পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশন বসিয়ে নতুন সংসদে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করে সংবিধান সংযোগ করেছিলেন। তারপরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছিলো বিএনপি সেদিন বিরোধী দলে গিয়েছিলো ১১৬টা আসন নিয়ে। কোথায় সেদিন বিএনপি তো এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার না মেনে অন্য কোনো কাজ করেনি। নির্বাচন তো তার মতো করতে চায়নি।

ভোট চুরির রেকর্ড আওয়ামী লীগের উল্লেখ করে তিনি বলেন, কথায় কথায় আওয়ামী লীগ বলে বিএনপি নাকী ভোট করেছে। আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, বিএনপি কোনোদিন ভোট চুরি করেনি। ভোট চুরি করেছেন আপনারা (আওয়ামী লীগ)। আজকে শুধু নয়, ১৯৭৩ সালে ভোট চুরি করেছেন। পরবর্তিকালেও ভোট চুরি করেছেন। গত দুইটা সংসদ নির্বাচনেও ভোট চুরি করে, কারচুরি করে, ভয় দেখিয়ে, মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাচন করেছেন। আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত একটা দেশের রাজনৈতিক দলের ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেন।

আওয়ামী লীগই আইসিইউতে আছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন করতে চায়। কি নির্বাচন? আবার বলে যে, বিএনপি নাকী আইসিইউতে যাবে। বিএনপি আইসিইউতে যাবে না। আপনারা (আ.লীগ) ইতোমধ্যে আইসিইউতে চলে গেছে। দেউলিয়া হয়ে গেছেন রাজনৈতিকভাবে। তা না হলে নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন দিতে এতো ভয় কেনো? ভয় একটাই আপনারা জানেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচন হলে আপনাদের জামানত থাকবে না, ২০ আসনও পাবেন না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা অহিংস, সুশঙ্খলভাবে আন্দোলন করছি। ওরা বার বার অগ্নি-সন্ত্রাসের কথা বলে। এটা বলে লাভ নেই। অগ্নি-সন্ত্রাস ক্ষমতাসীনরাই করে জনগণ তা জানে। উদোঁর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে আর চাপানো যাবে না। জনগণ সব জেনে গেছে। তাই আসুন আন্দোলনকে আরো তীব্র করে তুলি, বেগবান করে তুলি এবং জনগনের শক্তি দিয়ে উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি করে এদেরকে আমরা পরাজিত করি। আপনারা মনোবল দৃঢ় রাখুন, আন্দোলনে আরো সক্রিয় হউন।

সরকারের সমর্থিত বাম নেতাদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে গণতন্ত্র আছে কিনা- এই কথা তারা বলেন না কেনো? তারা কেনো এই কথা বলেন না আজকে জনগণ ভোট দিতে পারে না? এই সরকার দুর্নীতিগ্রস্থ সরকার, তারা দুর্নীতি করে মানুষের সমস্ত অধিকারগুলো কেড়ে নিচ্ছে-একথাগুলো তারা মুখ দিয়ে কেনো বলেন না। একসময় তারা বড় বড় বিপ্লবী কথা বলতেন। এখনো সুযোগ পেলেই আমাদেরকে তারা বিভিন্নভাবে দোষারোপ করতে থাকেন। কিন্তু তারা তাদের যে দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব পালন করেন না।

তাঁতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব হাজী মজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ, এবিএম মোশাররফ হোসেন, জিএম সিরাজ, উলামা দলের শাহ নেছারুল হক, নজরুল ইসলাম তালুকদার, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনিসহ তাঁতী দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
আমান ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৫:৩২ এএম says : 0
আমার মনে হয় বিদেশিদের চাপে সরকার এখন খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিভিন্ন কথাবার্তা বলছে
Total Reply(0)
আলি ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৫:৩৪ এএম says : 0
যাই হোক সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ছাড়া দেশ ও বিদেশে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও টিকবে না।
Total Reply(0)
মিরাজ ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৫:৪৫ এএম says : 0
আ.লীগের লোকেরা চাচ্ছে আগের মতো একটা নির্বাচন করতে যার জন্য তারা এখন খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিভিন্ন কথাবার্তা বলছে
Total Reply(0)
মিমমরাজ ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৫:৩৯ এএম says : 0
এ দেশে হাজার হাজার টাকা দুর্নীতি করে বিদেশে পারি দিচ্ছে কিছু লোক। অথচ তাদের কিছু হচ্ছে না। আর ঠুমকো অভিযোগে বেগম জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এ সাজা রাজনৈতিক কারণে যে হয়েছে তা সাধারণ জনগণ বুঝে। কাজেই এ সাজা বাতিল না করলে আ.লীগের জনমত যতটুকু ছিল এখন শূন্যের কোটায় পৌছাবে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন