বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তাঙ্গন

ওষুধ সেবনে সতর্কতা

প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইফতেখার আহমেদ টিপু : উদ্বেগজনক খবর হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৪ সালে সেখানে মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ সেবন করে মৃত্যু হয়েছে ৪৭ হাজারের বেশি মানুষের। এই হার ২০১৩ সালের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি। এই সমস্যা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নয়, বাংলাদেশেও অসংখ্য মানুষকে জীবন দিতে হয় মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ সেবনের জন্য।
পরিসংখ্যান মতে, ঘুমের ওষুধ অথবা অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে এত বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে এমনটি নয়। ৬১ শতাংশ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যথানাশক ওষুধ। যুক্তরাষ্ট্রে এফডিএ বা ফেডারেল ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন যাবতীয় খাদ্যপণ্য এবং ওষুধ বিক্রির ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে থাকে। সেখানে রেজিস্টার্ড ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া যে কোন ওষুধ বিক্রি বা হস্তান্তর কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এরপরও এত বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যু উদ্বেগজনক বৈকি। দীর্ঘদিন ধরে যথাযথ প্রতিরোধ-ব্যবস্থা বা প্রতিকার না নিয়ে যে কোন ব্যথানাশক ওষুধ সেবন বিপজ্জনক।
অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী বেদনানাশক ওষুধ জোগাড় করতে না পেরে মানুষ বাধ্য হয়ে ঝুঁকে পড়ে প্যাথেড্রিন, হেরোইনের মতো মাদকে। এর ফলেও অনিবার্যভাবে বেড়েছে মৃত্যুঝুঁকি।
যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বিবেচনা করা যেতে পারে আমাদের দেশের পরিস্থিতি। বাংলাদেশে ওষুধ বিক্রি ও বিপণনের ক্ষেত্রে কোন আইন-কানুন বা নিয়ম-নীতির বালাই নেই। সত্য বটে, গত ক’বছরে ওষুধ শিল্প খাতে প্রভ‚ত উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। তাই দেশের চাহিদার প্রায় ৯৭ শতাংশ ওষুধ উৎপাদিত হয় দেশে। অনেক দেশে ওষুধ রফতানিও হয়ে থাকে। তবে ওষুধের অভ্যন্তরীণ বাজার একেবারেই লাগামছাড়া ও নিয়ন্ত্রণহীন। সারাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জ ও ইউনিয়নের কথা বাদ দিলেও খোদ রাজধানীতেই পাওয়া যাবে অগণিত ওষুধের দোকান। যেগুলোর অধিকাংশই বেআইনি বা অবৈধ। মুদি দোকান অথবা হাটবাজারে, ফুটপাথে ফেরি করে ওষুধ বিক্রির নজিরও আছে।
অন্যদিকে, বেশ কিছু ওষুধ কোম্পানি আছে যেগুলো মানহীন, ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বিপণন করে থাকে। তদুপরি রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ব্যতিরেকে ওষুধ বিক্রি না করার নিয়ম থাকলেও প্রায় কেউই তা মানে না বললেই চলে। হাত বাড়ালেই যে কোন ওষুধ যে কোন দোকানে যথেচ্ছ পরিমাণ পাওয়া যায় কোন প্রেসক্রিপশন ছাড়াই। আর এতে শুধু ব্যথানাশক নয়, বরং ঘুমের ওষুধ থেকে শুরু করে অ্যান্টিবায়োটিক যা চাওয়া যায়, তাই মেলে। অতিরিক্ত ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের কুফল আমেরিকার অভিজ্ঞতা থেকে জানতে পারি সহজেই।
চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ সেবন করলে ভিটামিন বি১২-এর অভাবজনিত সমস্যা হতে পারে। এসব স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে থাকে রক্তশূন্যতা, স্নায়ুর সমস্যা এবং স্মৃতিভোলা সমস্যা বা ডিমেনশিয়া ইত্যাদি। আর যেসব এন্টাসিড জাতীয় ওষুধে এ ধরনের সমস্যা হয় তš§ধ্যে রয়েছে প্রটন-পাম্প-ইনহিবিটসর অথবা পিপিআই এবং হিস্টামিন-২ রিসিপ্টর এন্টাগনিস্ট (প্রিভাসিড, প্রিলোসেক, নেক্সাম)।
গবেষকগণ বলছেন, পিপিআই (এন্টাসিড) সেবনে ভিটামিন বি১২ অভাব স্বাভাবিকের চেয়ে শতকরা ৬৫ ভাগ বেশি হয়। এই নতুন গবেষণা রিপোর্টের আলোকে বিশেষজ্ঞগণ রোগীদের দীর্ঘ মেয়াদী এন্টাসিডের ব্যবস্থাপত্র দিতে সতর্ক হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত দীর্ঘ দিন ধরে এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ সেবন করা উচিত নয় বলেও অভিমত দিয়েছেন গবেষকগণ। যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ি দুর্ঘটনা বা গোলাগুলিতে বছরে যে পরিমাণে মানুষ মারা যায়, তার চেয়ে হেরোইন ও অতিরিক্ত ওষুধ সেবনে বেশি সংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছে। সেখানে ২০১৩ সালে অতিরিক্ত পরিমাণ ওষুধ সেবনের ফলে মারা যায় ৪৬ হাজার ৪৭১ জন মানুষ। একই বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় ৩৫ হাজার ৩৬৯ জন মানুষ। গত এক দশকে অতিরিক্ত ওষুধে মারা যাওয়ার হার বেড়েছে ৫০ শতাংশ।
পরিশেষে বলছি, মানুষের জীবন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অবহেলায় জীবন নষ্ট করা ঠিক নয়। জীবন একটাই সেটা শেষ হয়ে গেলে কিছুই আর করার থাকে না। তাই প্রয়োজন মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ সেবন বর্জন করা। প্রতিটি মানুষ তার দেশের জন্য সম্পদ। হেলায় খেলায় নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে দেশের ক্ষতি করা কোন জ্ঞানী মানুষের জন্য করণীয় হতে পারে না।
ষ লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক নবরাজ

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন