তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে আসছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েপ এরদোগান। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল কাহরামানমারাস প্রদেশ সফর করেছেন তিনি। ডেইলি সাবাহ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর থেকে এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রদেশটি পরিদর্শন করলেন তুর্কি নেতা। এদিন তার সঙ্গে ছিলেন ন্যাশনাল মুভমেন্ট পার্টির (এমএইচপি) নেতা দেভলেত বাহচেলি এবং গ্রেট ইউনিয়ন পার্টির (বিবিপি) নেতা মুস্তাফা দেস্তিসি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সফরের শুরুতেই কাহরামানমারাস প্রদেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা এলবিস্তান জেলা পরিদর্শন করেন তিনি। এ সময় স্থানীয়দের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বাস না করার পরামর্শ দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, কাহরামানমারাস প্রদেশের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে ২০ হাজার ৩০০ জনের বেশি ভিকটিমকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ৪ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ জন্য আমরা ৭৭ হাজার তাঁবু এবং ২৪ হাজার হাউজিং ইউনিটের ব্যবস্থা করেছি। তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কাহরামানমারাস প্রদেশে সব মিলিয়ে ৩ লাখ ৯ হাজার বসতি স্থাপন করা হবে। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে ৮৩ হাজার এবং গ্রামাঞ্চলে ১৮ হাজার বসতি নির্মাণ করা হবে। ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়াদের উদ্দেশে এরদোগান বলেন, ‘আমি চাই, আপনারা মাত্র একটা বছর অপেক্ষা করুন। আমরা তো মৃতদের ফেরাতে পারব না। তবে আমাদের যে ক্ষত (ক্ষতি) তৈরি হয়েছে, তা সারানোর মতো যথেষ্ট সামর্থ্য আমাদের আছে।’ আল জাজিরার অপর এক খবরে বলা হয়, শস্য রপ্তানি চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘ ও তুরস্ককে অনুরোধ করেছে ইউক্রেন। ইউক্রেন সরকারের এ আহ্বানে তারা এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে কিয়েভ। ইউক্রেনের পুনরুদ্ধারবিষয়ক উপমন্ত্রী ইউরি ভাসকভ গত সপ্তাহে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বন্দরগুলোতে পণ্য রপ্তানির বর্তমান যে চুক্তি আছে, সেটি শেষ হলে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানাবে কিয়েভ। ইতোমধ্যে আমরা একটি অনুরোধের চিঠি পাঠিয়েছি। তিনি আরও বলেন, যেহেতু ১৮ মার্চ মেয়াদ শেষ হবে। তাই দ্রুত আলোচনায় বসার জন্য আমরা আবেদন জানিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জাতিসংঘ ও তুরস্কের নিকট থেকে জানানো হয়নি। এদিকে গত জুলাইয়ে জাতিসংঘ এবং তুরস্কের মধ্যস্থতায় ইউক্রেনের তিনটি বন্দর থেকে শস্য রপ্তানির বিষয় একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ১৮ মার্চ। এর আগে, রাজ্যগুলোতে নতুন করে ৩ লাখ ৯ হাজার বাড়ি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান। এর মধ্যে আদিয়ামান রাজ্যে নির্মিত হবে প্রায় ৫০ হাজার নতুন বাড়ি। এক সংবাদ সম্মেলনে এরদোগান বলেন, ইতোমধ্যে মাটি জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। নির্মাণ শুরু করার জন্য প্রস্তুতি চলছে। এরদোগান প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ভবিষ্যৎ দুর্যোগের জন্য শহরগুলোকে প্রস্তুত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে তার সরকার। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশগুলোর মধ্যে অন্যতম আদিয়ামান সফরে গিয়ে এ প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এ সময় তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ফল্ট লাইনের কাছাকাছি এলাকায় কিংবা ভূমিকম্পের সময় মাটি তরল হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে— এমন এলাকায় ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হবে না। সেই সঙ্গে পুরনো বসতিগুলোতে বহুতল ভবন (হাইরাইজ বিল্ডিং) নির্মাণের চিন্তাও প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। ভূমিকম্প বিধ্বস্ত শহরগুলোর কাঠামোগত পরিবর্তন উপেক্ষা করতে পারি না উল্লেখ করে তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের হাজার হাজার বছরের সভ্যতার ইতিহাস রয়েছে। যেখানে আমরা ভ্রাতৃত্বের সঙ্গে বসবাস করছি। স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এরদোগান বলেন, আপনার শহরকে রক্ষা করুন। কখনই আপনার মাতৃভূমিকে স্থায়ীভাবে পরিত্যাগ করবেন না। যাদের বাড়িঘর ধসে পড়েছে, তাদের জন্য আমরা আরও ভালো, আরও সুন্দর, নিরাপদ ও নতুন বাড়ি সরবরাহ করব। এ সময় ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি এক বছরের মধ্যে মেরামত করার প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি করে তুর্কি নেতা বলেন, গ্রাম ও শহরে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। ডেইলি সাবাহ, আল-জাজিরা, রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন