শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

পয়া সাগরিকায় মানরক্ষা

সাকিবের ম্যাচে হোয়াইটওয়াশ এড়াল বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ মার্চ, ২০২৩, ১২:০০ এএম

দেশের মাটিতে সবশেষ ২০১৪ সালের ফেব্রæয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের সবকটি ওয়ানডে হেরেছিল বাংলাদেশ। এরপর এবারেরটাসহ ১৬ সিরিজের তিনটিতে হারলেও কোনোবার হোয়াইটওয়াশড হননি তামিম ইকবাল-সাকিব আল হাসানরা। এই ধারা অক্ষুন্ন রাখতে গতকাল জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে জয়ের কোনো বিকল্প ছিলনা তাদের সামনে। এই পয়া ভেন্যু সাগরিকাও মুখ ফেরায়নি বাংলাদেশের থেকে। তৃতীয় ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডকে ৫০ রানে হারিয়েছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের দল। গতকাল চট্টগ্রামে আগে ব্যাট করে তিন ফিফটিতে ২৪৬ রানের পুঁজি পেয়েছিল স্বাগতিকরা। ওই রান তাড়ায় ভালো শুরু পেয়েও সাকিবের ছোবলে পথ হারিয়ে ১৯৬ রানে আটকে যায় ইংল্যান্ড। ব্যাট হাতে ৭১ বলে ৭৫ ও বল হাতে ৩৫ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন সাকিব।
দ্বিপাক্ষিক সিরিজের ম্যাচগুলি যেন একঘেয়ে না হয়, দর্শকদের জন্য প্রতি ম্যাচেই থাকে উপভোগের উপকরণ, সেজন্য বিশ্বকাপ সুপার লিগের প্রবর্তন করেছে আইসিসি। তবু বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড সিরিজের শেষ ম্যাচটিকে ‘উপভোগ্য’ রাখা যায়নি। কারণ এই সিরিজ শুরুর আগেই দুই দলের বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত হয়ে গেছে। শেষ ওয়ানডেটি তাই আক্ষরিক অর্থেই ছিল ‘মরা’ ম্যাচ, নিয়মরক্ষার। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচই ইংল্যান্ড জেতায় সাগরিকার শেষ ম্যাচ নিয়ে তেমন আগ্রহ ছিল না। গ্যালারি ছিল ফাঁকা। চট্টগ্রাম নগরেও খেলা নিয়ে ছিল না কোনো উন্মাদনা। আর এমন দিনেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে দিল বাংলাদেশ! সাকিবের হাত ধরে আসা এই জয়ে হোয়াইটওয়াশ লজ্জাও এড়াল বাংলাদেশ। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষেও সেটি ধরে রাখলো। ২০১৬ সালে সবশেষ দেখাতেও একই ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ।
এদিন টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের হয়ে এ দিন সাকিব ছাড়াও ফিফটির দেখা পান নাজমুল হোসেন শান্ত (৭১ বলে ৫৩) ও মুশফিকুর রহিম (৯৩ বলে ৭০)। তার পরও দলের রান ছুঁতে পারেনি আড়াইশ। সিরিজে টানা তৃতীয়বার টস জেতেন তামিম ইকবাল। ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মোটেও হয়নি বাংলাদেশের। আগের ম্যাচের মতোই টপ অর্ডার নাড়িয়ে দেন স্যাম কারান। প্রথম ওভারেই কারানের বলে বাজে শটে আউট হন লিটন দাস। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবার তিনি টানা দুই ম্যাচে ফিরলেন শ‚ন্য রানে। ভুলে যাওয়ার মতো সিরিজে তিন ম্যাচে ¯্রফে ৭ রান করতে পারলেন এই ওপেনার। দ্বিতীয়বারের মতো কোনো সিরিজে ১০ রানও করতে পারলেন না তিনি। ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে তিন ওয়ানডে তার সংগ্রহ ছিল ¯্রফে ৩ রান।
কারানের দ্বিতীয় ওভারে প্রথম তিন বলে ১৩ রান পায় বাংলাদেশ। তবে ওই ওভারেই দ্বিতীয় শিকারের দেখা পান তিনি। অন সাইডে খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে তামিম ইকবাল (৬ বলে ১১) ধরা পড়েন পয়েন্টে। তিন ওভারে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে যাওয়া দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেন মুশফিক ও শান্ত। তৃতীয় উইকেটে দুজন মিলে যোগ করেন ৯৮ রান। এই জুটির শুরুটাও খুব একটা স্বস্তির ছিল না। তবে সময়ের সঙ্গে মানিয়ে নেন দুজন। ধীরে ধীরে এগিয়ে নিতে থাকেন দলকে। প্রথম ওয়ানডের মতো শেষটিতেও ফিফটি করেন শান্ত। মাইলফলকে পৌঁছতে খেলেন ৬৯ বল, মারেন ৫টি চার। মুশফিকও পৌঁছে যান পঞ্চাশের দোরগোড়ায়।
জমাট জুটিতে যখন রানের গতি বাড়ানোর পালা, তখনই ভুল বোঝাবুঝিতে বিদায় শান্তর। আদিল রশিদের বলে তিনি সুইপ করতেই দৌড় শুরু করেন মুশফিক। সেটি যেন দেখতেই পাননি শান্ত। মুশফিককে দেখে যখন দৌড় শুরু করেন তিনি, ততক্ষণে দেরি হয়ে যায়। ডাইভ দিয়ে নন স্ট্রাইক প্রান্তে ক্রিজে ঢোকার আগেই বাটলারের থ্রো ধরে স্টাম্প ভেঙে দেন রেহান আহমেদ। ৭১ বলে ৫৩ রানে ফেরেন শান্ত। ওই ওভারেই ক্যারিয়ারের ৫১তম ফিফটি প‚রণ করেন মুশফিক। পঞ্চাশ ছুঁতে তিনিও খেলেন ৬৯ বল। ইনিংসটি দারুণ জরুরি ছিল তার নিজের জন্য। আগের ৭ ওয়ানডে ইনিংসে তিনি ২৫ ছাড়াতেও পারেননি।
শান্ত ফিরে যাওয়ার পর জমে ওঠে সাকিব ও মুশফিকের জুটি। কিন্তু দলীয় দেড়শ পেরোতেই মুশফিককে ফেরান রশিদ। ইংলিশ লেগ স্পিনারের গুগলিতে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটের নিচ দিয়ে বোল্ড হন কিপার-ব্যাটসম্যান। মুশফিকের সম্ভাবনাময় ইনিংসটি থামে ৭০ রানে। সাত ইনিংস পাওয়া ফিফটিতে ৯৩ বল খেলে ৬টি চার মারেন তিনি। এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মাহমুদউল্লাহও। আদিল রশিদকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কার পর এ লেগ স্পিনারের সøাইডারে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান বোল্ড হন ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে।
৩৫ ওভারের মধ্যে পাঁচ ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর ইনিংসের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নেন সাকিব। আফিফ হোসেনের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে যোগ করেন ৪৯ রান। যেখানে আফিফের অবদান ¯্রফে ১৫ রান। কারানের ৩৮তম ওভারে জোড়া চার মারেন সাকিব। প্রথম বলে রানের খাতা খোলার পর টানা ৯ বল ডট খেলেন আফিফ। এরপর রেহানের বলে প্রথম বাউন্ডারির দেখা পান তিনি। তরুণ লেগ স্পিনারকেই মারেন নিজের দ্বিতীয় চার। ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েও পারেননি আফিফ (২৪ বরে ১৫)। মেহেদী হাসান মিরাজও থামেন অল্পে। তাকে ফিরিয়ে প্রথম ওয়ানডে উইকেটের স্বাদ পান ইংল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে অভিষিক্ত লেগ স্পিনার রেহান আহমেদ।
মিরাজ আউট হওয়ার আগেই টানা দ্বিতীয় ফিফটিতে পা রাখেন সাকিব ৫৫ বলে। সেখানেই না থেমে দলকে আড়াইশর কাছে এগিয়ে নেওয়ার কৃতিত্ব তারই। ৭১ বলে ৭ চারে ৭৫ করে শেষের আগের ওভারে তিনি থামেন লং অনে জেসন রয়ের অসাধারণ ক্যাচে। সাকিবকে আউট করার পরে বলে মুস্তাফিজুর রহমানকেও ফিরিয়ে বাংলাদেশকে গুটিয়ে দেন আর্চার।
রান তাড়ায় দারুণ শুরু করেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার জেসন রয় ও ফিল সল্ট। নবম ওভারেই চলে আসে দলীয় ৫০ রান। আগের দুই ম্যাচে রান না পাওয়া সল্ট এই ম্যাচে ইতিবাচক শুরু করেন। তবে তাকে বেশি দ‚র যেতে দেননি সাকিব। নবম ওভারের শেষ বলটি খানিক টেনে করেছিলেন বাঁহাতি স্পিনার। শরীরের বেশ দ‚র থেকে কাট করতে গিয়ে কভারে মাহমুদউল্লাহর হাতে সহজ ক্যাচ দেন সল্ট। ৭ চারে ২৫ বলে ৩৫ রান করেন বাঁহাতি ওপেনার। পরের ওভারে ফর্মে থাকা দাভিদ মালানকে ফেরান তাসকিন আহমেদের জায়গায় একাদশে ফেরা ইবাদত হোসেন। এবার মিড-অনে অনায়াসে ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ।
ইংল্যান্ডকে আরও চেপে ধরেন সাকিব। একাদশ ওভারের প্রথম বলে তার জোরের ওপর করা আন্ডার কাটারে ব্যাট লাগাতে পারেননি রয়। বোল্ড হয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরার আগে করেন ৩৩ বলে ১৯ রান। ¯্রফে ৮ বলের মধ্যে ২ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় সফরকারীরা। তখন বাটলারের আগে পাঁচ নম্বরে নামেন স্যাম কারান। জেমস ভিন্সের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন তিনি। বাংলাদেশের আঁটসাঁট বোলিংয়ে সেভাবে হাত খুলে খেলতে পারেননি ভিন্স ও কারান। তারা দুজন মিলে ৪৯ রান যোগ করতে নেন ৮১ বল। বিপজ্জনক হওয়ার আগেই এই জুটি ভাঙেন মিরাজ। অফ স্টাম্পের বাইরের বল পিচ করার পর টার্নের সঙ্গে কিছুটা গতি হারায়। যে কারণে টাইমিংয়ে গড়বড় হয় কারানের। লং অফে ক্যাচ নেন লিটন। ১টি করে চার-ছয়ে ২৩ রান করতে ৪৯ বল খেলেন কারান।
ভিন্সকে বেশি দ‚র যেতে দেননি সাকিব। মিডল স্টাম্পে পিচ করা ডেলিভারি টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়ার পথে ছুঁয়ে যায় ভিন্সের ব্যাটের বাইরের কানা। দুইবারের চেষ্টায় সেটি গøাভসবন্দী করে ৩৮ রান করা ব্যাটসম্যানকে ড্রেসিং রুমের ঠিকানা দেখান মুশফিক। পরের ওভারে দারুণ এক ইয়র্কারে মইন আলিকে বোল্ড করেন ইবাদত। ১৩০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে গভীর খাঁদে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। তখনও তাদের আশা বাঁচিয়ে রেখে উইকেটে ছিলেন অধিনায়ক বাটলার। ওকসের সঙ্গে মিলে দলকে জয়ের কক্ষে রাখার চেষ্টা করেন কিপার-ব্যাটসম্যান। কিন্তু তাইজুল ইসলামের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডবিøউ হলে অনেকটাই ¤øান হয়ে যায় ইংলিশদের জয়ের আশা।
শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে খানিক চেষ্টা করেন ওকস। তবে তার ৪৬ বলে ৩৪ রানের ইনিংস ¯্রফে পরাজয়ের ব্যবধানই কমাতে পারে। ৪১তম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের দারুণ ক্যাচে রেহানকে ফেরান সাকিব। একইসঙ্গে ছুঁয়ে ফেলেন ৩০০ উইকেটের মাইলফলক। পঞ্চম উইকেটও পেতে পারতেন তিনি। তার কোটার শেষ ওভারে আর্চারের বিপক্ষে এলবিডবিøউয়ের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে নিজের উইকেট বাঁচান ইংলিশ পেসার। তবে পরের ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের হাতে ফিরতি ক্যাচ দেন ওকস। নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের ৫০ রানের জয়। চলতি সিরিজে এটিই ছিল মুস্তাফিজের প্রথম উইকেট।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন