সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : এক সময়ের মানুষ চালিত খোড়া প্রযুক্তির জিনরিকিশা এখন ব্যাটারিচালিত ভয়ংকর বাহনে পরিণত হয়েছে। প্রযুক্তিগত কোন পরিবর্তন ঘটেনি। শুধু মাত্র ব্যাটারি ও মোটর সংযোজন করে এই খোড়া প্রযুক্তির যানবাহনকে দ্রæতযানে পরিবর্তন করা হয়েছে। উদ্ভাবিত হবার প্রায় দেড়শ’ বছর পর এই খোড়া প্রযুক্তির বাহনটি মানুষের জন্য এখন এক সাক্ষাৎ যমদূতে পরিণত হয়েছে। যখন তখন, যেখানে সেখানে উল্টে পড়ছে। নিয়ন্ত্রণহীন গতিতে চলতে গিয়ে লেংড়া ঘোড়ার মতো যখন তখন কাঁৎ হয়ে যাচ্ছে। রাস্তা থেকে পড়ে যাচ্ছে গর্তে। কিংবা ঢুকে যাচ্ছে দোকানের ভিতর। আচমকা রাস্তার পাশের মানুষদের ভিড়ে ঢুকে যাচ্ছে অনায়াসে। এই ভয়ংকর ব্যাটারি চালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কোনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না।
রিকশা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অত্যাবশ্যকীয় বাহন। এই রিকশার আদি নাম ছিল জিনরিকিশা। যার অর্থ দাঁড়ায় মানুষের টানা গাড়ী। ১৮৭০ সালে জাপানীরা দুই চাকার বাহনটি তৈরি করে এর নাম দেয় জিনরিকিশা। মানুষ এই দু’চাকার গাড়ীতে আরোহী উঠিয়ে টেনে টেনে গন্তব্যে নিয়ে যেত। পরে জাপানীরা এর লেজ কেটে দিয়ে নামকরণ করে জিনরিকি। পরে ইংরেজরা এ শব্দের মাথা কেটে ও ভাওয়েল’র ভুল ব্যবহার করে বাহনটির নামকরন করে রিকশা। সেই থেকেই জিনরিকিশা হয়ে যায় রিকশা। ১৯৩১ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে এদেশে প্রথম রিকশা ও সাইকেল নামে ত্রিচক্রযান ও দ্বিচক্রযান চালু হয়। সহজ বাহন হিসেবে এদেশের মানুষ বাহন দুটিকে লুফে নেয়। দীর্ঘ ৮৪ বছরের ইতিহাসে এই রিকশাই এখন সারা দেশ দখল করে নিয়েছে। ঢাকা শহরসহ সারা দেশে বিকশার ব্যাপকাধিক্য দেখা দিয়েছে। ঘর থেকে বেরিয়ে যে বাহনটি প্রথম চোখে পড়ে সেটি হচ্ছে রিকশা। একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে রিকশা চালকরা যাত্রীদের কাছে থেকে যখন তখন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে থাকে। চলতি দশকের গোড়ার দিকে বিদেশ আমদানী করা হয় ইজিবাইক নামে ব্যাটারিচালিত ত্রিচক্রযান।
এই ইজিবাইক আমদানী হবার পর রিকশার বাজার খারাপ হয়ে যায়। যাত্রীরা ইজিবাইককে লুফে নেয়। ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক দিয়ে খুব অল্প ভাড়ায় মানুষ যাতায়াত শুরু করে। কয়েক বছরে ইজিবাইকের সংখ্যা রিকশার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে যায়। রাস্তার মোড়গুলোতে রিকশা চালকরা রিকশা নিয়ে যাত্রী হাঁকে। আর যাত্রীরা অপেক্ষমাণ ইজিবাইকে উঠে গন্তব্যে চলে যায়। কয়েকবছর এ অবস্থা চলার পর গত বছর থেকে রিকশার মালিকরা নতুন পথ বেছে নেয়। তারা রিকশায়ও ব্যাটারি লাগাতে শুরু করে। এখন নরসিংদীতে শতকরা ১০টি রিকশাও ব্যাটারিবিহীন প্যাডেল চালিত নেই। এরই মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশার দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়ে চলেছে দিনের পর দিন। একেতো খোড়া প্রযুক্তির বাহন, এর উপর ব্যাটারি সংযোজনে এটি একটি ভয়ংকর বাহনে পরিণত হয়েছে। প্যাডেল চালিত রিকশায় যে ব্রেক লাগানো হয় তা প্যাডেলের স্পীডই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। গতি উঠে গেলে আস্তে আস্তে ব্রেক কষে কষে রিকশা থামাতে হয়। এখন ব্যাটারি সংযোজনের পর সব রিকশাই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। ব্যাটারি চালিত রিকশাগুলো স্পীড উঠার পর কোথায়, কার উপর গিয়ে যে উঠে তা স্বয়ং চালকও বলতে পারে না। এসব রিকশা মোড় ঘুরতে গিয়ে উল্টে পড়ছে। ভেঙে যাচ্ছে মানুষের হাত-পা। থ্যাবরা হচ্ছে নাক। পড়ে যাচ্ছে মুখের দাঁত। ফেটে যাচ্ছে মাথা। অনেক মানুষ কোমড় ভেঙে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে সারা জীবনের তরে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন