শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্য জরুরি প্রেসিডেন্ট

| প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্য প্রতিষ্ঠার উপর জোর দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ।
নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থকের মধ্যে গতকাল শনিবার বঙ্গভবনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সঙ্গে আলোচনায় এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন তিনি। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের মধ্যে আ স ম আবদুর রব নেতৃত্বাধীন দলটির সঙ্গে আলোচনা করেন আবদুল হামিদ।
প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, জেএসডির প্রতিনিধি দলকে বঙ্গভবনে স্বাগত জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্যও জরুরি।
সংলাপে জেএসডির ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি ইসি গঠনে তিন দফা প্রস্তাব প্রেসিডেন্টকে দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কমিশন গঠনে আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং প্রস্তাবনা দেয়ার জন্য জেএসডিকে ধন্যবাদ জানান, বলেন প্রেস সচিব।
প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রেসিডেন্টের আলোচনার অবসানে ইসি গঠনে স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেছে জেএসডি।
জেএসডি প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছে, গণতন্ত্রের জন্য সংলাপ এবং অবাধ রাজনৈতিক অধিকার ও জনগণের সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন অপরিহার্য।
দলটির পক্ষ থেকে ৩ দফা প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়েছে পার্লামেন্টের ‘উচ্চকক্ষ’ গঠন করে সেখান থেকে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিধান করা; ‘উচ্চকক্ষ’সহ পার্লামেন্ট হবে ‘দ্বি-কক্ষ’বিশিষ্ট। অঞ্চলভিত্তিক প্রতিনিধি নিয়ে পার্লামেন্টের ‘নি¤œকক্ষ’ হবে ৩০০ সদস্যবিশিষ্ট। ২০০ সদস্যবিশিষ্ট ‘উচ্চকক্ষে’ থাকবেন ‘অদলীয়’ভাবে নির্বাচিত বিভিন্ন শ্রম-কর্ম-পেশার প্রতিনিধি।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে রয়েছে গণতন্ত্রের জন্য-এর ভিতকে সম্প্রসারিত, সুদৃঢ় ও শক্তিশালী করা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বেকারত্বের অবসান অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে প্রস্তাবে বলা হয়, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, গণতন্ত্রকে তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত করা ও শিল্পাঞ্চলসমূহের জন্য রাজনৈতিক-প্রশাসনিক ইউনিট হিসেবে প্রাদেশিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা; জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিষদের প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি ও নির্বাচন সঠিকভাবে অনুষ্ঠান করা। তৃতীয় প্রস্তাবে বলা হয়েছে কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য বাংলাদেশ, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, চীনের কুনমিং, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল নিয়ে ‘উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা, কানেক্টিভিটি ও পরিবহন অর্থনীতি জোরদার করার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
অগ্রযাত্রা টেনে ধরছে সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ
 সাম্প্রদায়িকতা, কুসংস্কার, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত হতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে এগিয়ে নিতে বেসরকারি সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ।
 গতকাল শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের পথ চলার অবিনাশী চেতনা, যার পুরোধা ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ চেতনায় বার বার আঘাত এসেছে। ভূলুন্ঠিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। কিন্তু এদেশের জনগণ কখনও তা মেনে নেয়নি।
প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, স্বৈরাচার, সামরিকতন্ত্র, মৌলবাদের উত্থান আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে অনেক সময় বাধাগ্রস্ত করেছে। এখনও সাম্প্রদায়িকতা, কুসংস্কার, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে টেনে ধরছে। এ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে এগিয়ে নিতে হবে। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিতে মানবিকতার বিকাশ ঘটাতে হবে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠনকে এগিয়ে আসতে হবে।
বেগম জেবুন্নেছা ও কাজী মাহবুবউল্লাহ জনকল্যাণ ট্রাস্ট আয়োজিত ২৮তম মাহবুবউল্লাহ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট সামাজিক উন্নয়নে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমাদের সমাজে অনেক বিত্তবান লোক রয়েছেন, তাদের অর্থের অভাব নেই। তারা বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছেন। আমি তাদের আহ্বান জানাব, আপনারা দেশ ও জাতির প্রতি দায়বদ্ধ থেকে নিজ নিজ এলাকায় শিক্ষা বিস্তারসহ সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখুন। আর্ত-মানবতার সেবায় এগিয়ে আসুন। কিশোরগঞ্জের নিজের নির্বাচনী এলাকার মানুষের অবদানের কথা তুলে ধরেন সাতবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবদুল হামিদ।
হাওর এলাকার প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার কথা তুলে ধরে প্রেসিডেন্ট বলেন, যখন ঝড়বৃষ্টিতে হাওড়ে আফাল সৃষ্টি হয় তখন বাড়ি-ঘরের জন্য মানুষের সীমাহীন কষ্ট তা আমি দেখেছি। এ কারণে ছোটবেলা থেকেই পণ ছিল আমি তাদের কল্যাণে কিছু করব। সুখ-দুঃখে তাদের পাশে থাকব। আমার সারা জীবনের রাজনীতির মূল প্রচেষ্টা ছিল এলাকার উন্নয়ন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। সেটা কতটুকু করতে পেরেছি তা এলাকার জনগণ মূল্যায়ন করবেন।
শিল্পকলার একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সাহিত্য, বিজ্ঞান (কৃষি), শিল্পকলা এবং মানবাধিকারে অবদান রাখার জন্য তিনজন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেয়া হয়। পদকপ্রাপ্তরা হলেনÑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কার্টুনিস্ট রফিকুন নবী, মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
বেগম জেবুন্নেছা ও কাজী মাহবুবউল্লাহ জনকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান জোবায়দা মাহবুব লতিফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন