শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দুই জঙ্গির মৃত্যুতে গুলশান মামলার তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে না : আইজিপি

| প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : পুলিশের আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন,  গুলশান হামলার ‘অন্যতম হোতা’ নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান এবং জঙ্গি সাদ্দাম হোসেন নিহত হওয়ায় তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে না। গুলশান হামলার মারজান, জাপানি হত্যার সাদ্দাম ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার পর এই প্রথম আইজিপি এ মন্তব্য করলেন।
গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব নবাব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স টেরোরিজম ইন দ্য ওয়েব অব ইসলামিক স্টেট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন আইজিপি।
গুলশান হামলার ‘অন্যতম হোতা’ নব্য জেএমবির নেতা নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান এবং উত্তরবঙ্গে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিসহ বেশ কয়েকটি হত্যাকা-ের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি সাদ্দাম হোসেন ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় কাউন্টার বৃহস্পতিবার রাতে টেরোরিজম পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
গত বছর জুলাই মাসে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যার ঘটনার পর তদন্তের মধ্যে মারজানের নাম আসে। তাকে ওই হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলছিল পুলিশ।
শহীদুল হক বলেন, “নুরুল ইসলাম মারজান গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ডদের একজন ছিল। একজন দুর্ধর্ষ জঙ্গি ছিল। সে ছিল অপারেশন কমান্ডার। নর্থবেঙ্গল ও ঢাকার আশপাশে যতগুলো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছিল সবগুলোর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল। তাকে পুলিশ খুঁজছিল। পরশু রাতে গোয়েন্দা পুলিশ তথ্য পায় যে সে ঢাকায় প্রবেশ করবে। সেখানে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে সে মারা যায়। এর আগে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। কিন্তু কিছু তরুণ ডিমোটিভেটেড হচ্ছে, কিছু সোশাল মিডিয়ার প্রপাগান্ডার মাধ্যমে। প্রত্যেকটি পরিবারের উচিত সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখা। জঙ্গিবাদ দমনে জনগণের সহায়তা চেয়ে তিনি বলেন, শুধু পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়, আপনাদের সহায়তা প্রয়োজন আছে। আপনাদের আশপাশে জঙ্গি সম্পৃক্ত কোনো তথ্য থাকলে পুলিশকে জানান, সহায়তা করুন।
আরেকজন জঙ্গি সাদ্দাম, সেও দুর্ধর্ষ জঙ্গি ছিল, নর্থ বেঙ্গলে যত ঘটনা ঘটে সব ঘটনাই তার নামে পাঁচটি মামলার চার্জশিট চলছে এবং পাঁচটি মামলার তদন্ত চলছে।
পুলিশ প্রধান বলেন, এই দুজনের নিহত হওয়ার পর গুলশান হামলার ঘটনার সঙ্গে যেহেতু তাদের সম্পৃক্ততা ছিল তাই অশব্যই গুলশান হামলার তদন্তের অগ্রগতি হয়েছে।
এতে মামলার তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,হবে না। কারণ আমাদের কাছে সব তথ্য আছে। মারজান এবং সাদ্দাম কিভাবে আসল, যা যা ঘটিয়েছে পুরো তথ্য আমাদের কাছে আছে। মামলার তদন্তে আর কোনো তথ্যের প্রয়োজন নেই। এখন আমরা চার্জশিট তৈরি করব।
জঙ্গিদের টাকা দেশ ও বিদেশ থেকে আসত উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরাসরিও টাকা আসে, আবার বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে তাদের টাকা আসে।
সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন জিয়া রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত মার্গারিটা কুলেনারা।
অন্যদিকে ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নের আলুটারি গ্রামে ৬৬ বছর বয়সী জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। জুলাই মাসে পুলিশ আদালতে যে অভিযোগপত্র দেয়, তাতে সাদ্দামের নাম আসে।
মারজানের পিতা-মাতার দাবি
যারা আমার পুত্রকে জঙ্গি করেছে তাদেরও বিচার চাই
মুরশাদ সুবহানী, পাবনা থেকে : ‘ছ্যাওলাডা আমার লেহা পড়ায় ভাল ছিল্যে। এলাকায় কারো সঙ্গি উঁচু গলায় কথা কয়নি। বড় লেখাপড়া করতি, চিটাগাং গ্যালো। সেই ছ্যাওলডা আমার ক্যাবা ক্যরে জঙ্গি হল্যে।’ পাবনার কথ্য ভাষায় এই কথা বলার পর নিহত নুরুল ইসলাম মারজানের পিতা গেঞ্জির  ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দীন বললেন, যারা আমার পুত্রকে জঙ্গি করেছে তাদেরও বিচার হওয়া উচিত।
এই দাবি মারজানের মা সালমা খাতুনেরও। তারা বলেন, সে অন্যায় করেছে তার বিচার হয়েছে। আর তাকে যারা এই পথে নিয়ে এসেছে তাদেরও শাস্তি হোক। একই সাথে তার পুত্রবধূ ও মারজানের শিশু সন্তানকে ফেরত চাইলেন শোকাচ্ছন্ন মারজানের পিতা-মাতা। তারা আরও বলেন, তাদের পক্ষে পুত্রের লাশ নিয়ে আসা সম্ভব নয়। সরকার যদি দয়া করে লাশ তাদের কাছে পাঠায় তাহলে তারা মারজানের দাফনের ব্যবস্থা করবেন। এলাকাবাসী জানান, তারা ছোটবেলা থেকে মারজানকে চিনতেন। কারো সাথে কোনো ঝগড়া-ফ্যাসাদ কখনও করেনি। এই ভালো ছেলেটা কি করে এই বিপথে পা দিয়েছে আমরা জানি না। আর কারো পিতা-মাতার সন্তান যেন জঙ্গি বা অন্যকোনো কুপথে না যায় এই কামনা করি।
আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি গুলশান আর্টিজেন রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার মাস্টার মাইন্ডের মধ্যে মারজান একজন। তার পুরো নাম নুরুল ইসলাম মারজান। লেখাপড়ায় মেধাবী ছিল গরিব ঘরের এই সন্তান। বন্দুক যুদ্ধে নিহত মারজানের বাড়ি পাবনা সদর উপজেলাধীন হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রামে। নিজ গ্রাম থেকে ৫ম শ্রেণী পাস করার পর পাবনা শহরের পুরাতন বাঁশ বাজার আহলে হাদিস কওমী মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। পাবনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পরীক্ষায়  জিপিএ ৫ পেয়ে পাস করে মারজান। এরপর ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবী বিভাগে ভর্তি হন। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে বাড়ি আসে মারজান এবং খালাতো বোন প্রিয়তিকে বিয়ে করেন। তারপর স্ত্রীকে নিয়ে চলে যান। এরপর আর  বাড়ি আসেননি। সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ফাহাদ নামে পরিচিত ছিলেন। মারজান সিজিপিএ ৩.৪৮ (আউট ৪.০০) পেয়ে দ্বিতীয় বর্ষে উত্তীর্ণ হন। এরপর ২০১৫ সালে দ্বিতীয় বর্ষে ৬টি পরীক্ষা দিলেও আর সেমিস্টার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। চট্টগ্রাম  বিশ্বদ্যিালয়ে নিখোঁজদের মধ্যে মারজান ছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় আর্টিজেন রোস্তোরাঁয় হামলার মাস্টার মাইন্ড  মারজান  এবং  রংপুর জেলার কাউনিয়ার সাদ্দাম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন