শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

গৌরবময় অমর একুশে আজ

প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৫ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

ইনকিলাব ডেস্ক : গৌরবময় এক অনন্য দিন আজ বাঙালির জীবনে। পৃথিবীর ইতিহাসের দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় প্রথমবার মায়ের ভাষায় বলার অধিকার রক্ষায় মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল রাজপথে। সেই মানুষের পরিচয় বাঙালি।
একুশের চেতনা আমাদের জাতীয় চেতনা। আমাদের মুক্তির চেতনা। এ দেশের সাহিত্য সংস্কৃতি কৃষ্টির সঙ্গে মিশে আছে এ চেতনা। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি প্রতিবছর আমাদের মাঝে আসে নব চেতনা নিয়ে। আর এ চেতনা নিয়ে শহীদ মিনারে জেগে উঠে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা আর জাতীয় জীবনে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি ও উন্নতি ত্বরান্বিত করার দীপ্ত শপথ। নানা বর্ণের ফুল দিয়ে তৈরি ডালিতে আজ ভরে উঠবে শহীদ মিনারের পাদদেশ।
৬৪ বছর আগের এই দিন ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। সেদিন ঢাকার রাজপথ হয়ে উঠেছিল উত্তাল। পাকিস্তানি শাসকদের হুমকি-ধমকি, রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ভেঙে মাতৃভাষার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে পথে নেমে এসেছে ছাত্র, শিক্ষক, শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সী অসংখ্য মানুষ। বসন্তের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তারা বজ্রনির্ঘোষ কণ্ঠে আওয়াজ তুলেছে, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। পলাশে-শিমুলে রক্তিম হয়ে উঠেছিল, বাংলার দিগন্ত। গুলি চালানো হয়, মিছিলে। সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ বাংলা মায়ের অকুতোভয় সন্তানদের তাজা রক্তে রঞ্জিত হলো দেশের মাটি। এক অভূতপূর্ব অধ্যায় সংযোজিত হলো মানব ইতিহাসে। অমর একুশের পথ ধরেই উন্মেষ ঘটেছিল বাঙালির স্বাধিকার চেতনার। সেই আন্দোলনের সফল পরিণতি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন। ভাষার জন্য বাঙালির এই আত্মদানের দিনটিকে ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো ঘোষণা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। বাঙালির সঙ্গে সারা বিশ্ববাসী আজ দিনটি পালন করবে মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও গৌরব বুকে নিয়ে।
বরাবরের মতোই এবারও গতকাল শনিবার মধ্যরাত থেকেই রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে যাত্রা শুরু হয়েছে সর্বস্তরের বাঙালির। আজ ভোর থেকে সারা দিন কেউ মালা হাতে, কেউ সুদৃশ্য পুষ্পস্তবক নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবেন শহীদ মিনারের দিকে। থাকবে কালো ব্যানার, কালো ব্যাজ। নগ্ন পায়ে উঠবেন শহীদ মিনারের বেদিতে। কণ্ঠে থাকবে সেই চিরচেনা গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি...।’ শহীদ মিনার থেকে অনেকেই যাবেন আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করতে।
আজ সরকারি ছুটির দিন। ঢাকার মতো দেশের সর্বত্রই আজ সকালে প্রভাতফেরি করে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানো হবে শহীদদের স্মৃতির প্রতি। সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। দিনের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে থাকবে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অমর একুশে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট
প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, মহান ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এ আন্দোলন ছিল আমাদের মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নিজস্ব জাতিসত্তা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষারও আন্দোলন। অমর একুশের অবিনাশী চেতনা পরবর্তীকালে স্বাধিকার ও স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমাদেরকে যুগিয়েছে অসীম প্রেরণা ও শক্তি। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং তাঁরই নেতৃত্বে দীর্ঘ ন’মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি বহু কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। আমি আজ গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি মহান ভাষা আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী ভাষা শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ ভাষার দাবিতে সোচ্চার তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ সকল ভাষা সৈনিককে, যাঁদের অসীম ত্যাগ, সাহসিকতা, দক্ষ সাংগঠনিক ক্ষমতা ও ত্বরিত কার্যক্রম গ্রহণের ফলে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। বাঙালি পায় মাতৃভাষার অধিকার।
প্রধানমন্ত্রী
“মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলা ভাষাভাষীসহ বিশ্বের সকল ভাষা ও সংস্কৃতির জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি তার বাণীতে বলেন, মহান একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জীবনে শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতীক। ১৯৫২ সালের এ দিনে ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে প্রাণ দিয়েছিলেন রফিক, শফিক, সালাম, বরকত ও জব্বারসহ আরও অনেকে।
আজকের এ দিনে আমি ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। শ্রদ্ধা জানাই বাংলাভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সকল ভাষাসৈনিকের প্রতি।
১৯৪৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রস্তাবে ছাত্রলীগ, তমদ্দুন মজলিশ ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সংগ্রাম পরিষদ ধর্মঘট ডাকে। এদিন সচিবালয়ের সামনে থেকে বঙ্গবন্ধুসহ অনেক ছাত্রনেতা গ্রেফতার হন। ১৫ মার্চ তাঁরা মুক্তি পান। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় অনুষ্ঠিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন শেখ মুজিবুর রহমান। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে।
অমর একুশে আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক। একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে ধারণ করে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও নিরক্ষরতামুক্ত এবং আধুনিক ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আমাদের সরকার দেশের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বিরোধীদলীয় নেতা
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এমপি বলেছেন, বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের পাতায় একুশে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বের বাংলাভাষীদের জন্য অনন্য মহিমায় সমুজ্জ্বল একটি দিন। গতকাল এক বাণীতে তিনি ভাষা আন্দোলনে সব শহীদের রুহের মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বায়ান্ন সালের ২১শের পথ ধরেই এদেশের সকল গণতান্ত্রিক এবং স্বাধিকারের সংগ্রাম সম্প্রসারিত হয়েছে, অর্জিত হয়েছে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার সরকারী স্বীকৃতি না দিয়ে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এদেশের উপর নিজেদের সাংস্কৃতিক আধিপত্য বজায় রাখতে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল- এদেশকে স্থায়ীভাবে পরাধীন রাখার জন্য। কিন্তু ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে তা প্রতিরোধ করে। দেশ স্বাধীন হলেও নতুন করে ভিন্ন মাত্রায় আধিপত্যবাদী শক্তি এদেশের উপর সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক আধিপত্য কায়েম করে জাতি হিসেবে আমাদেরকে নতজানু করে রাখতে চাচ্ছে। ভিন্ন কায়দায় আমাদের ভাষা সংস্কৃতির ওপর বিদেশী সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চলছে মহল বিশেষের সহযোগিতার জন্য। যারা দেশকে তাঁবেদার রাখতে চান তারাই চক্রান্তজাল বুনে আধিপত্যের থাবাকে বিস্তার লাভ করতে সুযোগ দিয়ে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। যাতে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারি। আর এইজন্যই এখন মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে আবারো একদলীয় দুঃশাসনের শৃঙ্খলে দেশের মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে। সুতরাং আজও একুশের অমøান চেতনা সকল ষড়যন্ত্রকারী আধিপত্যবাদী শক্তিকে রুখতে আমাদের উদ্বুুদ্ধ করবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন