শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

টাটকা অবস্থায় টমেটো খান

| প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

টমেটো একটি সবজি, যা কাঁচা বা পাকা যেকোন অবস্থায় রান্না করে বা না করে খাওয়া যায়। তবে অন্যান্য সবজির মতো টমেটো রান্না করলে কিছু পুষ্টিগুণ কমে যায়। টমেটোতে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে, রয়েছে ভিটামিন-সি, যা আমাদের ত্বক, চুলের রুক্ষতা কমায়, ঠা-াজনিত ঘা ভালো করে। যেকোনো চর্মরোগ, বিশেষত স্কার্ভি রোগের বিরুদ্ধে অনেক ভালো ভূমিকা রাখে টমেটো। অনেকের ঠা-ায় হাত-পা, বিশেষত পায়ের গোড়ালি ফেটে যায়। টমেটোর মধ্যকার ভিটামিন-সি এই ফেটে যাওয়া রোধ করে। টমেটোতে কিছু পরিমাণ ভিটামিন-এ রয়েছে, যা শরীরের মাংসপেশিকে করে মজবুত, দেহের ক্ষয় রোধ করে, দাঁতের গোড়াকে শক্তিশালী করে, চোখের জন্য পুুষ্টি জোগায় ।
পেয়ারার মতো টমেটোতেও রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টম যা সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগের বিরুদ্ধে  প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলে। টমেটোর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বককে কয়েকগুণ বেশি শক্তিশালী করে, যা সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির বিরুদ্ধে সক্রিয়। টমেটো একেবারেই চর্বিহীন। এতে রয়েছে শর্করা, চিনি ও অল্প পরিমাণে আমিষ। টমেটো পুষ্টিকর সবজি হলেও  এর প্রধান সমস্যা, এই সবজি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। অন্য সবজির মতো রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজে এটা সংরক্ষণ করা হলেও এর পুষ্টিগুণ অনেকাংশে নষ্ট হয়ে যায়। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণ পানি থাকে। তাই টমেটো খাওয়া উচিত টাটকা অবস্থায়ই।  
টমেটোর সাথে আপনার সবাই পরিচিত। আমাদের অনেকের নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় এ সবজিটি থাকেই থাকে। কারণ, এর পুষ্টিগুণ। এর পুষ্টির পরিমাণ সমান ওজনের আপেল, নাসপাতি, কলা বা আঙ্গুরের তুলনায় দ্বিগুণ থেকে চারগুণ বেশি। নানাভাবে আমরা টমেটো খেয়ে থাকি। কেউ কাঁচা খেতে পছন্দ করেন আবার কেউ কেউ সালাদ বা রান্না করে খেতে ভালবাসেন।
একশ’ গ্রাম টমেটোতে যে উপাদানগুলো রয়েছে : ভিটামিন এ-১০০০ আই,ইউ, ভিটামিন সি-২৩ মিলি গ্রাম, ক্যালসিয়াম-১১ মিলিগ্রাম, লৌহ-০.৬ মিলি গ্রাম, ফসফরাস-২৭ মিলি গ্রাম, পটাশিয়াম-৩৬০ মিলিগ্রাম, প্রোটিন-১ গ্রাম, গুটাসিক অ্যাসিড-১০০-১৪০ গ্রাম, শক্তি-২০ ক্যালরি এবং পানি-৯৪%।  
এবার চলুন জেনে নেয়া যাক টমেটোর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে-
চর্মরোগের চিকিৎসায় টমেটো কার্যকর। একটি টাটকা টমেটো নিয়ে তার রস সংগ্রহ করুন। তারপর সে রস ত্বকের যে স্থানটি রোগাক্রান্ত সেখানে মাখুন। এভাবে দিনে দুই থেকে তিনবার মাখুন। দেখবেন আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।
*মুখের সৌন্দর্য ধরে রাখতে টমেটো : টাটকা টমেটো কেটে টুকরো টুকরো করার পর সেগুলো থেকে রস সংগ্রহ করুন। তারপর এই রসের সঙ্গে খানিকটা চিনি মেশান। এই চিনিমিশ্রিত রস প্রতিদিন মুখে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করুন। এতে মুখের ত্বক মসৃণ ও কোমল হবে। *ক্যান্সার প্রতিরোধক টমেটো :  টমেটো যে কোনো রোগের মাত্রা হ্রাস করার ক্ষমতা রাখে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টমেটোতে লাইকোপেন নামে বিশেষ উপাদান রয়েছে, যা ফুসফুস, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কোলন, স্তন, মূত্রাশয় ইত্যাদি অঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।  
*উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে টমেটো : আপনাদের কেউ কি উচ্চ রক্তচাপের রোগী? তাহলে এখন থেকে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি বা দুটি টমেটো খাবেন। সঙ্গে কিছু চিনিও মিশিয়ে নিতে পারেন। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
*রক্ত স্বল্পতার চিকিৎসায় টমেটো : যারা রক্ত স্বল্পতা বা  এনিমিয়ায় ভুগছেন, তাদের জন্য টমেটো বেশ উপকারী একটি সবজি বা  ফল। একটি আপেল, একটি টমেটো এবং ১৫ গ্রাম তিল একসাথে খাবেন। এতে রক্ত স্বল্পতার সমস্যা অনেকটাই দূর হবে।  
*ক্ষতের চিকিৎসায় টমেটো : আপনার মুখগহ্বরে কি মাঝে  মাঝে ক্ষতের সৃষ্টি হয়? এখন থেকে আর চিন্তা করবেন না। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় একবার করে টমেটোর রস খান। দেখবেন, দিন দশেকের মাথায় ক্ষত দূর হয়ে যাবে।  
* হেপাটাইটিসের চিকিৎসায় টমেটো :  টমেটোর  এক মজাদার  খাবারের নাম সবজি চাল স্যুপ। এর প্রধান উপাদান হচ্ছে, টমেটো, সেলারি, গাজর এবং চাল। এই খাবার হেপাটাইটিসের চিকিৎসায় খুব কার্যকর। *গরমকালে সর্দিগরমি প্রতিরোধে টমেটো : সর্দিগরমি গ্রীষ্মকালে বেশি দেখা যায়। এক্ষেত্রে এক বা দুটি টমেটো নিয়ে স্লাইস করে অল্প চিনি বা অল্প লবণ দিয়ে পাত্রে গরম করে স্যুপ তৈরি করুন। তারপর  গরম গরম খেয়ে নিন।  
*জ্বরের চিকিৎসায় টমেটো : সামান্য জ্বর হলে গ্রেফ টমেটো খেলেই আরাম পেতে পারেন। এক্ষেত্রে টমেটোর রসের সাথে তরমুজের রস মিশিয়ে খাবেন। ঘণ্টায় ঘণ্টায় একটু একটু করে খেতে থাকুন। মাড়ি থেকে রক্তপাতে টমেটো : আপনার মাড়ি থেকে যদি রক্তপাত হয়, তবে বুঝতে হবে, আপনার ভিটামিন সি-এর অভাব আছে। প্রতিদিন একটি করে টমেটো খেলে দিন পনের পর হয়তো দেখবেন রক্তপাত আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে গেছে। টমেটো মহান আল্লাহতায়ালার এক অপূর্ব দান। এর উপকারিতার শেষ নেই। তাই সুস্থ, নিরোগ থাকতে যদি চান, নিত্যদিন একটি করে টমেটো খান।
ষ ডা: মাওলানা লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিষ্ট
আম্বরখানা, সিলেট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন