বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সীমান্তহাটে নিষিদ্ধ মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য

ক্ষতির মুখে দেশীয় ব্যবসায়ীরা

| প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, ছাগলনাইয়া থেকে : সীমান্ত অভিমুখে শত শত মানুষের স্রোত। দেখে মনে হবে কোনো মেলা বা উৎসবে যাচ্ছেন তারা। আসলে কোনো মেলা নয়, সবার গন্তব্য ফেনীর ছাগলনাইয়া সীমান্তের নো-ম্যানসল্যান্ডে বসা মোকামিয়া সীমান্তহাট।
মানুষের ভিড় হলেও নেই কোনো বিশৃঙ্খলা। লাইন ধরে টিকিট কেটে সবাই যাচ্ছেন সীমান্তহাটে। স্থানীয়দের কাছে এ হাট খুবই জনপ্রিয় হলেও নানা অভিযোগও রয়েছে। হাটে বিক্রি নিষিদ্ধ পণ্য নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মোকামিয়া সীমান্তে এ হাট বসে। হাটে দু’দেশের হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়।
গত ২৪ জানুয়ারি সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হাটকে ঘিরে ভারতীয়দের চেয়ে বাংলাদেশীদের আগ্রহ বেশি। মসলা, কসমেটিকস, দুধ, হরলিকস ও ভারতীয় বিভিন্ন পণ্যের প্রতিই আগ্রহ বেশি বাংলাদেশীদের। এ আগ্রহকে পুঁজি করে কিছু ভারতীয় অসাধু ব্যবসায়ী হাটে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যও বিক্রি করছেন। তবে প্রশাসন কঠোর হওয়ায় আগের চেয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য অনেকটাই কমে গেছে। বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত হাটে প্রবেশের ফটকের পাশেই একটি নির্দেশনা চোখে পড়ে। যেখানে লেখা রয়েছে, নিম্নলিখিত দ্রব্যসামগ্রী সীমান্ত হাটে ক্রয়-বিক্রয় আইনত অপরাধ। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে, নিম্নলিখিত সব ধরনের ইলেক্টিক পণ্য, আন্তর্জাতিক ব্যান্ডের পণ্য, প্যাকেটজাত মসলা, হরলিক্স, তেল, কসমেটিকস, বিদেশি ক্রিম, পাউডার, চা পাতা ও গুঁড়া দুধ ইত্যাদি। অথচ সীমান্ত হাটে এসব পণ্যই কেনাবেচা বেশি। ভারতের দিক দিয়ে সীমান্ত হাটের প্রবেশ মুখে ত্রিপুরা সরকারের খাদ্য, জনসংভরণ ও ভোক্তাবিষয়ক দফতরের একটি নির্দেশনা রয়েছে, পণ্যের সুরক্ষা ও গুণমানের জন্য ইলেক্ট্রনিক্স ও ইলেক্ট্রিক্যাল দ্রব্যের ক্ষেত্রে যথা সম্ভব আইএসআই মার্ক, স্বর্ণ ও মূল্যবান রত্মের ক্ষেত্রে হলমার্ক নিশ্চিত হতে হবে। এছাড়া ভোক্তা সুরক্ষা ও সচেতনতার জন্য রয়েছে আরও বেশ কিছু নির্দেশনা।
ছাগলনাইয়ায় বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত হাটে অসম বাণিজ্যের কারণে হাটে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে এ হাট থেকে করবিহীন সস্তায় ভারতীয় পণ্য কিনে এনে এক শ্রেণির অসাধু লোক কালোবাজারিতে জড়িয়ে পড়েছে। এতে করে দেশীয় পণ্যের ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে সীমান্ত হাটের পণ্য নিয়ে ব্যবসার সুযোগ নেই। ধরতে পারলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সীমান্তবাসীদের মধ্যে সম্প্রীতি  বৃদ্ধি ও বাণিজ্য প্রসারে চালু হয় এ হাট। প্রথম এ হাটের আশপাশের গ্রামবাসীদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য-বেচা কেনার জন্য চালু হয়। কিন্তু দুই বছর না গড়াতে প্রতি মঙ্গলবার এখন দেশের দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা গাড়ি হাকিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে হাটে। সংশ্লিষ্টদের হিসেব মতে প্রতি বাজারে বাংলাদেশী ২৭ দোকানির গড়ে আড়াই লক্ষ টাকার বিপরীতে ভারতীয় ২৭ দোকানি বিক্রি ২৫ লক্ষ টাকারও বেশি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সিমেন্টের পিলারের সঙ্গে কাঁটাতার দিয়ে সীমান্ত হাটের চারদিক ঘেরাও করে দেয়া হয়েছে। হাটে প্রবেশের জন্য দুটি গেট রয়েছে। একটি ভারতের দিকে ও অন্যটি বাংলাদেশের দিকে। দু’দেশের তালিকাভুক্ত ব্যবসায়ীদের জন্য ২৭টি করে ৫৪টি দোকান বরাদ্দ থাকলেও হাটে বেচাকেনা করছেন আরও বেশি ব্যবসায়ী। প্রতি হাটেই কয়েক হাজার লোকের সমাগম ঘটে। তবে সবসময় হাটে পছন্দের জিনিস পাওয়া যায় না। এ হাটের কারণে ছাগলনাইয়া বাজারের ব্যবসায়ীও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নিম্নমানের গুঁড়া দুধ, কসমেটিকস ও চা পাতাসহ যেসব ভারতীয় পণ্য বিক্রি হয়, বিশেষ করে কসমেটিকসের বেচাকেনা একেবারেই মন্দা। অসচেতনতার কারণে সাধারণ মানুষ সীমান্ত হাটের নিম্নমানের পণ্য কিনে নিয়ে ঠকছেন।
দুই দেশের সীমান্তের ঠিক মাঝে তৈরি করা হয়েছে সীমান্ত হাটের কাঠামো। চারদিকে ধানক্ষেত, মাঝে কয়েকটি আধাপাকা ঘর নিয়ে তৈরি এ হাট। এলাকা ও বাইরের বা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ক্রেতাদের ২০ টাকার বিনিময়ে টিকিট কেটে হাটে প্রবেশ করতে হয়। তবে এ বাজারে দোকানি হিসেবে দোকান বরাদ্দ পেয়েছেন দুই দেশের সীমান্তের ৩ কিলোমিটার এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দারা। গত মঙ্গলবার সীমান্ত হাটে ভারত বাংলাদেশ যৌথ সভায় দু’দেশের বাংলা ভাষার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়া ওইদিন বর্ডার হাটে দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল বলেন, শুধু কেনাকাটা নয় দুই দেশের মানুষের যোগাযোগের কারণে শুরু থেকেই হাটটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এখন দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে এ হাটে আসছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১০ সালের একটি সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী ১০টি সীমান্ত হাট স্থাপনের কথা রয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ৪টি হাট চালু হয়েছে। ২০১৩ সালে ১২ জুন শ্রী-নগর ছাগলনাইয়া এ সীমান্ত হাটের উদ্বোধন করা হয়।
সীমান্ত হাটে যাওয়া মানুষের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাগলনাইয়া ও শ্রী-নগর বর্ডার হাট ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শারমীন জাহান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রির অভিযোগটি আমি শুনেছি। সীমান্ত হাটটি মূলত দু’দেশের ভ্রাতৃত্বের জন্য করা হয়েছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে করা হয়নি। সীমান্ত হাটের ক্ষতিকারক কোনো পণ্য বিক্রি করলে দু’দেশের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন