বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

রাজশাহীর মাতৃসদন থেকে চুরি হওয়া নবজাতক উদ্ধার

| প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রাজশাহী ব্যুরো : রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া এলাকার নগর মাতৃসদন থেকে চুরি যাওয়া নবজাতকটিকে শুক্রবার দুপুরে নগরীর বাসার রোড এলাকার একটি বাসা থেকে বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। এ সময় নবজাতক চুরি করে নিয়ে যাওয়া ওই নারীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তার নাম শাহীন আক্তার ওরফে শুভ্রা (৩৫)। তিনি নর্থবেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাজশাহীর আলুপট্টি ক্যাম্পাসের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। তার স্বামীর নাম ডা. আক্তারুজ্জামান। তাদের স্থায়ী বাড়ি জেলার বাগমারা উপজেলায়। তবে এই দম্পতি বাসার রোড এলাকার ওই বাসাটি ভাড়া নিয়ে থাকতেন।
গত ১৯ জানুয়ারি রাতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (পিএসটিসি) নামের একটি এনজিও পরিচালিত একটি মাতৃসদন থেকে জন্মের মাত্র ৬ ঘণ্টা পর নবজাতকটি চুরি হয়। শুভ্রা নিজেকে একজন এনজিওকর্মী পরিচয় দিয়ে গর্ভকালীন সময় থেকেই সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে নবজাতকটির মা মুক্তি খাতুনের (১৮) সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। আর মুক্তিকে নানা পরামর্শ দিতেন নগরীর ডাঁশমারী এলাকার নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাঠকর্মী তহুরা খাতুন।
মুক্তির প্রসব বেদনা উঠলে গত ১৭ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে তহুরা ও শুভ্রা তাকে নওদাপাড়া এলাকায় ওই মাতৃসদনে ভর্তি করেন। ওই দিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মুক্তির ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। শুভ্রা তার চিকিৎসার খরচ বাবদ তিন হাজার টাকা দেন। এ ছাড়া বাচ্চার জন্য একটি তোয়ালে, কম্বল ও নতুন পোশাক কিনে দেন। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কৌশলে তিনি বাচ্চাটি নিয়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় মুক্তি খাতুনের মা রোজিনা খাতুন বাদি হয়ে নগরীর শাহমখদুম থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ তহুরাকে গ্রেফতার করে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়। তবে রিমান্ডে তহুরা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, বাচ্চা নিয়ে যাওয়া ওই নারীকে তিনি চেনেন না। এরই মধ্যে পুলিশ সিসি ক্যামেরার একটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে। ওই ফুটেজে দেখা যায়, নগরীর বিনোদপুর বাজারে রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে চলে যাচ্ছেন এক নারী। ফুটেজটি দেখে মুক্তির মা শনাক্ত করেন, এই সেই নারী যিনি বাচ্চা নিয়ে পালিয়েছেন।
এরপরই ওই নারীকে ধরতে মাঠে নামে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল বাসার রোড এলাকার ওই বাসাটি ঘিরে ফেলে। এরপর মুক্তি খাতুনের বাবা মুক্তার হোসেন ও মাতৃসদনের চিকিৎসকদের ডেকে পাঠানো হয়। তারা এসে শনাক্ত করেন, এই শুভ্রায় তাদের বাচ্চা চুরি করেন। এরপর দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশ শুভ্রাকে প্রথমে বের করে আনে। এ সময় শুভ্রা কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছিলেন। তাকে একটি মাইক্রোবাসে তোলার পর বাচ্চাটিকে বের করে আনে পুলিশ।
এ সময় রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) উপ-কমিশনার (পূর্ব) আমির জাফর সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজে আমরা যে নারীকে দেখেছিলাম এই শুভ্রায় সেই নারী। ফুটেজে আমরা শুভ্রার যে পোশাক ও ভ্যানেটি ব্যাগ দেখেছিলাম, তা এখানে জব্দ করা হয়েছে। চিকিৎসক ও ভুক্তভোগী পরিবারটিও তাকে শনাক্ত করেছেন।’ প্রযুক্তি ও গণমাধ্যমের সহযোগিতায় বাচ্চাটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হলো। বাচ্চাটিকে আপাতত সেফ হোমে রাখা হবে। যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে তাকে তার মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তিনি জানান, গ্রেফতার শুভ্রার চার-পাঁচ বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে। তার নাম অহনা। তবে ছেলে সন্তান না থাকায় তিনি ৬ মাস আগে থেকেই বাচ্চা চুরির পরিকল্পনা করেছিলেন। পুলিশ জানতে পেরেছে- এ জন্য তিনি ৬ মাস ধরেই পেটে কাপড় বেঁধে বাসা থেকে বের হতেন। এ মাসের ২০ তারিখে জন্ম নেবে এমন বাচ্চারও খোঁজ-খবর তিনি বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়েছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন