শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দক্ষিণ চীন সাগরে পরবর্তী বিশ^যুদ্ধের আশঙ্কা

প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : আমার টাইম মেশিনে চড়ে বসুন, আমার সাথে উড়ে চলুন, দু’বছর সময় এগিয়ে যাই। পৌঁছে যাই নভেম্বর, ২০১৮ সালে, প্রথম বিশ^যুদ্ধের শত বছরপূর্তির দিনে। আমরা নিজেদের দেখতে পাই সেই মহাজোটের অংশ হিসেবে যা এই মাত্র চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
২০১৬ সালের শুরুতেই দক্ষিণ চীন সাগরে পুরনো কেতার যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে যেদিকে শুধু আমরা (ব্রিটিশরা) কোনো নজর দিচ্ছি না। এখন ব্রিটিশ সরকার বীরদের ঘরে ফিরে আসার একশ’ বছর পর এখন সৈন্য নিয়োগের কথা বলছে। এটা আঘাত করার মত রসিকতা।
এটা এমন এক সময় যখন রাজনীতিকরা থুসাইডিডিসের সম্পর্কে কথা বলতে শুরু করেছেন যা আমাদের কানে যন্ত্রণা সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্বের সাথে এই প্রাচীন গ্রিক ঐতিহাসিকের তত্ত্বের কোনো সম্পর্ক থাকার কথা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে হোয়াইট হাউসে দেয়া বক্তৃতায় সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, পরস্পরের কৌশলগত প্রবণতা ও উন্নয়নের পথ সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পারস্পরিক সমঝোতা গভীর করতে চাই। তিনি বলেন, বিশে^ থুসাইডিডিসের ফাঁদের মত কিছু নেই। বড় দেশগুলো বিভিন্ন সময়ে কৌশলগত ভুল হিসাবে কারণে এ ভুল করে ও নিজেরা নিজেদের জন্য ফাঁদ তৈরি করে।
থুসাইডিডিসের ফাঁদ পেলোপনেশিয় যুদ্ধের মৌলিক ব্যাখ্যা। এটি ছিল স্পার্টার উত্থান যা স্পার্টাকে ভীত করে তুলেছিল। তিনি ধ্রুপদি কেতায় এর ইতিবৃত্ত লিখেছিলেন যা যুদ্ধকে অনিবার্য করেছিল। প্রাচীন এ যুদ্ধের হত্যাযজ্ঞের সাথে তুলনা হচ্ছে সাম্প্রতিক কালের প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধ।
জার্মানির উত্থান ও ব্রিটেনে প্রতি তার বিপুল সম্প্রসারণমান নৌবাহিনীর সৃষ্ট হুমকি প্রথম মহাযুদ্ধে থুসাইডিডিস ফাঁদের সৃষ্টি করেছিল। এ বিপদের প্রকৃতিটি ১৯০৭ সালে আয়ার ক্রো নামক ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তার নোটে বিবৃত হয়েছে। ক্রো লেখেন, জার্মানি সুস্পষ্টভাবে তার পক্ষে যতটা সম্ভব ততটা শক্তিশালী নৌবাহিনী তৈরি করবে এবং সে নৌবাহিনী ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের জন্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে। এর সাত বছর পর দু’নৌবাহিনী মরণপণ যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার উত্তেজনা একই ধরনের। ওয়াশিংটনে দেয়া বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট শি মৃত গ্রিক ঐতিহাসিকের তত্ত্ব খারিজ করার কয়েক বছর আগে চীন হাজার হাজার বাণিজ্যিক জাহাজকে সামরিক ব্যবহারের জন্য রপান্তরিত, বিশেষ করে আমেরিকান বিমানবাহী জাহাজ ডুবিয়ে দেয়ার উদ্দেশে ‘ক্যারিয়ার কিলার’ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি, যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালাতে সক্ষম পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র সংবলিত হাইপারসনিক গ্লাইড যান এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত স্টিলথ সাবমেরিনের পরীক্ষা করেছে। অর্থনীতির সার্বিক ধীরগতি সত্ত্বেও ২০১৫ সালে চীন তার সামরিক বাজেট ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। একজন চীনা জেনারেল হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সামরিক শক্তিবৃদ্ধি যখন সম্পন্ন হবে তখন কেউ আর আমাদের চোখ রাঙ্গাতে পারবে না।
এ দৃঢ়তা এখন পরীক্ষার সময় এসেছে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি না ফেরার পথ রচনা করেছে। পাঁচ বছর আগে ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া ও ব্রুনেইর দাবি নাকচ করে দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপগুলোর উপর তার সার্বভৌমত্ব দাবি জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে এক কূটনৈতিক নোট প্রেরণ করে। আঞ্চলিক আধিপত্যের প্রবণতা চীনে মজ্জাগত। তার সাধারণ প্রতিবেশিরা তাকে সমঝে চলার মাধ্যমে শান্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে। আধুনিক বিশে^ এর অর্থ হচ্ছে প্রতিবাদহীন আনুগত্য।
কিন্তু বারাক ওবামা ক্ষমতায় এসে তিনি ও তার পরাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ছোট ছোট এশীয় দেশগুলোর মনোবল জোরদারের মাধ্যমে এশিয়াকে শক্তিশালী করার পথ গ্রহণ করেন। তারা পরিষ্কার করে দেন যে, সব কিছু চীনের ইচ্ছেমত চলবে না। মার্কিন সামরিক বাজেট তার সকল সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে লড়াইয়ের অনুশীলন করতে প্রশান্ত মহাসাগরে যুদ্ধ মহড়া চালায়। তারপর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকা দক্ষিণ চীন সাগরে যুদ্ধ জাহাজ পাঠানোর পর চীনের বিরুদ্ধে জনশূন্য দ্বীপগুচ্ছের অন্যতম উডি দ্বীপে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের অভিযোগ করে। চীন পাল্টা বলে যে মার্কিন বিমান ও নৌ টহল এ অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
হার্ভার্ড অধ্যাপক গ্রাহাম অ্যালিসন গত ৫শ’ বছরে থুসাইডিডিস ফাঁদ-এর ১৬টি ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে তার ১২টিতেই যুদ্ধ হয়েছে। ৪টিতে যে হয়নি তা সুখবর বটে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধোত্তর কালে মার্কিন-সোভিয়েত শীতল যুদ্ধ। যেখানে যুদ্ধ এড়ানো গেছে তার পিছনে কাজ করেছে চ্যালেঞ্জকারী ও যাকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে তাদের মধ্যে মনোভাব ও কর্মকা-ে বেদনাদায়ক সমঝোতা।
যুদ্ধ একবার ঘোষণা করা হয়ে গেলে সমঝোতা হওয়া কঠিন। এটা সহজ হয় যদি শুরুতেই তা করা যায়। সূত্র দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন