বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তাঙ্গন

আলোর পথের দিশারী ছিলেন শাহ্ মোন্য়েম ঈছাপুরী

| প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ছৈয়দ মোহাম্মদ এহছানুল করিম
ওলি আল্লাহ জবান, আল্লাহ জবান
তাদের হাত আমার কুদরতির হাত
ওলিরা যা দেখেন এবং যা শুনেন
আল্লাহ চোখ দিয়ে এবং কান দিয়ে শুনেন।
আল্লাহ ওলিরা, আল্লাহ দরবারে যা চান
তা কামনা বা চাওয়া পূরণ করেন।- হাদীসে কুদ্সী
বার আউলিয়ার পূণ্যভূমি ও জন্মভূমি চট্টগ্রাম। এই চট্টগ্রাম মহান আল্লাহ’তালার একত্ববাদ ও তওহীদের বাণী নিয়ে যুগে যুগে ধর্ম প্রচারক সূফী, সাধক, দরবেশ ও ওলিগণ আগমন করেন। দ্বীনের খেদমত ও ইসলামী তৎপরতা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। চট্টগ্রামে বনে-জঙ্গলে, পাহাড়-পর্বতে, নদীতে-সমুদ্রে অসংখ্য পীর আউলিয়া ও সূফী দরবেশ বিস্তৃত আছেন। এই চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি নানুপুরে অবস্থিত ঈছাপুরী দরবার শরীফ। এখানে শায়িত আছেন কুত্বে আজম গাউছে মোকাররম হযরত মাওলানা শাহসূফী ছৈয়দ আবদুচ্ছালাম ঈছাপুরী (ক.)। তিনি গাউছুল আজম হযরত ছৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারী (ক.)’র প্রধান খলিফা ছিলেন। মাওলা-এ-আজম ঈছাপুরী (ক.)-কে উদ্দেশ্যে করে হযরত গাউছুল আজম ছৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.) বলেছেন- “হাচ্ছান কো চেহারা তোম্নে আয়া, আল্লাহ তোম্কো রুহুল কোদছে তায়েদ্ করিঙ্গে”। আবার গাউছুল আজম হযরত ছৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারী (ক.) বলেছেন- “তুমি দুনিয়াবি দুঃখ কষ্টে বিচলিত হইও না, আল্লাহ তোমাকে সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত এল্মে দায়েমী ও বেলায়তে নববীয়া দান করেছেন”। তিনি উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ আলেমে দ্বীন ছিলেন। তিনি দ্বীন ইসলামের জন্য শরী’আত, ত্বরীকত, হাকীকত ও মা’আরিফাত ভিত্তিক ১০৪ খানা কিতাবের প্রণেতা ছিলেন।
তিনি ভারত উপমহাদেশের মধ্যে বাতেলের বিরুদ্ধে মোনাজারা করেছেন ১০৪টি। উনি হীন ও হায়াতে ছিলেন ১০৪ বছর। তারই উত্তরসূরী খলিফা-এ-গাউছে মোকাররম মুর্শীদ-এ-আজম হযরত মাওলানা শাহসূফী ছৈয়দ আবদুল মোন্য়েম ঈছাপুরী (র.) তারই পবিত্র মহান জশ্নে মৌলেদ। মাওলা-এ-আজম হযরত ঈছাপুরী (ক.)’র উরসে গাউছুল আজম হযরত গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারী (ক.)’র ভাতিজি ছৈয়দা ছালেহা খাতুনের গর্ভে মুর্শীদ-এ-আজম হযরত মাওলানা শাহসূফী ছৈয়দ আবদুল মোন্য়েম ঈছাপুরী (র.) ১৯২৭ খ্রি. ২ ফেব্রুয়ারি, বাংলা ২০ মাঘ পৃথিবীতে শুভ আগমন করেন। তাঁর পূর্ব পুরুষগণ গৌড় নগর থেকে আগত ছৈয়দ হামিদ উদ্দিন গৌড়ীর বংশধর। তিনারা বাগদাদ থেকে প্রথমে দিল্লী, পরে দিল্লী থেকে গৌড় পরবর্তীতে চট্টগ্রাম এসে বসতি স্থাপন করেন। ছৈয়দ হামিদ উদ্দিন গৌড়ীর বংশধরদের মধ্যে একজন ফটিকছড়ি আজিম নগর গ্রামে এসে বসবাস করেন। এই বংশে আভির্ভূত হন গাউছুল আজম ছৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.) ও গাউছুল আজম ছৈয়দ গোলামুর রহমান মাইজভান্ডারী (ক.) উল্লেখ্য যে, মরহুম ছৈয়দ হামিদ উদ্দিন গৌড়ীর বংশধরদের একজন একই সময়ে নানুপুর গ্রামে এসে বসবাস করেন। তাঁরই বংশধর হযরত আবদুল মোন্য়েম ঈছাপুরী (র.)। তিনি বংশসূত্রে আওলাদে রসুল (সা.) আওলাদে গাউছুল আজম (র.) ও খান্দানে গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (ক.)। মুর্শীদ-এ-আজমের চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সদাচরণে তিনি তার আব্বাজান ও প্রিয় মুর্শীদ মাওলা-এ-আজম হযরত মাওলানা শাহসূফী ছৈয়দ আবদুচ্ছালাম ঈছাপুরী (ক.)’র প্রিয় পুত্র ছিলেন। তার দীর্ঘ জীবনে তিনি স্কুলে শিক্ষকতা ও সরকারি চাকুরিতে আত্ম নিয়োগ করেন। চাকরি থাকাকালীন তার মহান মুর্শীদের নির্দেশে তিনি চাকরিতে ইস্তফা দেন। চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাকী জীবন তিনি দরবারের খেদমতে নিজেকে উৎসর্গ করেন। ইসলামী চিন্তা চেতনায় ও মারফতের রহস্য সমৃদ্ধ দিক নির্দেশনামূলক বেশ কিছু কেতাব তিনি রচনা ও সংকলন করেন। তন্মধ্যে মীলাদুন্নবী (স.), মছনবী শরীফের কাব্যনুবাদ, ওজায়েফ ও আকুতি উল্লেখযোগ্য। হযরত আবদুল মোন্য়েম ঈছাপুরী ছাত্র জীবনে লেখাপড়া করেছেন খুব কষ্টের মধ্য দিয়ে। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তিনি বই কিনতে পারেননি। তাই তিনি বন্ধুর বাসায় গিয়ে বন্ধুকে পড়াতেন এবং নিজে লেখাপড়া করতেন। এভাবে তিনি ১৯৪২ সালে মেট্টিকুলার পাশ করেন। মুর্শীদ-এ-আজম হযরত ছৈয়দ আবদুল মোন্য়েম ঈছাপুরী (র.) সম্পর্কে মাওলা-এ-আজম হযরত ঈছাপুরী বলেছেন- আমার বড় মিয়া যদি ওয়াজ নছিয়ত করেন তাহলে জীবন ভর করতে পারবেন, আর মাওলানা সাহেবগণ যে টুকুই শিখেছেন সেই টুকুই বলতে পারবেন, বড় মিয়া জিন্দেগী কাটিয়ে দিতে পারবেন কিন্তু ওনার কথা শেষ হবে না। মুর্শীদ-এ-আজম হযরত আবদুল মোন্য়েম ঈছাপুরী (র.) তার মহান মুর্শীদের পাক কদমে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে ছিলেন, তার মুর্শীদের দয়ায় তিনি লাভ করেছেন খলিফা-এ-গাউছে মোকাররম তার প্রিয় মুর্শীদ মাওলা-এ-আজম হযরত ঈছাপুরী (ক.) খেলাফতের মাধ্যমে তাকে গদিনশীন করে যান। মাওলা-এ-আজম হযরত ঈছাপুরী (ক.) ওফাতের পর ত্বরীকার বিশাল দায়িত্ব পালন করেন তারই বড় সন্তান। তিনি পিতার পক্ষ থেকে ত্বরীকতের গুরু দায়িত্ব সুদীর্ঘ আটাশ বছর অত্যন্ত সফলতার সাথে পালন করেন, ঈছাপুরী দরবারকে আরো সুসজ্জিত করে দ্বীন ইসলামের খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। মুর্শীদ-এ-আজম হযরত আবদুল মোন্য়েম ঈছাপুরী (র.) ২১ সফর, ২১ পৌষ, ৪ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রি., শুক্রবার রাত ১০টায় আমাদেরকে নয়ন জলে ভাসিয়ে রাব্বুল আলামীনের আহবানে সাড়া দিয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন।
মাওলা-এ-আজম ঈছাপুরী (র.) ও গাউছুল আজম গোলামুর  রহমান মাইজভান্ডারী (ক.) এবং গাউছুল আজম আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.) উনাদের প্রেমে এত মশগুল ছিলেন, মুর্শীদ-এ-আজম ছৈয়দ আবদুল মোন্য়েম ঈছাপুরী (র.) তার ওফাতে প্রমাণ করে গেছেন। হযরত আবদুল মোন্য়েম ঈছাপুরী (র.) ওফাত হয়েছেন চন্দ্র মাসের ২১ তারিখ দিন ছিল, আবার রাত্রে হলো চন্দ্র মাসের ২২ তারিখ। হযরত ঈছাপুরী (ক.) ওফাত হয়েছেন চন্দ্র মাসের ২১ তারিখ এবং গাউছুল আজম গোলামুর রহমান মাইজভান্ডরী (ক.) ওফাত হয়েছেন চন্দ্র মাসের ২২ তারিখ। হযরত ছৈয়দ আবদুল মোন্য়েম ঈছাপুরী মিলন হলো এই দুই হাস্তীর মিলন দিনে। এটাকেই বলে “আশেক মাশুকের প্রেমের এমনি নিশানা”। এবার মুর্শীদ-এ-আজম ছৈয়দ আবদুল মোন্য়েম ঈছাপুরী (র.)’র মহান পবিত্র ৮৯তম জন্ম দিবস। এই উপলক্ষে হুজুর-পুর নূর (স.), আম্বিয়া (আ.), আউলিয়া (র.) ও মাওলা-এ-আজম ঈছাপুরী (ক.) এবং মুর্শীদ-আজম ছৈয়দ আবদুল মোন্য়েম ঈছাপুরী (র.) র্আওয়াহ্ পাকে ছাওয়াব রছানী’র উদ্দেশ্যে বার্ষিক ওরছ শরীফ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই মাহ্ফিলে সকলের খেদমত আল্লাহ দরবারে কবুল হোক। আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন