শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ক্যারিয়ার

সৃজনশীল পেশা প্রকাশক

| প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তামান্না তানভী : প্রবাদ আছে, ‘ইচ্ছা থাকিলে উপায় হয়।’ যেকোনো কাজে আত্মনিয়োগ করার পূর্বে সংকল্প বা পরিকল্পনা থাকা চাই। পরিকল্পিতভাবে কোনো কাজ শুরু করলে সে কাজে সাফল্য অবশ্যম্ভাবী। আপনি যদি প্রকাশক হতে চান তাহলে প্রথমে দৃঢ়ভাবে সংকল্প ও পরিকল্পনা নিয়ে সামনে অগ্রসর হোন।

যোগ্যতা
জীবন হচ্ছে সংগ্রামময়। পৃথিবীতে যারা যোগ্য, তারাই টিকে থাকেন। যেকোনো কর্মে অবশ্যই যোগ্যতার পরিচয় দিতে হবে। প্রকাশনা শিল্পে প্রকাশককে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা তো থাকতেই হবে। তা না হলে কী করে এ শিল্পকে তিনি পরিচালনা করবেন? ন্যূনতন এসএসসি থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী ব্যক্তিরাই বর্তমানে প্রকাশনা শিল্পে সম্পৃক্ত রয়েছেন। কেননা অশিক্ষিত ব্যক্তিবর্গ প্রকাশনা শিল্পে আত্মনিয়োগ করলেও তারা বেশিদিন টিকে থাকতে  পারেন না।

প্রকাশনার ধরন
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সাধারণত দুই ধরনের প্রকাশনা লক্ষণীয়। ক. পাঠ্যপুস্তক সংবলিত ও খ. সৃজনশীল। ‘জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’ (এনসিটিবি) ছাত্রছাত্রীদের জন্য ক্লাসের পাঠ্য বই প্রকাশ করে থাকে। সৃজনশীল প্রকাশনা বা ক্রিয়েটিভ প্রকাশনাগুলো বিশেষ করে মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ জীবনের বাস্তব ও জীবনধর্মী ঘটনাগুলো মনের মাধুরী মিশিয়ে ফুটিয়ে তোলেন পাঠক সমাজের কাছে। সৃজনশীল প্রকাশনী এদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা গল্প, নাটক ও উপন্যাসের মাধ্যমে পাঠক সমাজের কাছে তুলে ধরে। এছাড়া বাংলার ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়েও রচনা করে বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ বই।

পুঁজি ও বুক ম্যাকিং
যেকোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে পুঁজি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রকাশনা শিল্পে ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা দিয়ে অন্তত একটি সৃজনশীল বই প্রকাশ করতে পারেন। ন্যূনতম ৫-১০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে আপনি একটি ছোট পরিসরের প্রকাশনীর আত্মপ্রকাশ ঘটাতে পারেন, যা আপনি অন্যত্র কম্পিউটার কম্পোজ, প্রুফ-এডিটিং, ট্রেসিং, প্লেট মেকিং ও বাইন্ডিং করে একটি পরিপূর্ণ বই হিসেবে বাজারজাত করতে পারেন। এছাড়া আপনি একটি প্রকাশনা ফার্মও তৈরি করতে পারেন। যেখানে থাকবে কম্পিউটার সেকশন, রাইটার-এডিটরদের সেকশন। পর্যায়ক্রমে পুঁজি বাড়িয়ে উক্ত প্রকাশনীটি হাঁটি হাঁটি পা পা করে অনেক বড় শিল্প হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন।

বুক মার্কেটিং (বাজারজাতকরণ)
প্রকাশক হিসেবে আপনার প্রকাশিত বইটি প্রথমে আপনার নিজস্ব লাইব্রেরিতে ডিসপ্লে করে বিক্রয় করতে পারেন। এছাড়া বিভাগীয়, জেলা, থানা পর্যায়ে প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে পাইকারি মূল্যে বিক্রয় করতে পারেন। সৃজনশীল বই প্রকাশ করলে তা আপনি একুশের বইমেলায় স্টল নিতে পারেন কিংবা অন্য যেকোনো স্টলেও আপনার প্রকাশিত বই পাইকারি ও খুচরা মূল্যে বিক্রি ও ডিসপ্লে করতে পারেন।

যশ-খ্যাতি ও লাভ
একজন প্রকাশক হিসেবে আপনি যশ-খ্যাতি ও প্রতিপত্তির পাশাপাশি আর্থিকভাবেও লাভবান হবেন। বাংলাদেশের প্রথিতযশা দিকদর্শন প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আর. সি. পাল বলেন, ছাত্রজীবনেই আমি হ্যান্ড নোট লেখা শুরু করি, পরে তা প্রকাশনী আকারে রূপ দেই। দিন-রাত পরিশ্রম করে একাধিক প্রকাশনীর মালিক হয়েছি। কলেজ-ভার্সিটির শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে আমি পেয়েছি অভিনন্দন ও ভালোবাসা, সেই সাথে আর্থিকভাবেও হয়েছি লাভবান। আজিজিয়া বুক ডিপোর স্বত্বাধিকারী আলহাজ একরাম উল্লাহ দুলাল বলেন, প্রকাশনী দাঁড় করাতে প্রথমেই আমি ঝুঁকি নিয়েছি। ইসলামী ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে প্রকাশনা কাজে হাত দেই, তাতে আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে আমি বর্তমানে বেশ ভালো অবস্থানে আছি। ঢাকা মহানগরীতে বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছি, তার জন্য আমি দিন-রাত পরিশ্রম করেছি। এখন আমি স্বাবলম্বী হিসেবে দেশের একজন শিল্পপতি। এভাবে প্রকাশনা জগতে নিজেকে সম্পৃক্ত করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তরুণ ইঞ্জিনিয়ার মেহেদী হাসান, যিনি লেকচার পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী ম্যানেজিং ডিরেক্টর। প্রকাশনা শিল্পে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন জুপিটার পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী কায়সার-ই-আলম প্রধান। যিনি বর্তমানে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি।

বেকারত্ব দূরীকরণে
বাংলাদেশে বেকারত্ব দূরীকরণে প্রকাশনা শিল্প একটি মাইলফলক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এ পেশায় শিক্ষকদের পাশাপাশি কলেজ-ভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা সম্পৃক্ত হয়ে রাইটিং এডিটিং করে অর্থাৎ পার্ট টাইম জব করে অনেক মেধাবী ছাত্রছাত্রীই বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের জব করার জন্য প্রতিটি প্রকাশনীতেই শিফটিং সিস্টেম চালু আছে। এ সম্পর্কে এমবিএ’র ১ম বর্ষের ছাত্রী তামান্না রহমান বলেন, আমি এইচএসসি পরীক্ষার পর পরই দুই মাস একটি প্রকাশনীতে দৈনিক ৪-৫ ঘণ্টা লেখাজোকা করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা উপার্জন করেছি। একই সাথে ভার্সিটির ভর্তি কোচিং-এর প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রকাশনা শিল্প আমার পরিবারের দারিদ্র্য বিমোচনেও সহায়ক হয়েছে। বুয়েট শেষ বর্ষের স্টুডেন্ট রিভা নাজনীন বলেন, বর্তমানে একটি প্রকাশনীতে হোম রাইটার হিসেবে জব করছি, তাতে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা অনায়াসে অর্জন করতে পারছি। স্টুডেন্ট হিসেবে এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।
সর্বোপরি বলব, প্রকাশনা একটি শিল্প। আপনিও হতে পারেন একজন প্রকাশক। এতে করে এ শিল্প বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে উন্নতি ও বিকাশ ঘটাতে আপনিও নিজেকে সম্পৃক্ত করে জাতি গঠনে এগিয়ে আসতে পারেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md. Aslam Hafiz ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:২১ পিএম says : 0
Feb. 05, 2017 I have some Novels written by me, and more than hundred poems. Anybody can help me to publish in any way ? If somebody found,
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন