শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

দুপুরের পূর্বেই তালা ঝুলে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে

| প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা : সরকার বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিলেও বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হওয়ায় সরকারের আসল উদ্দেশ্যে ব্যাহত হচ্ছে। সরকারি নির্দেশ মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (সাপ্তহিক ছুটি ব্যতীত) প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা শ্রেণীকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা থাকলেও সেটা মানা হচ্ছে না। বছরের শুরুতে ভর্তির ওজুহাতে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জানুয়ারি মাসে ক্লাস হয়নি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষার কথা বলে বিদ্যালয় সাড়ে ৯টায় খুলে দুপুর ১টার পূর্বে বন্ধ করে দিচ্ছে। এ সুযোগে শিক্ষকেরা ব্যাপকভাবে কোচিং, প্রাইভেট বাণিজ্যে যুক্ত হচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষে  ছাত্রছাত্রী না থাকলেও কিংবা কম থাকলেও কোচিং সেন্টার, প্রাইভেট হোমগুলোতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এক ব্যাচে ৬০ থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে পাঠদান করছেন। সরকারের শিক্ষামন্ত্রণালয় যেসব প্রতিষ্ঠানে পাসের হার নিম্নগামী সেসব প্রতিষ্ঠানে ৬ ঘণ্টার বাইরে বিনামূল্যে পাঠদান করার কথা থাকলেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে রহস্যজনক কারণে তা মানা হচ্ছে না। ফলে তারা প্রাইভেট কোচিং বাণিজ্যকে আরো গতিশীল করছে। এ চিত্র গোদাগাড়ীর বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। একটি স্কুল থেকে ২/৪ জন শিক্ষক এসএসসি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন। বাকি শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মচারীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, কোচিং প্রাইভেট বাণিজ্যে যুক্ত হচ্ছেন। দেখার যেন কেউ নেই। অপরদিকে শিক্ষকদের প্রাইভেট কোচিং ব্যবসা বন্ধে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রশংসা কুড়ালেও এ নীতিমালার বাস্তবায়ন না থাকা, বিভিন্ন অজুহাতে প্রতিষ্ঠানে বছরের প্রথমদিক থেকে পূর্ণাঙ্গ ক্লাস না হওয়ায় ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক মহল দারুণভাবে হতাশ এবং শিক্ষার্থীরা কোচিং প্রাইভেটনির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পুনরায় জমজমাটভাবে প্রাইভেট, কোচিং ব্যবসা শুরু হয়েছে। শিক্ষকেরা শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে মনোযোগী না হয়ে প্রইভেট কোচিং ব্যবসায় বেশি মনোযোগী হওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা শ্রেণীকক্ষ ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট কোচিং-এ বেশি সময় কাটাচ্ছেন বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। ফলে অভিভাবকদের প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। এ কারণে রিকশাচালক, ভ্যানচালক, শ্রমিক, দিনমজুর হোটেল শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের অভিভাবকেরা পড়েছেন মহাবিপদে। মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হায়দার আলী বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ১ জানুয়ারি নতুন বই আনন্দ করা হয়ে ২ জানুয়ারি থেকে পূর্ণাঙ্গ ক্লাস হচ্ছে, ভালো ফলাফল অব্যাহত রয়েছে। ৩ জন শিক্ষক এসএসসিতে দায়িত্ব পালন করার পরে প্রতিদিন ৬ ঘণ্টা ক্লাস হচ্ছে। শিক্ষককেরা আন্তরিকভাবে ১টি করে অতিরিক্ত ক্লাস নিচ্ছেন কোনো প্রকার অসুবিধা হচ্ছে না। ভবনের অভাবে ছাত্রীদের পাঠদান কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। বাসুদেব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান বলেন, সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ক্লাস করার সরকারি নির্দেশ থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান এটা মানছে না দুপুরেই প্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়ে দিচ্ছেন ফলে শিক্ষার্থীরা কোচিং প্রাইভেট বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ছেন। শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে, বাল্যবিয়ে বাড়ছে, নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার। রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানের সময় হবে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কোনোভাবে এর ব্যতিক্রম ঘটানো যাবে না। যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারি নির্দেশ আমান্য করে দুপুরের পূর্বে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না। ইতোপূর্বে এসব অনিয়মে জড়িত থাকার কারণে গোদাগাড়ীর বেশকিছু প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। গোদাগাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শামসুল কবীর এ প্রসঙ্গে বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানে এখনো পূর্ণাঙ্গ ক্লাস হয় না তদন্ত করা হবে। কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ৬ ঘণ্টা পাঠদান না করে তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিক্ষকেরা কোনোভাবেই প্রাইভেট, কোচিং বাণিজ্যে যুক্ত থাকতে পারবেন না। প্রাইভেট, কোচিং বাণিজ্যে যুক্ত শিক্ষকদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন