বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

গুদামের অভাবে হাজার হাজার বস্তা ইউরিয়া খোলা আকাশের নিচে

প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জয়পুরহাট থেকে মুহাম্মদ আবু মুসা ঃ চলতি ইরি-বোরো রোপণ ভরা মৌসুমে জয়পুরহাটে হাজার হাজার বস্তা রাসায়নিক ইউরিয়া সার খোলা আকাশের নিচে রেখে ত্রিপল ও পলিথিন দিয়ে ঢেকে রোদ-বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা চলছে। উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জয়পুরহাট জেলা খাদ্যশস্যে উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে সারা দেশে খাদ্যের জোগান দিলেও এ জেলায় ইউরিয়া সার রাখার বড় কোনো গুদাম নেই। বাধ্য হয়ে গুদামের অভাবে দিনের পর দিন রাসায়নিক ইউরিয়া সার খোলা আকাশের নিচে রাখতে হচ্ছে।
জয়পুরহাট শহরের সদর উপজেলা চত্বরের পূর্ব পাশে বিএডিসির বাফার গুদাম অবস্থিত। এ গুদামে ধারণ ক্ষমতা মাত্র দুই হাজার মেট্রিক টন। বাফার সার গুদাম সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান ভরা বর্ষার মৌসুমে ওই গুদামে গাদাগাদি করে সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার রাখা হলেও জায়গার অভাবে খোলা আকাশের নিচে গুদামের পশ্চিম পাশে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় রয়েছে আরও ৩ হাজার মেট্রিক টন সার।
গত এক মাস থেকে ৩ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার অর্থাৎ ৫০ কেজি ওজনের ৬০ হাজার বস্তা গুদামের সঙ্গে লাগোয়া উঠানে খোলা আকাশের নিচে ওই সার রাখা হয়েছে। রোদ ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা করার জন্য ত্রিপল ও পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। জয়পুরহাট বাফার গুদাম সূত্র আরও জানায়, জয়পুরহাটের এ গুদাম থেকে নওগাঁ জেলার পতœীতলা ৭১২.৫০ এবং ধামইরহাট উপজেলায় ২৪৩ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমন মৌসুমে বরাদ্দ হয়। এখান থেকে ওই দুই উপজেলা ডিলাররা সার উত্তোলন করেন।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন জয়পুরহাট জেলা ইউনিটের সভাপতি ও জয়পুরহাট চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের সভাপতি আবদুল হাকিম মÐল জানান, দীর্ঘদিন থেকে জয়পুরহাটবাসী সার গুদামের দাবি জানিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। উত্তরবঙ্গের শস্যভাÐার হিসেবে এ জেলা পরিচিত হলেও সরকার গুরুত্বপূর্ণ এই অতি জরুরি সার গুদামটি তৈরি করছে না। খোলা আকাশের নিচে রাসায়নিক ইউরিয়া সার থাকায় সার বস্তাপ্রতি দেড়-দুই কেজি ওজন কমে যায় বলে তিনি বলেন। এতে ৫০ কেজি ওজনের বস্তা কিনে খুচরা বিক্রি করলে ডিলাররা ক্ষতিগ্রস্ত হন।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি আমন মৌসুমে প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলায় ইরি এবং বোরো মৌসুম ও গ্রীষ্মকালীন সবজিসহ জয়পুরহাট জেলার ৫টি উপজেলা ও নওগাঁ জেলার দুটি উপজেলায় ইউরিয়া সার প্রয়োজন হয় ৫০ হাজার মেট্রিক টন।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এ জে এম ছাব্বির ইবনে জাহান জানান, জেলায় বাফার গুদাম অর্থাৎ আপতকালীন ইউরিয়া সার মজুদ রাখার জন্য ১০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার একটি গুদাম জরুরি প্রয়োজন। গুদাম নির্মাণের জন্য কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার তার পূর্বের কর্মকর্তারা আবেদন করেছেন। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ইতিমধ্যে দেশের কয়টি জেলার বাফার গোডাউন নির্মাণের বরাদ্দ হয়েছে অথচ জয়পুরহাট জেলায় বাফার গোডাউন অত্যন্ত জরুরি হলেও এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবারও আবেদন জানানো হবে।
জয়পুরহাট জেলা বিএডিসি বাফার গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, বর্তমানে এ গুদামে ২ হাজার মেট্রিক টন সার রাখা যায়। কিন্তু প্রয়োজনীয়ের তুলনায় এ গুদাম একেবারে ছোট। পার্শ্ববর্তী জেলায় এবং উপজেলাগুলোতে ৮-১০ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার গুদাম রয়েছে অথচ জয়পুরহাট একটি জেলা শহর হলেও এখানে মাত্র দুই হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতার একটি পুরনো গুদাম ঘর রয়েছে।
নানা প্রতিবন্ধকতার পরও গুদামে সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিক টন সার রাখা হয়েছে। বাকি ৩ হাজার অর্থাৎ ৬০ হাজার বস্তা সার গুদামের অভাবে খোলা আকাশে নিচে রাখা হয়েছে। এ সার এক মাস থেকে এভাবে রয়েছে। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে এ সার স্থানীয় ডিলারদের মাঝে বরাদ্দ অনুসারে ডেলিভারি দেওয়া না গেলে রোদে সারের গুনগতমান অনেকাংশে নষ্ট হয়ে যাবে। তিনি বিষয়টিতে সংশ্লিষ্টের কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন