বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর ৫ খুন

এজাহারভুক্ত আসামি নাজমা গ্রেফতার, ৫ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জে একই পরিবারের চাঞ্চল্যকর ৫ খুন মামলার আসামি নাজমার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল মঙ্গলবার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালতে ডিবি পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ড চাইলে তিনি ৫ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কোর্ট ইন্সপেক্টর হাবিবুর রহমান এ রিমান্ডের সত্যতা নিশ্চিত করেন। ওদিকে সোমবার বিকেল সোয়া পাঁচটায় কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আবুল খায়ের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচএম শফিকুল ইসলামের আদালতে আসামি মাহফুজকে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এর পূর্বে কোর্ট দারোগা গোলাম হোসেন মামলার বিবরণ উপস্থাপন করার পাশাপাশি কোর্ট ইন্সপেক্টর হাবিবুর রহমান নির্মম হত্যাকা-ের বিবরণ আদালতকে জানান। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে ৫ খুনের আসামি মাহফুজের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে ৫ খুন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নাজমাকে গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে ডিবি পুলিশ। মঙ্গবার গভীর রাতে শরিয়তপুর জেলার ডামুড্যা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। নারায়ণগঞ্জের বাবুরাইলের নৃশংস ৫ খুনের ঘটনায় নাজমা ও শাজাহানকে খুঁজছিল পুলিশ। তাদের গ্রেফতারে ইতোমধ্যে সদর মডেল থানা এবং জেলা ডিবি পুলিশের একাধিক টিম রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাহিরে একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়।
গত সোমবার রিমান্ডে আনা ভাগিনা মাহফুজের দেয়া তথ্য এবং মামলার বাদী নিহত তাসলিমার স্বামী শফিকুলের বক্তব্যের ভিত্তিতে নাজমা এবং শাজাহানকে গ্রেফতারে পুনরায় অভিযান চালিয়ে মঙ্গবার গভীর রাতে শরিয়তপুর জেলার ডামুড্যা গ্রাম থেকে নাজমাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও মামলার এজাহার ভুক্ত অপর অন্যতম আসামি শাহজাহানকে পাওয়া যায়নি তবে তাকে গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যহত রয়েছে বলে ডিবি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ পাওনা টাকার জটিলতা নিয়ে এ খুনের ঘটনা ঘটতে পারে এমন ধারণা থেকে নাজমা এবং শাহজাহানকে মামলার আসামি করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে নাজমা গ্রেফতারের পর শাজাহানকে গ্রেফতার করতে পারলে নৃশংস ৫ খুনের ক্লু উদ্ধার হতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার শহরের বাবুরাইল এলাকার আশেক আলী ভিলার নীচতলায় সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যের কোন এক সময় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা গৃহকর্তা শফিকের বাসায় অবস্থান করে নির্বিগ্নে গৃহকর্তী তাসলিমা (৩৫), তার শিশু সন্তান শান্ত (১০), সুমাইয়া (৭), ভাই মোরশেদুল (২২) ও ঝাঁ লামিয়া বেগম (২০) কে শ্বাসরোধ ও পিটিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে হত্যাকা- নিশ্চিত করে বাসায় নতুন তালা দিয়ে পালিয়ে যায়।
ঘটনার পর গৃহকর্তা শফিক ও পরিবারের লোকজন মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয়ে আশেক আলী ভিলায় এসে বাড়িওয়ালার অনুমতি নিয়ে তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে পাঁচজনের লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয় । নির্মম ও লোমহর্ষক এই হত্যাকা-ের খবর ছড়িয়ে পরলে সারাদেশে তোলপড়ের সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় গত রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করে গৃহকর্তা শফিক। মামলায় শফিক নিজ ভাগিনা মাহফুজ ও রাজধানীর কলাবাগান এলাকার নাজমা, শাহজাহান, বাহাদুর, বাদশা ও বাদলসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেন।
এজাহারে যা বলেছেন বাদী শফিকুল
নিহত তাসলিময়ার স্বামী শফিকুল ইসলামের করা মামলায় বলা হয়েছে, ১০ বছর ধরে ঢাকার জনৈক জিয়ারুল হাসানের গাড়ির চালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন শফিকুল ইসলাম। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার তিনি শহরের বাবুরাইলের বাসায় আসতেন। তবে গত ১৬ই জানুয়ারি রাত ৮টা ৪০ মিনিটে তার ছোট ভাই শরীফ তার মোবাইলে ফোন করে বিষয়টি অবহিত করে, কে বা কারা আমাদের বাবুরাইলের ফ্ল্যাটে তালা মেরে পালিয়ে গেছে। পরে আমরা তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দুটি কক্ষের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় ৫ জনের মৃতদেহ দেখতে পাই। আমি পরস্পর জানতে পারি, আমার স্ত্রী তাসলিমার কাছে ঢাকার কলাবাগানের নাজমা ও শাহজাহান নামের একাধিক ব্যক্তি প্রায় ১২ লাখ টাকা পেত, যা মাসিক চক্রবৃদ্ধি সুদে নেয়া ছিল। ওই টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদাররা প্রায় সময় টাকা পরিশোধের জন্য হুমকি দিত। এমনকি নাজমাও মাঝেমধ্যে আমার পরিবার ও সন্তানদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবে বলে হুমকি দিতো। আমার শ্যালক মোর্শেদুল ওরফে মোশাররফের কাছেও টাকা পেত। টাকা-পয়সা পাওয়ার সুবাধে পাওনাদার ব্যক্তিরা আমার বাসায় যাওয়া-আসা করতো এবং এ ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করতো।
এ ছাড়া আমার ভাগনে মাহফুজ আমার ছোট ভাই শরীফের স্ত্রী লামিয়ার সঙ্গে ঢাকায় বসবাসের সময় যৌথ আবেদন করলে পরে মাহফুজকে আমরা ঢাকায় রেখে নারায়ণগঞ্জ চলে আসি। ওই ভাগনে মাহফুজ আবার নারায়ণগঞ্জ আসে এবং আমাদের বাসায় এসে শরীফের স্ত্রী লামিয়ার সঙ্গে একই ধরনের ব্যবহার ও আচরণ করতো। এতে আমার ভাইয়ের স্ত্রী লামিয়া অসন্তুষ্ট হয়। আমার স্ত্রী তাসলিমা ও ছোট ভাই শরীফের কাছে লামিয়া বিষয়টি প্রকাশ করে দেয়। এতে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে ওই ব্যক্তিসহ (মাহফুজ) অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা একই উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে শনিবার রাত ৮টা ২০ মিনিট পর্যন্ত যে কোনো সময়ে শক্ত কোনো ভোঁতা অস্ত্র দ্বারা গুরুতর জখম ও গলায় ফাঁস লাগিয়ে ৫ জনকে হত্যা করেছে। ঘটনার পর থেকে তাসলিমার স্ত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল সেট ও শ্যালক মোর্শেদুল ওরফে মোশাররফের মোবাইল ফোন পাওয়া যাচ্ছে না।
মামলায় উল্লেখ করা তাসলিমার আর্থিক লেনদেন ও লামিয়ার সঙ্গে মাহফুজের অনৈতিক সম্পর্কের চেষ্টা- এ দুই পয়েন্ট নিয়ে এগোচ্ছে মামলার তদন্ত সংস্থা। তবে পারিবারিক বিষয়টিও মাথায় রেখেছে পুলিশ।
সদর মডেল থানার ওসি আবদুল মালেক বলেন, পুলিশ তদন্তের স্বার্থে অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করছে। জিজ্ঞাবাদ শেষে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে বাকিদের ছেড়ে দেয়া হবে। ঘটনার পর থেকে পুলিশ নিহত তাসলিমা বেগমের খালাতো ভাই দেলোয়ার হোসেন, শাহজাদা, ভাগনে মাহফুজ, নিহত মোর্শেদের হোসিয়ারির কর্মচারী রাসেল, নয়ন, নজিবুন ও সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন