রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে মশার অত্যাচারে জনজীবন অতিষ্ঠ। কোটি কোটি টাকা বরাদ্দের পরও মশা নিধন হচ্ছে না। মশা তাড়ানোর কয়েল জ্বালিয়েও নিস্তার মিলছে না। এদিকে মশার কারণে ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। দৈনিক ইনকিলাবের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীতে মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনার কথা থাকলেও তা কার্যত বন্ধ। অভিযোগ উঠেছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মশা নিধনের জন্য বরাদ্দ টাকার সিংহভাগই হাাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্র। একই অবস্থা চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট ও কুমিল্লায়। চট্টগ্রাম মহানগরীতে অভিজাত এলাকা থেকে সর্বত্রই মশার উপদ্রব আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মশার উপদ্রব খুলনা নগরের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। মশার যন্ত্রণায় সিলেটবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও টনক নড়ছে না সিলেট সিটি কর্পোরেশনের। মশার যন্ত্রণা কুমিল্লাবাসীর কাছে অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। রাজধানীতে মশা বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত রাজধানীর আবদ্ধ পানি, কচুরিপানা, নর্দমা পরিষ্কার এবং অ্যাডাল্টিসাইড ওষুধ স্প্রে করে থাকে সিটি কর্পোরেশন। এবারে তা করা হয়নি। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন বিশেষ কোনো পরিচ্ছন্নতার অভিযানও পরিচালনা করেনি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মশক নিধনে গৃহীত নানা কর্মসূচির কথা বললেও মশক নিধনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না, বরং বরাদ্দ ওষুধ সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট বিক্রি করে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
মশা বৃদ্ধির নানা কারণ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে শহর, বন্দর আর গ্রামের অবস্থা ভিন্নতর। প্রধানত আলোচনায় শহরের কথাই উঠে আসে, তাই শহরকেন্দ্রিক ভাবনাই প্রাধান্য পায়। আবদ্ধ পানি, উন্মুক্ত ড্রেন ও যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা রাজধানীতে মশার বংশ বিস্তারের প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করছে। এটা নতুন কোনো তথ্য নয়। অপরিচ্ছন্ন নগরীই যে মশা বিস্তারের জন্য দায়ী, সে কথা সংশ্লিষ্টদেরও অজানা নয়। মশার ওষুধ নিয়ে যে ছিনিমিনি হয় তাও নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে মশার ওষুধের সাথে যে মাত্রায় কেরোসিন দিতে হয়, সেটি আদৌ দেয়া হয় কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। ভুক্তভোগীমাত্রই স্বীকার করবেন যে, মশক নিধনে ওষুধ কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। প্রকৃত প্রস্তাবে মশক নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মশার লার্ভার বিস্তার রোধে আগে থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। এ কার্যক্রম এখন দেখা যায় না। এছাড়া মশক নিধনের বেলাতেও বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ বিশেষ স্থান ও এলাকায় যথারীতি ও নিয়মিত মানসম্পন্ন ওষুধ ছিটানো হলেও অন্য এলাকায় তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। এই বাস্তবতায় মশক নিধনে ক্রাস প্রোগ্রাম হাতে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, সুষ্ঠু তদারকি এবং সমন্বিত ব্যবস্থাপনা ছাড়া মশক নিধনে কার্যকর সুফল পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এ বছর এমন একসময়ে মশার উপদ্রব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে যখন মাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে। সামনে আরো পরীক্ষা আসছে। মশার উপদ্রবে মসজিদে মুসুল্লিদেরও নামাজ পড়া বা অন্য কোনো এবাদত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মশা নিধন ছাড়া এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় নেই। সে কারণেই সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। এখন সিটি কর্পোরেশনগুলোর জনবল কম নয়। সেইসাথে জনসাধারণের সচেতনতাও অত্যন্ত জরুরি। বাড়ির আশপাশ পরিষ্কারসহ সার্বিক পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেয়া অপরিহার্য। কোনো বিশেষ সময়ে বিশেষ ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি পালনের চেয়ে বছরব্যাপী সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি চালিয়ে নেয়া মশক নিধনে কার্যকর সুফল দিতে পারে। মশাকে কেন্দ্র করে এক ধরনের বাণিজ্যের কথাও চালু রয়েছে। মশক বৃদ্ধির সাথে কয়েলের বিক্রি বেড়ে যায়। যাইহোক না কেন, একটি আধুনিক নগরী গড়ে তুলতে সার্বিক পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেয়া গেলে তার প্রভাব মশক নিধনেও পড়তে বাধ্য। সরকারি-বেসরকারি সকল মহলের সমন্বিত ও আন্তরিক উদ্যোগের মাধ্যমে নগরবাসী তথা দেশবাসী মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাবে, এটাই প্রত্যাশিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন