শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদিগন্ত

নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে কিছু কথা

| প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহিউদ্দিন খান মোহন : অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পন্ন হয়েছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারী রাত দশটায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব এক সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি র্কতৃক নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা জানিয়েছেন। সাবেক সচিব কে এম নূরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়েছে। অন্য নির্বাচন কমিশনাররা হলেন- সাবেক অতেরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম কবিতা খানম এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবিত নামের ভিত্তিতে সার্চ কমিটির সুপারিশকৃত ব্যক্তিদের মধ্য থেকেই নতুন নির্বাচন কমিশন সদস্যদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
নব ঘোষিত নির্বাচন কমিশনকে স্বাগত জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ৭ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন। ৮ ফেব্রুয়ারি দলটি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানোর কথা। তারা কি প্রতিক্রিয়া জানাবে তা এ নিবন্ধ লেখা অবধি (৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর পর্যন্ত) জানা না গেলেও প্রায় প্রতিটি পত্রিকা তা ‘নেতিবাচক’ হবে বলে আগাম মন্তব্য করেছে।
বেশ কিছুদিন ধরে দেশে প্রধান আলোচ্য বিষয় হিসেবে স্থান দখল করে আছে নির্বাচন কমিশন। অফিস-আদালত, চায়ের দোকান, বাস-লঞ্চ, পাড়া-মহল্লার ক্লাব, মোট কথা যেখানে দু’চার দশজন লোক একত্রিত হয়, সেখানেই সবকিছুকে দূরে সরিয়ে আলোচনার একমাত্র বিষয় হয়ে দাঁড়ায় আগামী নির্বাচন কমিশন। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গঠিত সার্চ কমিটি কাদের নাম প্রস্তাব করবে, রাষ্ট্রপতি কাদেরকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেবেন, নতুন নির্বাচন কমিশন কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে, কতটুকু শক্তিশালী হবে, কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে কী না- এন্তার বিষয় নিয়ে সর্বত্র ছিল ব্যাপক আলোচনা। বলা নিষ্প্রয়োজন, এসব আলোচনা একেবারে নিরর্থক নয়; যদিও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন বা নতুন নির্বাচন কমিশনের কর্মকান্ডে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলার সুযোগ এসবের নেই। কেননা, এসব আলোচনার মর্মকথা তাদের কাছে কখনোই পৌঁছে না; যারা নির্বাচন কমিশন গঠন বা সে কমিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হোন। তবে, জনমত বলে যে শব্দটি আছে, তাকে যদি দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ ধর্তব্যের মধ্যে নেন, তাহলে এসব ‘পথ আলোচনা’র গুরুত্ব কম নয়। কেননা, পত্র-পত্রিকার সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয় কিংবা টিভি চ্যানেলের টক শো’তে ওইসব আলোচনারই প্রতিধ্বনি শোনা যায়। কারণ, যারা পত্র-পত্রিকায় লেখেন বা টিভিতে আলোচনা করেন, তারা সাধারণ মানুষের মনোভাব বা প্রত্যশার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেন।
সার্চ কমিটি দেশের ৩১টি রাজনৈতিক দলের কছে পাঁচটি করে নাম চেয়েছিল নির্বাচন কমিশনের সদস্য করার জন্য। তন্মধ্যে ২৫টি রাজনৈতিক দল নাম জমা দিয়েছিল। দু’টি দল কোনো নাম না পাঠিয়ে কিছু প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। বাকিরা সার্চ কমিটির চিঠির কোনো জবাবই দেয়নি। যে দু’টি রাজনৈতিক দল নাম পাঠায়নি, সে দু’টি হলো- বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি (সিপিবি) এবং জাতীয় সমাজতন্ত্রিক দল (জেএসডি)। দল দু’টি নাম না পাঠানোর যুক্তিও তুলে ধরেছে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে। সিপিবি বলেছে- কোনো রাজনৈতিক দল যদি কোনো নাম সুপারিশ করে, সে নাম ‘ডিসকোয়ালিফাই’ করা উচিত। আর জেএসডি বলেছে-সরকার ইচ্ছা করলে সাত দিনের মধ্যে উচ্চকক্ষ গঠনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিধান করে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের বিধান করতে পারে। তাই আমরা পাঁচ জনের নাম প্রস্তাব করে রাষ্ট্রপতিকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিতর্কিত ও বিব্রত করতে চাই না।
অনেকেই মনে করেন, সিপিবি এবং জেএসডি-ই সঠিক চিন্তা ও কাজটি করেছে। কারণ, যে দলই যত নাম প্রস্তাব করুক না কেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি এবং সাংবিধানিক বিধান মোতাবেক রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন। ফলে সার্চ কমিটির আহ্বান মোতাবেক রাজনৈতিক দলগুলোর নাম জমা দেয়াটা এক ধরনের ‘উরুং চুরুরং’ খেলা বৈ কিছু নয়। এ ক্ষেত্রে সিপিবি যে কথাটি বলেছে সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অপছন্দের লোকদের নাম কখনোই পাঠাবে না। যাদেরকে তাদের ‘আপনজন’ মনে হয়েছে, তারা তাদের নামই পাঠিয়েছে এটা ধরে নিতে হবে। আর রাজনৈতিক দলগুলোর পছন্দের লোকেরা সংশ্লিষ্ট দলের প্রতি যে দুর্বল থাকবেন না, তারই বা নিশ্চয়তা কি? সরকারি কিংবা বেসরকারি চাকরির বিজ্ঞাপনে অনেক সময় লেখা হয়- ‘কোনো প্রকার সুপারিশ বা তদবির প্রার্থীর অযোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে’। তো, নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে যারা দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সুপারিশ কেন ‘অযোগত্যা’ বলে বিবেচিত হবে না ?
রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন যে, সার্চ কমিটি যে ক’জন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে যে আলোচনা করেছে, সেটাই যথেষ্ট ছিল। দরকার মনে করলে তাদের কাছ থেকেই পরবর্তী নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের নামের প্রস্তাব নেয়া যেতো। সেটাই হতো যুক্তিযুক্ত। রাজনৈতিক দলের কাছে নাম চেয়ে সার্চ কমিটি নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক একটি গন্ধ সংযুক্ত করে ফেলেছে।
সার্চ কমিটির আহ্বান অনুযায়ী দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিও পাঁচটি নাম পঠিয়েছিল। কোনো কোনো পত্রিকায় সেসব নাম ছাপাও হয়েছিল। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল বলছেন যে, সার্চ কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে নাম পাঠানো ঠিক হয়নি বিএনপি’র। কেননা, তাদের বোঝা উচিত ছিল তাদের প্রস্তাবিত নাম গ্রহণ করার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ‘বিশ^স্ত সূত্রের’ বরাত দিয়ে বিএনপি’র প্রস্তাবিত যেসব নাম পত্রিকায় এসেছে তারা সরকারি দলের অপছন্দের লোক। ফলে রাষ্ট্রপতি ওইসব নাম নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে সেগুলো প্রথম বিবেচনাতেই বাতিল হয়ে যাবার সম্ভাবনা শতভাগ। তাছাড়া নাম পাঠানোর সিদ্ধান্তটি বিএনপি’র সার্চ কমিটি সংক্রান্ত অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ, সার্চ কমিটি গঠনের পর বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করেছিল এই বলে যে, ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির পাঁচজনই বিতর্কিত। ঘোষিত সার্চ কমিটি নিয়ে দলটি তাদের ক্ষোভ ও হতাশার কথাও গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। তারা এও বলেছিল যে, ঘোষিত সার্চ কমিটিতে তারা আশার আলো দেখছে না। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন ‘যে সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছে, তারা কী করবেন, এটা সম্পর্কে আমাদের ধারণা প্রায়ই স্পষ্ট। সে জন্য আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে নতুন করে কোনো আশা দেখতে পাচ্ছি না।’ (যুগান্তর, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭)।
তো, যে সার্চ কমিটি তারা প্রত্যাখ্যান করলেন, যেটিকে বললেন বিতর্কিত এবং ওই কমিটি কী করবে তাও তাদের জানা আছে- সে কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে নাম পাঠানোটা কতটুকু যৌক্তিক হয়েছে, এ প্রশ্নকে তো উড়িয়ে দেয়া যাবে না। যাকে বলা হচ্ছে ‘অগ্রহণযোগ্য’ তার কাছেই নিজেদের প্রস্তাব গ্রহণের জন্য পাঠানো কি স্ববিরোধিতা নয়? বিএনপি যদি সার্চ কমটিকে প্রত্যাখ্যান না করতো, তাহলে নাম পাঠালে প্রশ্ন উঠত না। প্রত্যাখ্যাত কমিটির কাছে নাম পাঠিয়ে রাজনীতির দাবার কোটে বিএনপি কী রাজনৈতিক চাল দিলো তা অনেকেরই বোধগম্য হচ্ছে না। দলটি যে এখন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছে, এটা তার একটি বড়ো প্রমাণ। আর এ কারণেই দলটি এখন কোনো সিদ্ধান্তেই স্থির থাকতে পারছে না, আগের সিদ্ধান্তের সঙ্গে থাকছে না পরের সিদ্ধান্তের মিল। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এমন পরিস্থিতি শুভ লক্ষণ নয় বলেই বিজ্ঞজনেরা বলে থাকেন।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীদের কথা কৌতুককর বলেই মনে হচ্ছে অনেকের কাছে। তারা বলেছিলেন- রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তারা তাতে পূর্ণ সমর্থন দেবেন। সার্চ কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে তারাও পাঁচটি নাম পাঠিয়েছিল। রাজনৈতিক বিষয়ে সচেতন লোকজন বলছেন যে, রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের প্রতি আওয়ামী লীগ তো সমর্থন জানাবেই। কারণ, রাষ্ট্রপতি তো তাদের সিদ্ধান্তকেই শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করবেন! প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে যে পরামর্শ দেবেন তা যে আওয়ামী লীগের স্বার্থ বা সিদ্ধান্তের বিরোধী হবে না সেটা তো বলাই বাহুল্য। তো ‘রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তকে আমরা মেনে নেব’- এ কথা জোর গলায় বলতে তাদের অসুবিধা থাকার কথা নয়। লক্ষণীয় হলো- তারা তাদের সে কথা রেখেছেন। নতুন নির্বাচন কমিশন ঘোষণার প্রায় সাথে সাথে তারা সেটাকে সমর্থন জানিয়েছেন।
এ দিকে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য ‘সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন প্রণয়নে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না’- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দের করা রিট পিটিশনের প্রাথমিক শুনানী শেষে গত ৩১ জানুয়ারি এ রুল জারি করা হয়। রুলে চার সপ্তাহের মধ্যে নিবাচন কমিশন, আইন সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সংসদ সচিবালয়কে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। রিট পিটিশনে ইউনূস আলী আকন্দ নির্বাচন কমিশনের নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠনকে সাংবিধান বিরোধী ও অবৈধ আখ্যায়িত করে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলের আবেদন করেছেন।
ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের বিষয়টি এবার সর্বমহলেই গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সংবিধানে এ সম্পর্কে পরিষ্কার নির্দেশনাও আছে। বিস্ময়কর বিষয় হলো, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেনি। আওয়ামী লীগ কেন এ প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেল বা তাদের হাতে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আইন প্রণয়নের দিকে কেন গেল না, সেটা বোঝা গেলেও বিএনপি এ বিষয়ে কেন সোচ্চার হলো না সেটা স্পষ্ট হলো না। অথচ বির্তক এবং জটিলতা এড়াতে নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি স্থায়ী আইন প্রণয়নের দাবিই হওয়া উচিত ছিল তাদের প্রধান এজেন্ডা। প্রকৃত পক্ষে বর্তমান সংসদে আইন প্রণীত হলে তাতে বিএনপি অংশ নিতে পারবে না- এ বিবেচনা থেকেই হয়তো তারা এ বিষয়ে কোনো রকম উচ্চবাচ্য করেনি।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন কীভাবে হবে এবং তা শেষ পর্যন্ত কেমন হবে, তা অনেকেই অনুমান করতে পেরছিলেন। রাষ্ট্রপতি যে প্রধানমন্ত্রী তথা ক্ষমতাসীন দলের পছন্দের বাইরে কাউকে পছন্দ করতে পারবেন না এটা সবাই নিশ্চিত ছিলেন। গত ৩১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগও তাদের পছন্দের পাঁচ জনের নাম সার্চ কমিটির কাছে জমা দিয়েছিল। কেউ কেউ তখন বলেছিলেন যে, আওয়ামী লীগ হয়তো দুটো তালিকা দু’জায়গায় জমা দিয়েছে। একটি গোপনে রাষ্ট্রপতির কাছে, অন্যটি প্রকাশ্যে সার্চ কমিটির কাছে। রাষ্ট্রপতির কাছে যেটা পাঠানো হয়েছে, তিনি সেটাই ঘোষণা করবেন। নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে এমন শুভংকরের ফাঁকির আশঙ্কা একেবারে অমূলক ছিল বলে উড়িয়ে দেয়া যাবে না। নাহলে ১৯৯৬ সালের ‘জনতার মঞ্চে’র একজন সংগঠককে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করার আগে রাষ্ট্রপতি দ্বিতীয়বার ভাবতেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন সদস্যদের নাম সুপারিশের জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সার্চ কমিটি যেখানে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষের লোকদের দ্বারা গঠিত হয়েছে, সেখানে ওই কমিটি নিরপেক্ষ ইসি নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবে এমনটি আশা করা ছিল বাতুলতা মাত্র।
নতুন ইসি গঠন নিয়ে অনেক কথা চালাচালি হয়েছে, সরকার ও বিরোধী দল পরষ্পরের প্রতি বাক্যবান নিক্ষেপ করেছে, মঞ্চস্থ হয়েছে নানাবিধ নাটক। বিএনপি কখনো আশাবাদী হয়েছে, আবার কখনো সংশয়ে ভুগেছে। তবে, সরকারের ইচ্ছানুযায়ী সরকারি দলের প্রিয় ও পছন্দের লোকদের ঠাঁই হবে নতুন নির্বাচন কমিশনে- এ মন্তব্য যারা করেছিলেন, তারা যে খুব একটা ভ্রান্ত ছিলেন তা বলা যাবে না। কেননা, নির্বাচন কমিশন গঠনের আগ পর্যন্ত মাঝখানে যা হয়েছে, তার সবই ছিল লোক দেখানো, আই ওয়াশ মাত্র। এ প্রসঙ্গে বিদায়ী সিইসি কাজী রকীব উদ্দিনের একটি মন্তব্য এখানে উল্লেখযোগ্য। কয়েকদিন আগে তিনি বলেছেন- ‘আগামী নির্বাচন কমিশনও আমাদের মতোই হবে।’ সিইসি রকীব উদ্দিনের অনেক কথার সমালোচনা করলেও সচেতন মহল তার এ মন্তব্যকে যথার্থ বলেই মনে করছেন। প্রচুর হাঁকডাক আর প্রচন্ড শব্দে ঢাকঢোল পিটিয়ে যে নির্বাচন কমিশন অবশেষে ঘোষিত হলো, তা যে রকীব কমিশনের নবতর সংস্করণ হবে তার আলামত ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। সে সব নিয়ে বারান্তরে আলোচনার ইচ্ছে রইলো।
য় লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
হায়দার ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ২:৪২ পিএম says : 0
লেজে গোবরে অবস্থা!!
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন