শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভিয়েতনামের ভুতুড়ে শহর : মৃতেরা আছে যেখানে রাজকীয় হালে

প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মৃতেরা আছে সেখানে রাজকীয় হালে। সেই শানশওকতের কাছে জীবিত অনেক ধনকুবেরের জীবনও নস্যি। তবে অনেকের কাছেই শহরটি ভুতুড়ে বলে পরিচিত। আসলে তা মৎস্যজীবীদের ছোট্ট শহর, যা এক সময় ভিয়েতনামের রাজরাজড়াদের রাজধানী ছিল। এএফপির প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে সেই হিউ শহরের কাহিনী। হিউ শহরে ভিয়েতনামের সাবেক স¤্রাটদের সমাধি রয়েছে। রয়েছে স্থানীয় লোকজনের পূর্বপুরুষের সমাধি। এসব সমাধি অনেক অর্থ ঢেলে জাঁকালোভাবে সাজানো হয়েছে। এখন তা ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ এই ভুতুড়ে নগর। মূলত প্রাচুর্যময় এসব সমাধির জন্যই শহরটি ভুতুড়ে বলে নাম কুড়িয়েছে। শহরটি ১৮০২ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ভিয়েতনামের রাজধানী ছিল। এখানে দেশটির সাবেক শাসকদের দর্শনীয় সমাধি রয়েছে। হিউ শহরের পাশের একটি গ্রামের নাম ব্যাং। এই গ্রামের জেলেরা সমাধি তৈরির ক্ষেত্রে দেশটির ২১ শতকের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। লোকজন তাদের পরিবার ও স্বজনদের চিরনিদ্রার স্থানের জন্য ৭০ হাজার ডলার পর্যন্ত ব্যয় করে থাকে। অথচ ভিয়েতনামের মানুষদের মাথাপিছু বার্ষিক আয় দুই হাজার ডলার। ভিয়েতনাম আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের একটি নাস্তিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। দেশটি কমিউনিস্ট শাসকরা গভীরভাবে কনফুসিয়াস এবং বৌদ্ধ চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত। এ জন্য অনেক মানুষ তাদের পূর্বপুরুষদের পূজা করা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। কিন্তু ব্যাং গ্রামের এই চর্চা নতুন মাত্রা পেয়েছে। কারণ এখানে সমাধিগুলোর বেশ সাজসজ্জা করা হয়।
ওই গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত জেলে দ্যাং থিয়েন এএফপিকে গর্বভরে বলেন, আমাদের সমাধি ক্ষেত্রগুলো অদ্বিতীয়। তিনি সাংবাদিকদের তার পরিবারের একটি বড় ৪০০ বর্গমিটার আকারের সমাধি দেখিয়ে গর্বভরে ওই কথা বলেন। তিনি বলেন, এভাবে সমাধি তৈরি করা হলে শিশুরা পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধা জানাতে পারে। সমাধিগুলোর ভালোভাবে যতœ নেওয়া হলে পরিবারের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে। এটা চিরকাল থাকবে। ১৯৯৪ সালে বিপুল অর্থ ঢেলে শত শত বছরের এসব সমাধি যখন সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়, ওই সময় থিয়েন পরিবারও স্বজনদের সমাধি দৃষ্টিনন্দন করে সাজাতে শুরু করে। এসব সমাধির ছয় মিটার উঁচু স্তম্ভ এমনিতেই বর্ণালি ড্রাগনের মূর্তি আর কারুকাজে আবৃত, এতে আবার যোগ হয়েছে বাড়তি সৌন্দর্য। কিছু সমাধি ক্ষেত্রের আয়তন ২৫০ হেক্টরের মতো। পাশেই রয়েছে সাদা বালির সৈকত। হিউ শহরে ১৮ ও ১৯ শতকের জায়গাগুলো সংরক্ষণের জন্য কাজ করছে ইউনেস্কো। স্থানীয় লোকজন তাদের সৃজনশীলতা দিয়ে এগুলো সংরক্ষণে কাজ করছে। বৌদ্ধমন্দিরের নির্মাণশৈলীর অনুকরণে তৈরি এসব সমাধি স্তম্ভে রোমান সভ্যতার নান্দনিক ছোঁয়াও রয়েছে।
প্রথাগতভাবে ভিয়েতনামের মানুষের কাছে ড্রাগনের ভাস্কর্য বেশ জনপ্রিয়। কিছু সমাধি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অনুকরণে, কিছু খ্রিস্টীয় অনুকরণে এবং কিছু ইসলামী অনুকরণে তৈরি। কিছু সমাধি গড়ে তোলার বিষয়টি আগাম, যেখানে কোনো মরদেহ নেই। ভবিষ্যতের জন্য এগুলো তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা হোয়াং খেং এএফপিকে বলেন, এই গ্রামের মানুষ যারা বিদেশে থাকেন, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট প্রবাসী, তাদের পাঠানো অর্থে সমাধিগুলো সাজানো হয়। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থেই এখানকার গ্রামবাসী সচ্ছল হচ্ছে। ওই অর্থ সমাধি ও গ্রামের মন্দির নির্মাণে বিনিয়োগ করা হয়। কমিউনিস্ট শাসিত ভিয়েতনাম যুদ্ধে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে চলা যুদ্ধে এলাকাটি বোমা হামলার ক্ষত ছিল। সায়গন (হো চি মিন) শহরের পতনের পর ১৯৭৫ সালের দিকে ভিয়েতনাম এক হয়। এরপর মানুষ উন্নততর জীবনের আশায় বিদেশে পাড়ি জমাতে শুরু করে। অনেকে নৌকায় করে বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে সাগরে ডুবে মারা পড়ে। অনেকের ঠাঁই মেলে হংকং শিবিরে। অনেকে সৌভাগ্যক্রমে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে ঠিকানা খুঁজে পায়। বিদেশ থেকে স্বজনদের পাঠানো অর্থেই ব্যাং গ্রামের মানুষের মধ্যে সমাধি বানানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়। অনেকে সমাধি গড়তে গিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এএফপি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন