বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ধর্মতত্ত্ববিদ না হয়ে নাক গলানো ধৃষ্টতা -হেফাজতে ইসলাম

প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব রিপোর্ট : জুমার খুৎবা ও খতিবদের বক্তব্য নিয়ন্ত্রণে বিবিসি বাংলাকে দেয়া ইফা ডিজির বক্তব্যকে শরিয়তবিরোধী উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ ও দেশের শীর্ষ ওলামা-মাশায়েখগণ এক যুক্তবিবৃতি প্রদান করেছেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, জুমার খুৎবার নিয়ম, পদ্ধতি, বিষয়, ধরন কোনো আলেমের মনগড়া বিষয় নয়। এটি চৌদ্দশ’ বছর পূর্বে মহান আল্লাহর প্রিয় রাসূলের (সা.) শেখানো ও নির্দেশিত মূলনীতির আলোকে, কোরআন-হাদিসের ভিত্তিতে প্রদান করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, জুমার খুৎবা নিয়ন্ত্রণ ও খতিবদের বক্তব্য প্রদানের বিষয়ে ইফা ডিজির মতো একজন ব্যক্তি যিনি ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষিত নন তার পক্ষে ধর্মতত্ত্ববিদ সাজতে গিয়ে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদিতে নাক গলানোর মতো ধৃষ্টতা দেখানোর কোনো অধিকার নেই। এটি স্পষ্টত বিশ্বনবীর (সা.) পূর্ণাঙ্গ আদর্শ ও নির্দেশনাকে অবজ্ঞা করার শামিল। কোরআন-হাদিসের বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি ও ইসলামী আইন-কানুন সম্পর্কে বিজ্ঞজনদের মতামত না নিয়ে কতিপয় দরবারি আলেমদের দিয়ে বানানো সরকারি খুৎবা বাংলাদেশের মসজিদগুলোতে চাপিয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করছেন।
তারা বলেন, ইফা ডিজিকে মনে রাখতে হবে, হক্কানী আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখ কারো কর্মচারী নন। তাঁরা মহান আল্লাহতায়ালার গোলাম, তারা ইলমে নববীর শিক্ষায় শিক্ষিত, তাদেরকে খুৎবা ও বয়ান শেখানোর দায়িত্ব এমন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়, যাদের কাছে ধর্মীয় শিক্ষার লেশমাত্র নেই। এটা একটি নতুন ষড়যন্ত্র, যা সরাসরি ধর্মীয় বিষয়ে অগ্রহণযোগ্য হস্তক্ষেপের নামান্তর।
হেফাজত নেতৃবৃন্দ ইফা ডিজিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, খুৎবা কিংবা জুমার বয়ান নিয়ন্ত্রণ নয়। যেসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে, চরিত্র নষ্ট হচ্ছে, পারিবারিক বন্ধন ভেঙে পড়ছে, সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা বিঘিœত হচ্ছে; সন্ত্রাসের উপাদান মাদক, নগ্নতা ও বেহায়াপনার আয়োজনগুলো বন্ধ করার ব্যবস্থা করুন।
বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন শহরে কনসার্টের নামে যেসব উদম নৃত্য, অশ্লীল গান-বাদ্য, সুন্দরী প্রতিযোগিতা, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অশালীন অনুষ্ঠানাদি প্রচার, বিভিন্ন হলে-অভিজাত হোটেলে নানা রকম শো বন্ধ করুন এবং পলিটিক্যাল উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিন। এদেশের আলেমসমাজ এক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা করবে।
বিবৃতিদাতারা হলেন-হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির, আল্লামা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, মহাসচিব আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরী, নায়েবে আমির মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, মাওলানা হাফেজ আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জী হুজুর, কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) মহাসচিব মাওলানা আবদুল জব্বার জাহানাবাদী, মাওলানা তাফাজ্জল হক মুহাদ্দিসে হবিগঞ্জী, মাওলানা আবদুল মালেক হালিম, মুফতি মোজাফ্ফর আহমদ, মাওলানা আবদুল হামিদ পীর সাহেব মধুরপুর, মাওলানা সালাহুদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা মুহাম্মদ ইদরিস, মাওলানা মুহিবুল হক গাছবাড়ি-সিলেট, মাওলানা নুরুল হক কুমিল্লা প্রমুখ।
ইসলামী আন্দোলন মহানগর
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর সভাপতি অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন বলেছেন, খতিব ও খুৎবা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের উদ্যোগ সরকারের জন্য মঙ্গল হবে না। মসজিদের খতিবগণ ইসলামের আলোকে সমসাময়িক বক্তব্য প্রদান করে জাতিকে সতর্ক করেন। কুরআন সুন্নাহের আলোকে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের চলার নিয়মনীতি, সন্ত্রাস, দুর্নীতি মাদকসহ সমাজবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে জনগণকে হুঁশিয়ার করেন। কুরআন ও হাদিসে অসংখ্য জায়গায় রাষ্ট্রীয় বিষয়ে আলোচিত হয়েছে। তিনি জুমার নামাজের খুৎবা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগকে উস্কানিমূলক হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, এই উদ্যোগ ইসলামী অঙ্গনকে উত্তপ্ত করে তুলবে। এ ধরনের উদ্ভট চিন্তা সরকারের এক শ্রেণীর লোকদের বিকৃত মস্তিষ্কের আবিষ্কার। অথচ খুৎবায় আল্লাহ-রাসূলের প্রেমে উচ্ছ্বলিত আত্ম-প্রত্যয় সিদ্ধ তৌহিদী জনতার চিত্তকে ইসলামভিত্তিক ন্যায়, সত্য ও সততা প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণের প্রেরণা দেয়।
আজ বিকেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরী এক জরুরি সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নগর সেক্রেটারি মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর সহ-সভাপতি আলহাজ আলতাফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মু. মোশাররফ হোসেন, এইচ এম সিদ্দিকুর রহমান, অর্থ সম্পাদক মাওলানা নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
কওমী মঞ্চ নেতৃবৃন্দ
সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে জুমার নামাজের খুৎবা নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল। ইতিপূর্বে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে গঠিত সরকারের একমাত্র প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি হয়ে শামীম মোহাম্মদ আফজাল অনইসলামিক কথা ও কাজ করে সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে আঘাত করেছেন। এমতাবস্থায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালকের পদ থেকে শামীম মোহাম্মদ আফজালকে বাদ দিয়ে একজন মুত্তাকি আলেম ও ইসলামী গবেষককে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া এখন গণ-দাবিতে পরিণত হয়েছে। কওমী মঞ্চের চেয়ারম্যান মুফতি মোহাম্মদ তাসনীম এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন