শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক- কুমিল্লা অংশের ১০৪ কিলোমিটার মৃত্যুকূপ, ঝরছে তাজাপ্রাণ

| প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ১০৪ কিলোমিটার পথের দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানগুলো মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। এসব স্থান দুঘর্টনাপ্রবণ উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও যানবাহন চালকদের অসতর্কতা-অসচেতনতা, সড়ক ও ট্রাফিক আইন অমান্য করে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, মোবাইল ফোনে কথা বলা, তন্দ্রাচ্ছন্নভাব নিয়ে চালকের আসনে বসা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলা, অহেতুক ওভারটেকিংসহ অন্যান্য অসঙ্গত কারণে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে মহাসড়কে। গত দুইমাসে ২৫টির বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে প্রায় ৪৫ জন নিহত এবং দেড়শ লোক আহত হয়েছে। দেশের একমাত্র লাইভলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে বাড়ছে দুর্ঘটনা। প্রতিমাসেই প্রাণ হারাচ্ছে ১৫ থেকে ২০ জন যাত্রী। আহত হচ্ছে অর্ধশতাধিক। সড়কে প্রাণ ঝরে তাদের পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হচ্ছে। আহতরা পঙ্গুত্ববরণ করে পার করছে দুর্বিষহ জীবন। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে আতঙ্ক। আর এ আতঙ্ক নিয়েই প্রয়োজনের তাগিদে যানবাহনে ওঠতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। মহাসড়কে ফোরলেন চালু হওয়ায় আগের তুলনায় যানজট অনেকাংশে কমে আসলেও যানবাহন দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের হার বেড়েই চলছে। দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় চালকের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণেই মূলত দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। আর এমনটিই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে চালকের অসতর্কতার পাশাপাশি মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে বেশকিছু বাঁক ও ইউটার্ন দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ বলে মনে করছেন সাধারণ যাত্রীরা। প্রতিদিন মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ দিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, টেকনাফ, ফেনি, নোয়াখালী, লহ্মীপুর, রামগতি, বান্দারবন, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও ঢাকা থেকে মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, হাজীগঞ্জ, লাকসাম এবং কুমিল্লা থেকে ঢাকা, ফেনি, বান্দারবন, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার ৪০টির বেশি গন্তব্যে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ হাজার যাত্রীবাহী ও মালবাহী যানবাহন চলাচল করে। এসব যানবাহনের বেশিরভাগই বেপরোয়া ও অধিক গতিতে চলাচল, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন, চালকের অসাবধানতা, তন্দ্রাভাব নিয়ে গাড়ি চালানো, অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালানো, মোবাইল ফোনে কথা বলা এবং ওভারটেকিংয়ের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে অহরহ। মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে ফেনির মোহাম্মদ আলী পর্যন্ত প্রায় ৩৫টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থান রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার কুটম্বপুর, হাসানপুর, শহীদনগর, গাজীপুর, রায়পুর, পুটিয়া,  দৌলতকান্দি, বারপাড়া, জিংলাতলী, নাওতলা, আমিরাবাদ, রায়পুর। চান্দিনা উপজেলার হাড়িখোলা, নুরীতলা, ছয়ঘড়িয়া, দোতলা, কাঠেরপুল, গোবিন্দপুর, কোরেরপাড়, গোবিন্দপুর। বুড়িচং উপজেলার নিমসার, কাবিলা, কোরপাই, কালাকচুয়া, সদর উপজেলার কালাকচুয়া, জাগুরঝুলি। সদর দক্ষিণ উপজেলার বেলতলী, মাটিয়ারা, কমলাপুর, সোয়াগাজীর লালবাগ। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার হাড়িসর্দার বাজার, আমজাদের বাজার, দত্তসার, আমানগন্ডা, নানকড়া ও মোহাম্মদ আলীর বাজার। দুর্ঘটনাপ্রবণ এসব স্থানেই বেশিভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। গত বছরের ডিসেম্বর ও এবছরের জানুয়ারি মাসে মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে প্রায় ২৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় অন্তত ৪৫টি তাজা প্রাণ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। আর পঙ্গুত্ব বরণ করেছে দেড়শ’র বেশি লোক। এসব দুর্ঘটনায় একই পরিবারের একাধিক লোকের মৃত্যু যেমন একটি সাজানো গোছানো সংসারের স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে তেমনি শিক্ষক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের বিশিষ্টজনেরও প্রাণ কেড়ে নিয়ে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সৃষ্টি করেছে এক অপূরণীয় শূন্যতা। অন্যদিকে আহত হয়ে যারা বেঁচে যায় তাদের বেশিরভাগই পঙ্গুত্ব বরণ করে নিজ পরিবারে এক দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করছে। যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, বেপরোয়া গতির নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়ে খাদে পড়ে যাওয়া ঘটনা ঘিরে মূলত মহাসড়কে দুঘর্টনাগুলো ঘটেছে। মহাসড়কে নিয়োজিত হাইওয়ে পুলিশ অত্যধিক গতিতে চালানো যাত্রীবাহী ও মালবাহী যানের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মামলা দিচ্ছেন। কিন্তু থামছে না বেপরোয়া যানবাহনের গতি। জানতে চাইলে কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশ সুপার রোজাউল করিম পিপিএম বলেন, ‘ফোরলেন চালু হওয়াতে যানজট কমে গেছে। কিন্তু কমবেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে অবশ্যই চালককে সচেতন হতে হবে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন