স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে জঙ্গিবাদকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুরে গজিয়ে ওঠা কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলোর গডফাদারদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এছাড়া গত বছর প্রায় ৪০০ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র বিতার্কিকদের সাথে অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনে তরুণ সমাজের ভ‚মিকা শীর্ষক এক সংলাপে এ কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, সামাজিক, পারিবারিক, ধর্মীয় অবক্ষয় এবং আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে তরুণরা জঙ্গিবাদ, মাদক ও সাইবার ক্রাইমের মত অন্যান্য সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ফেসবুক বা অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের বিচার আইসিটি এ্যাক্ট-এর মাধ্যমে করা হচ্ছে। পুলিশ ঢাকাসহ সারাদেশকে জনবান্ধব করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তবে সাধারণ জনগণসহ তরুণদের সম্পৃক্ততা ছাড়া কখনোই এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জঙ্গিবাদকে আমরা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। তবে এটিকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করতে গেলে আমাদের আরো অনেক কাজ করতে হবে। আরো অনেক সময় লাগবে। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তৃতিতে জঙ্গিরা তরুণ সমাজকে টার্গেট করেছে। এ কারণে তরুণদের সতর্ক থাকার আহŸানও জানান তিনি।
পুলিশ কমিশনার বলেন, নানাবিধ সীমাবদ্ধতা থাকা সত্তে¡ও পুলিশ জনগণের বন্ধু হিসেবে সর্বদা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই ৬০ লাখ নগরবাসীর তথ্যসমৃদ্ধ ডেটাবেইস তৈরী করা হয়েছে যাদেরকে পর্যায়ক্রমে ইনডেক্স নাম্বার দেয়া হবে। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে পুলিশের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আছে কি না বিতার্কিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন ৬০০ পুলিশ কর্মকর্তা সমন্বয়ে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন হামলার মোকাবেলা কেবল নয়, শত শত হামলার পরিকল্পনা প্রতিরোধ করা হয়েছে।
সাধারণ মানুষের হয়রানি প্রসঙ্গে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি অভিযোগের সুক্ষ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা হয়। জনগণের হয়রানির মাত্রা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে হয়রানির পরিমাণ অনেক নিচে নেমে এসেছে।
কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিবাদ গণতন্ত্রের বিপক্ষে আর বিতর্ক গণতন্ত্রের পক্ষে। তিনি বিতার্কিকদের আরো বেশি বিতর্ক চর্চার মাধ্যমে সমাজের অসঙ্গতিগুলো তুলে আনার আহŸান জানান। সমাজের বিভিন্ন অপরাধ মোকাবেলায় তরুণরা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরী। সহিংস রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিহার করতে না পারলে সামাজিক অবক্ষয় বাড়তেই থাকবে। তাই দেশে সুশাসন, গণতন্ত্র, সামাজিক সংলাপ ও উন্নয়ন একই গতিতে চলতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। জীবন দিয়ে পুলিশ প্রমাণ করেছে যে, পুলিশ জনগণের বন্ধু। কোন শিক্ষার্থী মেস ভাড়ার ক্ষেত্রে যাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হন সেদিকে পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ মিজানুর রহমান, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণ পদ রায়, উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন) মো: মাসুদুর রহমান প্রমুখ। সংলাপে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র পরিচালক ড. এস এম মোর্শেদ এবং ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশনের মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান খান।
সংলাপে ইডেন মহিলা কলেজ, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইবাইস ইউনিভার্সিটি ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি বিতার্কিকরা অংশগ্রহণ করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন