শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

থাইরয়েড হরমোন ও মুখের সমস্যা

| প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

থাইরয়েড গ্রন্থি যে হরমোন উৎপাদন করে থাকে তা হলো থাইরক্সিন যা স্বাভাবিক গঠন ও বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। থাইরয়েড গ্রন্থি পরিচালিত হয়ে থাকে ব্রেনের পিটুইটারি গ্রন্থি দ্বারা। পিটুইটারি গ্রন্থি পরিচালিত হয় ব্রেনের আরেকটি গ্রন্থি দ্বারা যার নাম হাইপোথ্যালামাস। হাইপোথ্যালামাস একটি হরমোন নিঃসরণ করে যার নাম থাইরোট্রপিন রিলিজিং হরমোন (TRH)। এ হরমোনটি পিটুইটারি গ্রন্থিতে একটি সংকেত পাঠায় থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (TSH) নিঃসরণ করার জন্য। এ প্রক্রিয়ায় থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন থাইরয়েড গ্রন্থিতে একটি সংকেত পাঠায় থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ করার জন্য। এ তিনটি গ্রন্থির যেকোনো একটির অতিমাত্রায় কার্যকারিতায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন হতে পারে, যা হাইপাথাইরয়ডিজমের সৃষ্টি করতে পারে। আবার যদি প্রয়োজন মতো থাইরক্সিন হরমোন উৎপাদন না হয়, তাহলে হাইপোথাইরয়ডিজম দেখা দিতে পারে।
হাইপাথাইরয়ডিজমে থাইরয়েড হরমোন বেশি নিঃসরণ হয়ে থাকে। হাইপাথাইরয়ডিজমে ঘুমের সমস্যা, দ্রুত হৃদস্পন্দন হয়ে থাকে। যার কারণে রোগীর মনে দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা বিরাজ করে থাকে। এর ফলে মুখের অভ্যন্তরে ঘাঁ বা ক্ষত দেখা দিতে পারে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে বার্নিং মাউথ সিনড্রোম বা মুখে জ্বালাপোড়া হতে পারে। কখনো কখনো হাইপাথাইরয়ডিজমে জগ্রেন সিনড্রোম দেখা দিয়ে থাকে, যার কারণে শুষ্ক মুখের সৃষ্টি হয়। শুষ্ক মুখের প্রভাবে দন্তক্ষয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যেহেতু লালার প্রবাহ স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে। হাইপাথাইরয়ডিজমে পেরিওডন্টাল রোগ, ম্যাক্সিলারি বা ম্যান্ডিবুলার অস্টিওপরোসিস এবং দাঁত তাড়াতাড়ি ওঠে। এক্সরে করার সময় থাইরয়েড গ্রন্থিকে রক্ষা করার জন্য থাইরয়েড কলার ব্যবহার করা উচিত। থাইরয়েড গ্রন্থি রেডিয়েশনের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। অতিরিক্ত এক্সরে বা রেডিয়েশন থাইরয়েড গ্রন্থির জন্য একটি রিস্ক ফ্যাক্টর।
হাইপোথাইরয়ডিজম বলতে বোঝায় থাইরয়েড হারমোন উৎপাদন হ্রাস বা থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা কমে যাওয়া। কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়ডিজম ক্রেটিনিজম নামে পরিচিত। এ কারণে ঠোঁট পুরু, ম্যাক্রোগøসিয়া বা জিহŸা বড় হওয়া, ম্যালঅকলুশন অর্থাৎ উপরের এবং নিচের চোয়ালের কামড় দিলে স্বাভাবিক রিলেশন ব্যাহত হওয়া এবং দেরিতে দাঁত ওঠে থাকে। পেরিওডন্টাল অবস্থা ভালো থাকে না। কোনো ক্ষতস্থান ভালো হতে দেরি হয়। লম্বা সময় ধরে হাইপোথাইরয়ডিজমের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ক্রেনিওফেসিয়াল গ্রোথ এবং ডেন্টাল ডেভেলপমেন্টের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ডেন্টাল ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে ম্যান্ডিবুলার বা নিচের চোয়ালের দ্বিতীয় মোলার বা সাত নম্বর দাঁত-এর ইমপ্যাকশন বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। হাইপোথাইরয়ডিজমের রোগীদের ক্ষত বা ঘাঁ দেরিতে শুকায় কারণ মেটাবলিজমের কার্যকারিতা কমে যায়। দেরিতে ঘাঁ বা ক্ষত সারার জন্য সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই দাঁত তোলা বা সার্জারির সময় সতর্কতার সাথে সবকিছু করতে হবে। হাইপোথাইরয়ডিজমের রোগীদের এলডিএল (LDL) কোলস্টেরল বৃদ্ধি পায় এবং আর্টেরিওস্কেলেরোসিস-এর কারণে হৃদরোগের সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া স্ট্রোকের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। মুখের সমস্যার পাশাপাশি হাইপোথাইরয়ডিজমের রোগীদের মাঝে অস্থিরতা, বিরক্তি, দুশ্চিন্তা, ওজন কমে যাওয়া, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া এবং তাপ সহ্য না হওয়ার মতো লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে। এর ফলে মুখে ক্রমাগত আলসার বা ঘাঁ ও অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই হাইপোথাইরয়ডিজমের রোগীদের মুখ ও দাঁতের চিকিৎসায় সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি রোগী একজন মুখ ও দন্ত চিকিৎসক এবং অ্যান্ডোক্রাইনোলজিস্ট চিকিৎসকের সাথে সমন্বয় করে চিকিৎসা করলে সবচেয়ে ভালো হয়। মুখের যেকোনো সমস্যায় স্থানীয় কারণ ছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে। বিশেষ করে মুখের অভ্যন্তরে বিভিন্ন রোগের কারণ এবং উৎস নির্ণয় করে তবে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। তাই এসব বিষয়ে সবার আরো বেশি সচেতন হতে হবে।
ষ ডা. মো. ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল : ০১৮১৭৫২১৮৯৭

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
MD Elias ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ২:০৩ পিএম says : 0
thanks for this news
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন