বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ইইউ পার্লামেন্টে সিইটিএ অনুমোদন

| প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংরক্ষণবাদী নীতি সত্তে¡ও সর্বাত্মক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তিতে (সিইটিএ) অনুমোদন প্রদান করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পার্লামেন্ট। ইইউ পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য সিইটিএকে সমর্থন দেয়ায় আগামী মাসে অন্তর্বর্তীকালের জন্য চুক্তি কার্যকরের পথ উন্মুক্ত হলো। নির্বাচনী প্রচারণার সময় থেকেই সদূরপ্রসারী বাণিজ্য চুক্তির বিরোধিতা করে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্য ট্রাম্পের সংরক্ষণবাদের হুমকির মুখে। এ অবস্থায় সিইটিএ চুক্তির অনুমোদন লাভকে বিশ্বায়ন বিরোধিতা ও সংরক্ষণবাদের বিরুদ্ধে বিজয় হিসেবে দেখছেন ইইউর পার্লামেন্ট সদস্যরা। সিইটিএ চুক্তি ইউরোপের সর্বাধুনিক বাণিজ্য চুক্তি। আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রেক্সিট কার্যকরের পর সিইটিএ চুক্তি ইইউ ও যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণে সম্ভাব্য রোল মডেলের ভূমিকা পালন করবে। দীর্ঘ সাত বছর আলোচনার পর গত বছরের অক্টোবরে ইইউভুক্ত ২৮টি দেশের সরকার ও কানাডা আনুষ্ঠানিকভাবে সিইটিএ স্বাক্ষর করে। যদিও শেষ মুহূর্তে বেলজিয়ামের ওয়ালোনিয়া প্রাদেশিক সরকারের বিরোধিতার মুখে চুক্তিটি প্রায় ভেস্তে যেতে বসেছিল। পরবর্তীতে আরেক দফা আলাপ-আলোচনার পর জোটের সব রাষ্ট্র ও কানাডা সরকারের সম্মতিতে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। গত বুধবার ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে অবস্থিত ইইউ পার্লামেন্টে সিইটিএ চুক্তির অনুমোদন-বিষয়ক ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ইইউ পার্লামেন্টের ৪০৮ জন সদস্য সিইটিএর পক্ষে ও ২৫৪ জন সদস্য এর বিপক্ষে ভোট প্রদান করেন। এছাড়া ভোটের সময় পার্লামেন্টের ৩৩ জন সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। ইইউ পার্লামেন্টের অনুমোদন লাভ করায় আগামী মাস থেকে অন্তর্বর্তীকালের জন্য সিইটিএ চুক্তি বাস্তবায়নের পথ আরো সুগম হলো। তবে চূড়ান্ত রূপে চুক্তিটি কার্যকর করতে হলে জোটভুক্ত ২৮টি দেশের জাতীয় এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রাদেশিক সরকারের অনুমোদন লাগবে। পার্লামেন্টারি ভোটের ফলাফলকে ঐতিহাসিক বলে আখ্যায়িত করেন স্কটল্যান্ডের মেম্বার অব ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্ট (এমইপি) ডেভিড মার্টিন। সিইটিএ চুক্তির পর ইইউ বাণিজ্যনীতি আর আগের মতো থাকবে না বলে জানান তিনি। যদিও এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে মার্টিনের সমাজবাদী ডেমোক্র্যাট দল। জার্মান ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটস পার্টির প্রধান ম্যানফ্রেড ওয়েবার জানান, এ চুক্তিতে অনুমোদন প্রদানের মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতির জবাব দিয়েছে ইউরোপ। তিনি বলেন, সংরক্ষণবাদ নয়, পারস্পরিক অংশীদারত্বে আগ্রহী ইউরোপ। একে অন্যকে ভয় বা অবিশ্বাস নয়, মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে উদার মানসিকতা ধরে রাখবে জোটভুক্ত দেশগুলো। সিইটিএতে অনুমোদনের মধ্য দিয়ে এই প্রথম জি-৭ভুক্ত কোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করল ইইউ। এ চুক্তি বাস্তবায়িত হলে দুই দেশের মধ্যকার পণ্য বাণিজ্যের ৯৮ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে দেয়া হবে এবং সাত বছর পর তা ৯৯ শতাংশ করা হবে। উভয় পক্ষই শিল্পপণ্যের ওপর থেকে সব রকম শুল্ক বাতিল ও কৃষিপণ্যের শুল্কে ৯০ শতাংশের বেশি ছাড় দেয়ার কথা ভাবছে। এছাড়া সেবা খাত ও সরকারি কেনাকাটাকে চুক্তির আওতায় আনার কথা ভেবে দেখা হচ্ছে। ইইউ কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং কানাডা ইইউর দ্বাদশ বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০১৫ সালে ৬ হাজার ৩৫০ কোটি ইউরোর পণ্য লেনদেন করেছে কানাডা-ইইউ। চুক্তি বাস্তবায়িত হলে প্রথম বছর জোটের অর্থনৈতিক উৎপাদন ১ হাজার ২০০ কোটি ইউরো বৃদ্ধি পাবে। তবে বেশকিছু খাত চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। জনসেবা, অডিওভিজ্যুয়াল, যোগাযোগ সেবা এবং বেশকিছু কৃষিপণ্য শুল্ক মওকুফের আওতামুক্ত রয়েছে। কৃষি খাতে কানাডা সরকার ব্যাপক ভর্ভুকি প্রদান করায় দুগ্ধজাত পণ্যের মতো বেশকিছু পণ্য শুল্কমুক্ত করা হয়নি। এদিকে সিইটিএ চুক্তির বিরুদ্ধে স্ত্রাসবুর্গে প্রতিবাদ জানান প্রায় ৭০০ আন্দোলনকারী। বিক্ষোভকারীরা ইইউ পার্লামেন্ট অভিমুখে মিছিল করে নিজেদের বিরোধিতার কথা জানান। ব্যানারে তারা লেখেন, সিইটিএতে হ্যাঁ বলা মানে ইইউর জনগণের স্বার্থ পদদলিত করা। বিশ্বায়ন-বিরোধী বিক্ষোভকারীরা সার্জিক্যাল মাস্ক পরে নাটকীয়ভাবে পার্লামেন্টের প্রবেশ পথ অবরোধ করে রাখেন। পরবর্তীতে বিক্ষোভকারীদের সেখান থেকে হটিয়ে দেয় দাঙ্গা পুলিশ। সিইটিএ চুক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে ইউরোপের কট্টর ডান ও বামপন্থী দলগুলো। সিইটিএ-বিরোধীরা এ চুক্তিকে স্বাস্থ্য, গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও বৃহদায়তন ব্যবসার জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মনে করছেন। গ্রিনপিসের ইইউ বাণিজ্যনীতি-বিষয়ক পরামর্শক শিরা স্ট্রানটন জানান, জীবনযাত্রার মান, গণস্বাস্থ্য ও পরিবেশ-বিষয়ক উদ্বেগের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ ও এমইপিদের মধ্যকার বিভাজন ইইউর জন্য বেশ বড় একটা ধাক্কা। এদিকে ফ্রান্সের কট্টর ডানপন্থী সংরক্ষণবাদী নেতা ও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মারিন লু পেন চুক্তির বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। তিনি জানান, চুক্তি বাস্তবায়িত হলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিশেষ আদালত ব্যবস্থায় সরকারের বিরুদ্ধেও মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনা করতে পারবে। চুক্তি-বিষয়ক অনেক উদ্বেগকে ‘মিথের’ সঙ্গে তুলনা করেন ইইউর পক্ষে আলোচনায় অংশগ্রহণকারী কমিশনার সিসিলিয়া ম্যালমস্ট্রম। তিনি জানান, ইইউর ২৮টি দেশের সরকার চুক্তিটি অনুমোদিত করেছে। জোটের নাগরিকদের জন্য সিইটিএ যদি বাস্তবিকই ক্ষতিকর হতো, তবে কখনই তা সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন লাভ করত না। উল্লেখ্য, কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছে কানাডা। এ অবস্থায় ট্রাম্পের নাফটা চুক্তি পুনরালোচনার অভিপ্রায় ও সংরক্ষণবাদী মনোভাব পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। তাই ইইউ-কানাডার বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন চলমান প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এএফপি, বøুমবার্গ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন