শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভারতে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও জাতিগত সহিংসতা বাড়ছে

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্ট

প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে লন্ডনে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত এক বছরে ভারতে সাম্প্রদায়িক হিংসার শত শত ঘটনা ঘটেছে যা প্রশাসন রুখতে পারেনি। বরং কোনো কোনো রাজনীতিক সরাসরি হিংসায় প্ররোচনা দিয়েই বক্তৃতা দিয়েছেন। তাছাড়া গরু পাচার বা গরুর গোশত খাওয়া হচ্ছে, শুধু এই সন্দেহের বশে অন্তত চারজন মুসলিমকে জনতা পিটিয়ে হত্যা করেছে। মুজফফরনগরে ২০১৩ সালের দাঙ্গার যে সরকারি তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়েছে তাতেও অভিযোগের আঙুল উঠেছে রাজনীতিক ও পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের দিকেই। শুধু সাম্প্রদায়িক সহিংসতাই নয়- অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সরব হয়েছে ভারতে ইদানীং বাক-স্বাধীনতার অধিকার যেভাবে খর্ব হচ্ছে তার বিরুদ্ধেও। রিপোর্টে নানা দৃষ্টান্ত দিয়ে দাবি করা হয়েছে, দুটো ক্ষেত্রেই ভারতের পরিস্থিতি রীতিমতো উদ্বেগজনক। ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজের নেতারাও বলছেন দেশে সাম্প্রদায়িক উস্কানির ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। সরকার অ্যামনেস্টির রিপোর্টের সরাসরি কোনো জবাব না-দিলেও এই বক্তব্যের সঙ্গে যে তারা আদৌ একমত নয় তা স্পষ্ট করে দিয়েছে।
অ্যামনেস্টির এই রিপোর্ট নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পার্লামেন্টের ভেতরে বা বাইরে কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, দেশে গত এক বছরে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা বেড়েছে এমন কোনো পরিসংখ্যান তাদের কাছে নেইÑ বরং তা অনেকটা কমেছে। আর পার্লামেন্টের ভেতরে একাধিক ক্যাবিনেট মন্ত্রী বলেছেন সরকার বাক-স্বাধীনতার অধিকারকে সম্মান করলেও তার একটা সীমা থাকা দরকারÑ ভারতকে টুকরো টুকরো করার স্লোগান বা ফাঁসির আসামির সমর্থনে জয়ধ্বনি কিছুতেই মানা সম্ভব নয়।
লন্ডনে অ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়া শাখার অধিকর্তা চম্পা প্যাটেল বলছিলেন, আমাদের নথিপত্রে এটা স্পষ্ট যে ভারতে সাম্প্রদায়িক, জাতিগত ও ধর্মীয় হিংসার ঘটনা বাড়ছে। যদিও ভারতে এই ধরনের ঘটনা ঐতিহাসিকভাবেই ঘটে আসছে, এখন যেটা আমরা দেখছি যে শুধু একজন মানুষকে তার ধর্মের কারণে বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, রিপোর্টে আমরা বলেছি কীভাবে মুসলিমরা আক্রান্ত হচ্ছেন, মণিপুরে আদিবাসীরা নিজেদের অধিকার আদায়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। সবচেয়ে যেটা উদ্বেগের কথা, ধর্মের কারণে এই বৈষম্য করার জন্য কাউকে কিন্তু বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না। ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ’ল বোর্ডও এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে মোটামুটি একমত। বোর্ডের প্রবীণ সদস্য ও লখনৌতে মুসলিম সমাজের নেতা জাফরিয়াব জিলানি বলছিলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকেই ভারতে যে কোনো ইস্যুকে একটা সাম্প্রদায়িক রং দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে। জিলানির কথায়, ক্ষমতাসীন দলই হোক বা আরএসএসের মতো তাদের সহযোগী সংগঠনÑ এরা তখন থেকেই প্রতিটা বিষয়কে একটা ধর্মীয় মেরুকরণের দিকে ঠেলে দিতে চাইছে। কখনো হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে বিয়েকে লাভ জিহাদ তকমা দিয়ে, কখনো গরুর মাংস নিষিদ্ধ দাবি করার দাবি তুলে, কখনো বা যোগাসন বাধ্যতামূলক করতে চেয়ে পুরো পরিবেশটাকে বিষাক্ত করে তোলা হচ্ছে। আমাদের আশঙ্কা, ২০১৯ সালে দেশে পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
সম্প্রতি দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা কানহাইয়া কুমারকে যেভাবে দেশদ্রোহ আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে- সেই প্রসঙ্গ টেনে অ্যামনেস্টির চম্পা প্যাটেল বলছিলেন, সরকার ভারতে ভিন্নমতকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে। প্যাটেলের কথায়, শুধু আপনার মতের বিপক্ষে কথা বললেই যেভাবে তাকে দেশবিরোধী বলে চিহ্নিত করা হচ্ছেÑ তাতে আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদের বিরুদ্ধে চরম অ-সহিষ্ণুতার পরিচয় দিচ্ছে। আরো দুর্ভাগ্যজনক হলো, এই দেশদ্রোহ আইন ব্রিটিশ আমলে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতোÑ আজকের ভারতেও সেটা প্রতিবাদীদের হেনস্থা করতে কাজে লাগানো হচ্ছে। মহাত্মা গান্ধীকেও কিন্তু এই আইনেই জেলে পোরা হয়েছিলÑ এটাই পরিহাসের বিষয়! বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন