শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

বড়ই বা কুল

| প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশের ছোট-বড় সবার নিকট অত্যন্ত পরিচিত একটি ফল কুল। কুল বরই নামেও পরিচিত। ছোট আকৃতির এ ফলটি শিশু, কিশোর ও মহিলাদের অধিক প্রিয়। ফলটি খুবই পুষ্টিকর ও মানব দেহের রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভ‚মিকা পালন করে। বিভিন্ন মহলের অভিমত বরইর উৎপত্তিস্থল ভারত উপমহাদেশেই। বাংলাদেশে সর্বত্রই বরই জন্মে। বরই গাছে বছরের অক্টোবর মাসে সাদা সাদা ফুল আসে নভেম্বর মাসে ফল ধরতে শুরু করে। জানুয়ারি মাস হতে পাকতে শুরু করে। মার্চ মাস পর্যন্ত ফলটি পাওয়া যায়। পাকলে ফল হলুদ বা লালচে হয়। বরই জাতের ওপর নির্ভর করে ফলের আকার। বাংলাদেশে অসংখ্য জাতের কুল আছে। তবে বেশির ভাগ জাতের কুলেই স্বাদ টক ও কষা। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জাত হলো নারকেলি কুল, কুমিল্লার কুল, আপেল কুল, বাউকুল ইত্যাদি। আপেল কুল ও বাউকুলই মিষ্টি বেশি। উদ্ভিদ জগতের জযধসহধপবধব পরিবারের একটি বৃক্ষ। বরইকে ইংরেজিতে বলা হয় ঔঁলঁনর বৈজ্ঞানিক নাম তওরুুঢ়যঁং সধঁৎরঃরধহধ বরইতে প্রচুর পরিমাণে নানা খাদ্য উপাদান বিদ্যমান। যা আমাদের দেহকে নানা রোগের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখে। প্রতি ১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী তরতাজা বরই বা কুলে পুষ্টি উপাদান হলো: জলীয় অংশ ৭৩.২ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ১.০ গ্রাম, খাদ্য শক্তি ১০৪ কিলোক্যালরি আমিষ বা প্রোটিন ২.৯০ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম শর্করা ২৩.৮ গ্রাম, ভিটামিন সি ৫১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.০২ মিলিগ্রাম, বি-২ ০.০৫ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১১ মিলিগ্রাম। দেখা যায় বরইতে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে আছে যা আমাদের দেহে দৈনিক চাহিদা পূরণ করে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৪০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি খাওয়া প্রয়োজন। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলে-মেয়েদের প্রতিদিন ২০ মিলিগ্রাম এবং গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের জন্য প্রতিদিন ৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন। মনে রাখবেন ভিটামিন সি আমাদের দেহে জমা থাকে না। তাই প্রতিদিন ভিটামিন সি যুক্ত খাবার প্রয়োজন। ভিটামিন সির অভাবে স্কার্ভি নামক রোগ হয়। দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। ঘন ঘন সর্দি কাশি দেখা দেয়। চামড়ার সৌন্দর্য কমে যায়। মুখে ঘা হয়, দাঁতের মাড়ি ফুলে যায় ও মাড়ি হতে রক্ত এবং পুঁজ পড়ে। অকালে দাঁত পড়ে যায়। শরীর দুর্বল হয়ে পড়েও সংক্রমণের প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই দেহের ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণের জন্য নিয়মিত বরই খাওয়া প্রয়োজন। বরইতে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা আমাদের দেহের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। দেহের হাড় ও দাঁত গঠনের জন্য প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। ক্যালসিয়ামের অভাবে “টিটেনি” নামক প্রাণঘাতি রোগ হয়, মস্তিকের কর্মক্ষমতা কমে যায় রক্ত জমাট বাধতে পারে না। পেশী সংকোচন ও হৃদস্পন্দন ও রক্ত সঞ্চালনসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সমাধান করে। গর্ভবতী মায়েদের গর্ভের সন্তানের মারাত্মক ক্ষতি হয়। শিশু হাড়ের কাঠামো দুর্বল, ছোট ও বাঁকা হয়। দাঁত দেরীতে উঠে। দাঁত অপুষ্ট হয়। যে সব মায়েরা শিশুকে বোকের দুধ খাওয়ান তারা প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া দরকার। সুতরাং শিশু ও মহিলাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য বরই খাওয়া খুবই প্রয়োজন। ফলটি খেয়ে আমাদের দেহে পুষ্টি উপাদান সরাসরি পূরণ করতে পারি। শাক সবজিতে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান আছে। কিন্তু সব উপাদান আমাদের শরীরে কাজে লাগে না। কারণ সবজি কাটা, ধোয়া ও রান্নার সময় অনেক ভিটামিন নষ্ট হয়ে যায়। আর বরই সরাসরি টাটকা খেয়ে তার সব পুষ্টি উপাদান দেহের কাজে লাগানো যায়। বরইয়ের রসকে এন্টি ক্যান্সার হিসেবে গন্য করা হয়। বরইয়ে এর সব উপাদান রয়েছে যা ক্যান্সার কোষ টিউমার কোষ, লিউকেমিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। বরই যকৃত বা কলিজার কাজ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। উচ্চ রক্ত চাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বরই খুবই উপকারী বরই রক্ত শূন্যতা, ডায়রিয়া ও শ্বাসনালীর নানা রোগ, সর্দিকাশি সারিয়ে তুলে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
ওষধি গুণাগুণ : কাদা কাদা দাস্ত, পেটের বাতাসে দুর্গন্ধ থাকলে ১০-১৫ গ্রাম শুকানো বরই তিনকাপ পানিতে সেদ্ধ করে এককাপ থাকতে নামিয়ে নিন। ছেঁকে সেই পানিতে একটু সাদা দই এবং ২/১ চা চামচ ডালিমের রস মিশিয়ে খেলে খুবই উপকার পাওয়া যায়। * পাতলা পায়খানা কয়েকবার হওয়ার পর রক্ত পড়লে বা রক্ত আমাশয় হলে তার সাথে আম বা পিচ্ছিল মিউকাস গেলে বরই গাছের ২ গ্রাম ছাল বেটে তার সাথে দুধ মিশিয়ে খেলে ২/৩ দিনের মধ্যে এ সমস্যা কমে যায়। * পেটে বাতাস জমলে, হজম শক্তি কমে গেলে বা খেতে অরুচি হলে ২/৩ গ্রাম শুকনো বরই ও গোল মরিচের গুঁড়ার সাথে সৈন্ধবলবণ ও চিনি মিশিয়ে খেলে বায়ূ কমবে অরুচিও সারবে। * মহিলাদের শ্বেতপ্রদর বা রক্তপ্রদর অর্থাৎ প্রস্রাবের রাস্তায় সাদা সাদা পিচ্ছিল ¯্রাব গেলে, ৫ গ্রাম শুকনো কুলের সাথে একটু আখের গুড় মিশিয়ে ৮/১০ দিন খেলে উপশম হয়। * অনেক সময় ফোঁড়ায় কোনো মুখ হয় না, পাকেও না, লাল হয়ে যন্ত্রণা করে। এ অবস্থায় পাতা বেটে প্রলেপ দিলে ১ দিনের মধ্যে ফোড়ায় মুখ দিয়ে পুঁজ বের হয়ে যাবে। * বোলতা, ভিমরুল বা যে কোনো পোকা কামড়ালে জ্বালা হলে যজ্ঞডুমুরও কুলের পাতা বেটে প্রলেপ দিলে জ্বালা ও ফোলা কমে যাবে। * হার্টের সমস্যা বা হৃদরোগ থাকলে শুকনো বরই বীজ বাদ দিয়ে চ‚র্ণ করে। সে চূর্ণ সকালে ও বিকালে পানিসহ পান করুন। এভাবে ৮/১০ দিন খেলে উপকার পাবেন। * কোষ্টবদ্ধতা বা শক্ত পায়খানা হলে মিষ্টি পাকা বরই বা শুকনো বরই বীজ বাদ দিয়ে পানিসহ খেলে সমস্যা কমে আসবে। * মাথায় যন্ত্রণা হলে বরই পাতাসহ কচি ডগা বেটে কপালে প্রলেপ দিলে যন্ত্রণা কমে আসবে।
সর্তকতা : কাঁচা বা পাকা বরই খেলে যদি কারো গ্যাস্টিকের সমস্যা দেখা দেয় বা পেটে সমস্যা হয় বরই না খাওয়াই ভালো। এ উপকারী ফল গাছটি বাড়ির আশপাশে লাগান ও যতœ নিন। নিয়মিত বরই খান দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করুন।
মোঃ জহিরুল আলম-শাহীন
শিক্ষক ও স্বাস্থ্যবিষয়ক কলাম,লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন