শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিআইডব্লিউটিসির ৬ জাহাজের ৪টিই যাত্রী পরিবহনের বাইওে অচল ৩ প্যাডেল জাহাজ

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম ঃ দেশের একমাত্র অভ্যন্তীরন যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসে বিআইডব্লিউটিসি’র নতুন-পুরনো ৬টি নৌযানের ৪টিই এখন যাত্রী পরিবহনের বাইরে। এরমধ্যে ৪টি প্যাডেল জাহাজের ৩টি অচল। যার দুটিই দূর্ঘটনাজণিত কারণে যাত্রী পরিবহনের বাইরে রয়েছে। সর্বশেষ গত রোববার সন্ধ্যায় যাত্রী নিয়ে ঢাকার সদরঘাট ত্যাগের সময় একটি বেসরকারি নৌযানের সাথে সংঘর্ষে ‘পিএস টার্ন’ জাহাজটির দোতালার পেছনের অংশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। নৌযানটির দ্বিতীয় শ্রেণির অন্তত ৩টি কক্ষ সম্পূর্ণভাবেই বিনষ্ট হওয়ায় ছাড়াও উপরি কাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়। বিকল্প নৌযান না থাকায় ঐ অবস্থাতেই মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে পিএস টার্ন চাঁদপুরÑবরিশাল হয়ে নির্ধরিত সময়ের প্রায় ৩ঘন্টা পরে সোমবার সন্ধায় বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করে। আজ সকালে নৌযানটি ঢাকায় ফিরলে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার দায়িত্বশীল মহল। ‘পিএস মাহসুদ’ দ্বিতীয় দফার দূর্ঘটনায় ডকইয়ার্ডে মেরামতে। ‘পিএস অস্ট্রিচ’ও মেরামতের নামে গত প্রায় ৫ মাস ধরে বন্ধ। গতকাল সংস্থার হাতে অভ্যন্তরীন রুটের জন্য যাত্রীবাহী নৌযান ছিল মাত্র দুটি। ফলে নিয়মিত রকেট স্টিমার সার্ভিস আজ থেকে সপ্তাহে ৪দিনে সীমিত হচ্ছে। সচল নৌযানের অভাবে গতকাল (মঙ্গলবার) ঢাকা থেকে রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠানটির নিয়মিত রকেট স্টিমার সার্ভিসে যাত্রী পরিবহন বন্ধ ছিল।
ঢাকা-চাঁদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠী-পিরোজপুর-মোড়েলগঞ্জ হয়ে খুলনা পর্যন্ত রকেট স্টিমার সার্ভিসের জন্য পুরনো ৪টি প্যাডেল জাহাজের সাথে গত ৩ বছরে আরো ২টি নতুন স্ক্র-হুইল টাইপের নৌযান সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু প্রায় ৫৬ কোটি টাকা ব্যায়ে সংগৃহীত ‘এমভি বাঙালী ও এমভি মধুমতি’ নামের নৌযান দুটির জ্বালানী ব্যায় ব্রিটিশ যুগে নির্মিত ও ১৯৯৫ সালে পূণর্বাশনকৃত প্যাডেল জাহাজগুলোর দ্বিগুনেরও বেশী। উপরন্তু ঐসব নৌযান যাত্রী বান্ধব না হওয়ায় তাতে ভ্রমণে সবার আগ্রহও কম। কিন্তু এর পরেও নানা অজুহাতে বিআইডব্লিউটিসি’র কারিগরি পরিদফ্তরের কতিপয় কর্মকর্তার ব্যয় সাশ্রয়ী প্যাডেল জাহাজগুলোকে বসিয়ে রেখে ব্যয়বহুল নৌযান দুটি পরিচালনে আগ্রহ বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি লোকশান এড়াতে গতমাসের শেষ থেকে এমভি বাঙালী’কে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে ইজারা দেয়া হয়েছে দুমাসের জন্য। যদিও সমুদ্র পরিবহন অধিদফ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী অভ্যন্তরীন নৌপথের এধরনের নৌযান ১৫ মার্চের পরে উপকূলীয় নৌপথ পাড়ি দেয়ার বিধান নেই। কিন্তু এমভি বাঙালীকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত সাগরপথ পাড়ি দেয়ার জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে এমভি মধুমতি নৌযানটি দিয়ে সপ্তাহে একদিন ঢাকাÑবরিশালÑখুলনা নৌপথে রকেট সার্ভিস পরিচালনা করা হচ্ছে গত নভেম্বরের শেষ ভাগ থেকে। যাতে প্রতি ট্রিপে পরিচালন লোকশান হচ্ছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। কথা ছিল জানুয়ারির শুরুতে মেরামত শেষে পিএস মাহসুদ যাত্রী পরিবহনে ফিরলে মধুমতির গতিপথ সীমিত করা হবে। কিন্তু তা করা হয়নি। ইতোমধ্যে গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে বরিশাল থেকে ঢাকায় যাবার পথে যাত্রী বোঝাই পিএস মাহসুদ নির্ধারিত গতিপথ হারিয়ে ভিন্ন পথে চলতে গিয়ে ডুবো চড়ায় উঠে যায়। প্রায় দু’ঘন্টার চেষ্টায় যাত্রী বোঝাই নৌযানটি চরামূক্ত হলেও এর তলার কিছু অংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে নৌযানটি যাত্রী পরিবহন থেকে প্রত্যাহার করে সংস্থার এক নম্বর ডকইয়ার্ডে পাঠাতে হয়েছে। সোমবার নৌযানটি ডকইয়ার্ডের সøীপওয়েতে তোলা হয়েছে বলে জানা গেছে। সংস্থার চেয়ারম্যান জরুরি ভিত্তিতে পিএস মাহসুদ-এর মেরামত সম্পন্ন করার নির্দেশের কথা জানিয়েছেন।
এর আগে গতবছর ৪ জুলাই প্রত্যুষে ঢাকা ও চাঁদপুর থেকে ঈদের ঘরমুখি বিপুল সংখ্যক যাত্রী নিয়ে বরিশালে আসার পথে বন্দরের অদুরে একটি বেসরকারি নৌযানের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে পিএস মাহসুদের নিচতলার ক্রু কেবিনে ভ্রমণরত ৫ যাত্রী নিহত হয়। এছাড়াও নৌযানটির পোর্ট সাইডের প্যাডেলসহ এর লোয়ার ডেক ও আপার ডেকে প্রথম শ্রেণির কক্ষগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দীর্ঘ প্রায় ৪ মাস বসিয়ে রেখে দেন দরবারের পরে গত নভেম্বরের শুরুতে নৌযানটির মেরামত শুরু হয়। বেসরকারি নৌযানটির মালিক-কতৃপক্ষ প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পিএস মাহসুদ-এর মেরামত সম্পন্ন করে জানুয়ারির প্রথমভাগে বিআইডব্লিউটিসি’র কাছে হস্তান্তর করে। অথচ সংস্থাটির কারিগরি পরিদফ্তরের পক্ষ থেকে নৌযানটি মেরামতে প্রায় ১.৪৫ কোটি টাকার প্রাক্কলন তৈরি করা হয়েছিল বলে একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু যাত্রী পরিবহনে ফেরার মাস দেড়েকের মধ্যেই গত মঙ্গলবার রাতে নৌযানটি পূনরায় দূর্ঘটনার কবলে পড়ল। তবে দীর্ঘ দিন পরে হলেও এবার নৌযানটির বিতর্কিত কাপ্টেনকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান।
ইতোমধ্যে গত রোববার সন্ধ্যায় যাত্রী নিয়ে ঢাকা সদরঘাট ত্যাগের সময় পিএস টার্ন জাহাজটি বুড়িগঙ্গা অতিক্রমকারী বেসরকারি নৌযান ‘এমভি মর্নিং সান-৯’র সাথে সংঘর্ষে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। নৌযানটির উপরি কাঠামোর পেছনের অংশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলে এ নৌযানটিও আজ সকালে ঢাকায় ফিরলে ব্যাপক মেরামত করতে হবে। ফলে রাজধানীর সাথে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের নিয়মিত রকেট স্টিমার সার্ভিসটি সপ্তাহে ৪দিনে সিমিত হয়ে পড়েছে। সংস্থার ডকইয়ার্ডে মেরামতাধীন দূর্ঘটনা কবলিত পিএস মাহসুদ যাত্রী পরিবহনে না ফিরলে পরিস্থিতির উন্নতিও সম্ভব নয় বলে জানা গেছে। মাহসুদ মেরামতে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ সময় লাগার কথা। এদিকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গত রোববারের দূর্ঘটনার ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি’র পক্ষ থেকে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা ছাড়া কোন মামলা দায়ের হয়নি।
এদিকে গত প্রায় ৫ মাস ধরে সংস্থার অপর নির্ভরযোগ্য যাত্রীবাহী প্যাডেল জাহাজ ‘পিএস অস্ট্রিচ’ মেরামতের নামে বসিয়ে রাখা হয়েছে। সংস্থার কারিগরি পরিদফ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নৌযানটিকে ‘যাত্রী পরিবহনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’ বললেও গত কয়েক মাসে প্রমোদ ভ্রমণের জন্য তা একাধিকবার ভাড়া দেয়া হয়েছে। এমনকি মাসাধিককাল আগে নৌযানটি সংস্থার ডকইয়ার্ডে নেয়া হলেও অদ্যাবধি তার মেরামত কাজ শুরু হয়নি। অথচ নৌযানের অভাবে দেশের একমাত্র অভ্যন্তরীন যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসটি এখন বন্ধের পথে। অভিযোগ রয়েছে নানা অজুহাতে সংস্থার একটি মহল ব্যয় সাশ্রয়ী প্যাডেল জাহাজগুলোকে বসিয়ে রেখে অধিক জ্বালানী ব্যয়ের লোকশানি এমভি মধুমতি ও এমভি বাঙালী পরিচালনে আগ্রহী। এদু’টি নৌযানে প্রতি ঘণ্টায় জ্বালানী ব্যয় প্রায় ১৯০ লিটার। অথচ প্যাডেল জাহাজগুলোতে তা মাত্র ৮৬ লিটার থেকে ৯৪ লিটারের মধ্যে।
এব্যাপারে বিঅইডব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. জ্ঞান রঞ্জনশীল-এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, নৌযান পরিচালনে কোন ধরনের অদক্ষতা, অবহেলা ও উদাশীনতা প্রশ্রয় দেয়া হবেনা। সম্ভব স্বল্প সময়ের মধ্যে পিএস মাহসুদ জাহাজটি যাত্রী পরিবহনে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি পিএস অস্ট্রিচ ও পিএস টার্ন-এর মেরামত শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি। আগামী দিন দশেকের মধ্যে বর্তমান সংকটের অনেকটাই সুরুাহা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন