শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গুলশানে বিউটি পার্লারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের নামে পুরুষ পুলিশের হামলা ও হয়রানি

| প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর গুলশানের অভিজাত ও কূটনৈতিক পাড়ায় কয়েকটি বিউটি পার্লারে অভিযানের নামে পুরুষ পুলিশের হামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন উচ্চশিক্ষিত, ভদ্র ও উচ্চবিত্ত পরিবারের কয়েকজন তরুণী ও মহিলা। গতকাল সিটি করপোরেশন, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে একটি অভিযানিক দল কোনো পুলিশ ছাড়াই জোরপূর্বক পার্লারের ভিতর প্রবেশ করে অশ্লীল ও আপত্তিকর আচরণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুপুর ২টা থেকে বিকাল সাড়ে তিনটার মধ্যে গুলশান-২ এর ৬৫ নম্বর রোডের ৫/৬ বিউটি পার্লারে এ ঘটনা ঘটে। অভিযানের নামে পার্লারের  দরজা ধাক্কাধাক্কি করে জোরপূর্বক ভেতরে প্রবেশকারীরা নিজেদের সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানিক দল বলে পরিচয় দেয়। এসময় পার্লারে রূপচর্চা করতে আসা মহিলাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে তারা তল্লাশি করলেও কোনো অপরাধী কিংবা কোনো ধরনের অনিয়ম পায়নি সেখানে। তবে  এ ধরনের অনৈতিক আপত্তিকর অভিযানের কথা অস্বীকার করেছেন গুলশান জোনের পুলিশ উপ-কমিশনারের কার্যালয় এবং সিটি করপোরেশন। এ কারণে ওই এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। বিউটি পার্লারের মালিকেরা বলছেন, পুলিশ এবং সিটি করপোরেশন যদি ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে এ ধরনের অভিযান পরিচালনা না করেন, তাহলে এরা কারা। তাহলে তা এলাকায় নিরাপত্তা নেই বলেই মনে হয়। এতসব সিসি ক্যামেরাই বা কেন আর নিরাপত্তার নামে এতসব চেকপোস্ট আর তল্লাশিইবা কেন। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের বলে মনে করেন তারা।
জানতে চাইলে, ঢাকা উত্তর  সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মঞ্জুর-ই মাওলা বলেন, গতকাল মঙ্গলবার উত্তর সিটি করপোরেশনের কোনো ভ্রাম্যমাণ আদালত গুলশান এলাকায় কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি। তিনি বলেন, বিউটি পার্লারগুলো সিটি করপরোশনের লাইসেন্স নিয়েই ব্যবসা করছে। তবে কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে প্রথমে নোটিশ দেয়া হয়, তারপর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু গতকাল এর কোনোটিই গুলশানে ঘটেনি।
এদিকে গুলশান জোনের উপ-পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, একজন কর্মকর্তা বলেন, এ ব্যাপারে কোনো কিছু তারা জানেন না।  তবে কেউ অভিযোগ করলে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান। এক প্রশানের জবাবে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, বেশ ক’টি বিউটি পার্লারের বিরুদ্ধে নানা অনৈতিক কর্মকা-ের অভিযোগ আছে, তবে অভিযান চালালে অবশ্যই মহিলা পুলিশ নিয়ে বিউটি পার্লারে প্রবেশ করতে হবে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী বলেছেন, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর এমনিতেই ওই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে ওঠেছে। বিদেশিরা এখন আর আগের মতো নেই। নিরাপত্তার প্রশ্নে এমনিতেই ওই এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে থাকেন। তন্মধ্যে অভিযানের না কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ গ্রুপ যদি প্রকাশ্যে দিনে-দুপুরে এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে তা হলে নিরাপত্তার প্রশ্নটি স্বাভাবিক কারণেই উঠতে পারে। তারা বলছেন, থানার ওসি জানেন না, ডিসি অফিস জানেন না, সিটি করপোরেশনও জানে না তাহলে এ ঘটনা কারা ঘটালো।
গুলশান এভিনিউয়ের ব্যবসায়ী জামিলুর রহমান জানান, ৬৫ নম্বর রোডে বেশ কয়টি অভিজাত শ্রেণির উন্নত মানের বিউটি পার্লার রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগ কাস্টমার বিদেশি তরুণি ও মহিলা। এছাড়া এলাকার শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের মহিলা ও তরুণিরা এসব পার্লারে নিয়মিত রূপচর্চা করতে যাতায়াত করেন। এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার কারণে ওই ব্যবসায় ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে তদন্তসাপেক্ষে অপরাধীদের শনাক্ত করে আইন অনুযায়ী শাস্তি দেয়া একান্ত প্রয়োজন বলেও তিনি দাবি করেন।
প্রসঙ্গত রূপচর্চার প্রতি মেয়ে বা মহিলাদের দুর্বলতা সেই আদিকাল থেকেই। আগে মেয়েরা বাড়িতেই স্বজন সহযোগিতা ও বুদ্ধি পরামর্শে নিজেরাই রূপচর্চা করত। কিন্তু বর্তমানের ব্যস্ত জীবনে রূপচর্চার কাজটি মেয়েরা করিয়ে নিচ্ছে বিউটি পার্লার থেকে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ঢাকা মহানগরীতে এলাকাভিত্তিক বিউটি পার্লার গড়ে উঠেছে। এখন এটি শুধু তরুণী ও মহিলাদের  রূপচর্চার কেন্দ্রই নয়, একটি স্বীকৃত ব্যবসায়ী খাতও। এছাড়াও রয়েছে অভিজাত বিউটি পার্লার। এলাকাভিত্তিক বিউটি পার্লারে প্রচলিত সেবা পাওয়া গেলেও অভিজাত বিউটি পার্লারে রূপচর্চার সকল সেবা পাওয়া যায়। এটি এখন শিক্ষিত মহিলাদের কাছে একটি লাভজনক জনপ্রিয় ব্যবসাও বটে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন