বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জনজীবনে চরম ভোগান্তি

প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৩৮ এএম, ১ মার্চ, ২০১৭

বিশেষ সংবাদদাতা : পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে সারাদেশ। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১০ জেলায় ডাকা অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট গতকাল মঙ্গলবার ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। যার প্রভাব পড়ে রাজধানীতেও। ধর্মঘটে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। আবার কোনো বাস ঢাকায়ও আসেনি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে দেশের সর্বস্তরের সাধারণ জনগণ। বিশেষ করে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য এ ধর্মঘট ছিল খুবই বেদনাদায়ক। বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গাড়ি না পেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদেরকে দৌড়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে দেখা গেছে। রাজধানীর চারটি আন্ত:জেলা বাস টার্মিনালে সকাল থেকে হাজার হাজার যাত্রী বাসের জন্য অপেক্ষা করেছে।  বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে সারাদেশের এ অরাজকতাকে ‘ধর্মঘট’ বলতে নারাজ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। বিষয়টিকে অনেকটা তাচ্ছিল্য করে একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে  তিনি বলেন, ধর্মঘট নয় শ্রমিকরা কাজ করবেন না বলে স্বেচ্ছায় অবসরে গেছেন। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পরিবহন ধর্মঘটকে অযৌক্তিক আখ্যায়িত করে বলেছেন, আদালতের রায়ের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাই এ রায়ে জনগণ কেন ভোগান্তিতে পড়বে? কাজেই আপনাদের (আন্দোলনকারী) এ অযৌক্তিক ধর্মঘট জনস্বার্থে দ্রুত প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত। তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মৃত্যুর জন্য যাবজ্জীবন দন্ড পাওয়া বাসচালক জামির হোসেন এবং সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ড পাওয়া ট্রাকচালক মীর হোসেনের মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম। গতকাল বিকেলে গাবতলীতে এক সমাবেশে তিনি বলেন, সংবাদপত্র, অ্যাম্বুলেন্সের মতো জরুরি গাড়ি ছাড়া কোনো রকম গাড়ি চলবে না, চালাতে দেব না। তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের নেতা শাজাহান খান কেবিনেট মন্ত্রী। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বললে দুই মিনিটের ব্যাপার। এ আইন প্রত্যাহার করে শ্রমিকদের জেল থেকে বের করব। আমাদের দাবি-দাওয়া সম্পূর্ণ মেনে নিলে শ্রমিকরা গাড়ি চালাবেন।
এদিকে, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় অর্ধদিবস হরতাল আহ্বান করে বাম দলগুলো। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সেই হরতালকে জনগণের ভোগান্তির সাথে তুলনা করে হরতালে ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে গাড়ি চালানোর ঘোষণা দেয়। এদিকে, বাসচালক জামির হোসেনের যাবজ্জীবন কারাদ-ের প্রতিবাদে গতকাল সকাল থেকে সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। ফেডারেশনের ঢাকার মতিঝিল কার্যালয়ে সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। এর আগে গত রবিবার থেকেই খুলনা বিভাগে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলে আসছিল। ২০১১ সালে মানিকগঞ্জে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের ঘটনায় বাসচালক জামির হোসেনের যাবজ্জীবন সাজার প্রতিবাদে গত রোববার থেকে খুলনা বিভাগের দশ জেলায় এ ধর্মঘট করে আসছিল চালক ও পরিবহন শ্রমিকরা।
গতকাল সকাল থেকে হঠাৎ করেই ধর্মঘট শুরু করে পরিবহন শ্রমিকরা। সরেজমিনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকেই রাজধানীর চারটি বাস টার্মিনালে হাজার হাজার যাত্রী বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। গাবতলী আন্ত:জেলা বাস টার্মিনালের সামনে গরুর হাট ক্রসিংয়ে ও দারুস সালামে সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ করে রাখে পরিবহন শ্রমিকেরা। সকালে সেখানে দু-একটা প্রাইভেট কার ও লেগুনা ছাড়া আর কোনো গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়নি। গাবতলী এলাকার দায়িত্বরত ট্রাফিক বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে ট্রাক শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছিল। কিন্তু সকাল নয়টার পর থেকে আবার তারা অবরোধ শুরু করে ভাঙচুর চালায়। এসময় গাবতলী থেকে সাভার ও মানিকগঞ্জ সড়কে যান চলাচল ছিল একদম বন্ধ। শুধু গাবতলী নয়, সায়েদাবাদ, মহাখালী ও ফুলবাড়িয়া টার্মিনালেও ছিল একই অবস্থা। ধর্মঘটের কারণে সব বাস সারিবদ্ধভাবে টার্মিনালগুলোতে দাঁড়িয়ে ছিল। দূরপাল্লার কোনো বাস টার্মিনালগুলো ছেড়ে যায়নি বা ঢাকার বাইরে থেকেও কোনো বাস রাজধানীতে প্রবেশ করেনি। জানতে চাইলে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায় করার জন্য আলটিমেটাম দিলেই পারতো। হাজার হাজার মানুষ তাদের কারণে ভোগান্তি পোহাচ্ছে। এটা মোটেও ভালো কাজ না। তিনি বলেন, আমরা মালিকরাও শ্রমিকদের কাছে অসহায়। তারা আমাদের সাথে আলাপ আলোচনা না করেই ধর্মঘটের  ডাক দিয়েছে।
সায়েদাবাদ টার্মিনালে কথা হয় খুলনা থেকে আসা আসমা আক্তার নামে এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, মেয়েকে নিয়ে জরুরি কাজে এসেছিলাম এক সপ্তাহ আগে। গত রোববার সকাল ৯টার ফাল্গুনী পরিবহনের টিকিট কাটা ছিল। ধর্মঘটের কারণে যেতে পারিনি। সোমবার ধর্মঘট প্রত্যাহারের খবর শুনে আজ আবার এসে দেখি গাড়ি বন্ধ। বিকল্প হিসেবে ট্রেনের টিকিটও মিলছে না। এখন কী করবো বুঝতে পারছি না। একই ধরনের দুর্ভোগের কথা জানান ফরিদপুর থেকে আসা জুয়েলও।  সকাল ১০টার দিকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় দেখা গেছে শত শত মানুষ গাড়ি না পেয়ে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে গন্তব্যের উদ্দেশে হেঁটে যাচ্ছেন। একই দৃশ্য দেখা গেছে ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকায়ও। ভুক্তভোগীদের মতে, রাজধানীতে আন্ত:পরিবহন যান চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন নানা পেশার কর্মজীবী মানুষ। বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। যান চলাচলের অভাবে সময়মত গন্তব্যে পৌঁছাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে।
অপরদিকে, সারাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে সড়ক দুর্ঘটনা। চলতি বছরের গত দুই মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। নিরাপদ সড়ক চাই এর হিসাব মতে, গত বছর সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৪৪ জন নিহত ও ৫২৫৫ জন আহত হয়েছে। এর আগের বছর ২০১৫ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার তিনজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কে বেপরোয়া গাড়ি চালানোই সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। এর জন্য চালকরাই প্রধানত দায়ী। সেই চালককে আদালত কারাদ- দিয়েছে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই। এর প্রতিবাদ ধর্মঘট হতে পারে না। কিন্তু পরিবহন শ্রমিক নেতাদের বক্তব্য হলো, দুর্ঘটনা-দুর্ঘটনাই। এটা কেউ ইচ্ছা করে ঘটায় না। এর জন্য চালক একা দায়ী হতে পারে না।  বাংলাদেশ আন্ত:জেলা ট্রাক চালক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের দাবি বাসচালক জামির হোসেনের যাবজ্জীবন কারাদ- ও সড়ক দুর্ঘটনার দায়ে এক ট্রাকচালকের মৃত্যুদন্ড প্রত্যাহার করতে হবে। এই দাবি না মানা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে। পাশাপাশি সারা দেশে ধর্মঘটও চলবে।
দক্ষিণ-পশ্চিমে যাত্রী দুর্ভোগ চরমে
বিশেষ সংবাদদাতা, যশোর থেকে জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার চলমান পরিবহন ধর্মঘট তৃতীয় দিনে  যাত্রি সাধারণের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।  
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন খুলনা বিভাগীয় কমিটির সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমের সঙ্গে পরিবহন ধর্মঘট এখন সারাদেশে চলছে। তিনি জানান, চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের একটি বাসের চালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেয়ার প্রতিবাদে গত রোববার থেকে দক্ষিণবঙ্গের ১০টি জেলায় পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়। একইসাথে করণীয় নির্ধারণের জন্য সোমবার দুপুর ৩টায় ঢাকায় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের যৌথসভা শুরু হয়। তিনি নিজেও ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভাটি সিদ্ধান্ত ছাড়াই সোমবার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মুলতবি হয়। ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয় রাত সাড়ে ৮টায় মুলতবি সভা শুরু হয়ে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে। সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সারা দেশের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ওই সভা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে সারা দেশে একযোগে সকল ধরনের যানবাহন চলাচলে ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে।
এদিকে, পরিবহন ধর্মঘট তৃতীয় দিনের মত অব্যাহত থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিকল্প যানবাহন হিসেবে ট্রেন ও প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে যাতায়াত করছে সাধারণ মানুষ। তবে সেক্ষেত্রে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। অপরদিকে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলে আমদানি পণ্য খালাসে ধস নেমেছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছে পাসপোর্ট যাত্রীরাও।
দেশের সর্ববৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর থেকে পণ্য খালাস নিয়েও গত তিনদিনে কোনো পণ্যবাহী গাড়ি ছেড়ে যায়নি। ফলে থমকে গেছে বন্দর এলাকা। বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) আবদুল জলিল জানান, প্রতিদিন এই বন্দর দিয়ে ৩শ’ ট্রাক পণ্য খালাস হয়ে থাকে। এখন বন্দর এলাকা ছেড়ে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক যেতে পারছে না। এজন্য বন্দরে সৃষ্টি হচ্ছে পণ্যজটের। পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে শত শত ট্রাক।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী জানান, ধর্মঘটের কারণে বন্দর থেকে আমদানি পণ্য খালাস হচ্ছে না। ট্রাক শ্রমিকরা ট্রাক না চালানোর এবং শ্রমিক ইউনিয়নের বাঁধার মুখে তারা কোনো ট্রাকে পণ্য লোড করতে পারছে না। একই অবস্থা ভোমরা ও দর্শনা স্থলবন্দরে।
এদিকে ভারত থেকে ফেরত আসা পাসপোর্ট যাত্রীরা বেনাপোল ভোমরা ও দর্শনা বন্দর এলাকায় আটকা পড়েছে। শিশু ও রোগী যাত্রীদের নিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এসব যাত্রীরা। অনেকে গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে বেনাপোলে ফিরে আসা ঢাকার গাজীপুরের আসমা বেগম জানান. ‘আমার পরিবারের ৪ জন সদস্য চিকিৎসা নিতে কলকাতা গিয়েছিলাম। একসপ্তাহ পর দেশে ফিরে এসে জানতে পারলাম দেশে ধর্মঘট চলছে। সকাল থেকে বন্দরের চেকপোস্ট এলাকায় বসে আছি। কাছেও এমন কোনো বাড়তি টাকা নেই যে মাইক্রোবাস কিংবা প্রাইভেটে ভাড়া নিয়ে বাড়ি ফিরে যাব।’
আর সুযোগ বুঝে মাইক্রোবাস এবং ট্যাক্সি চালকরাও ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। বেনাপোল থেকে ঢাকার মাইক্রোবাস ভাড়া যেখানে ১৩-১৪ হাজার টাকা, সেখানে তা নেয়া হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ৮ হাজার টাকার ট্যাক্সি ভাড়া হাকা হচ্ছে ১৫-১৬ হাজার  টাকা।
টঙ্গীতে সড়কে অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ
টঙ্গী সংবাদদাতা জানান, গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে গাজীপুরে শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করে। এ সময় টঙ্গীর চেরাগ আলী মার্কেট এলাকাসহ বিভিন্নস্থানে গাজীপুর জেলা ট্রাক ও কভারভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাঙচুর করে ধর্মঘট পালন করেন। এসময় বিভিন্ন গাড়ি থেকে শ্রমিকরা টাকা-পয়সা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে স্কুল-কলেজগামী ছাত্রছাত্রী, এ্যাম্বুলেন্স, লাশ বহনকারী গাড়ি, বিয়ের গাড়িসহ সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন।
গাজীপুর জেলা ট্রাক ও কভারভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সেলিম মিয়া বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশের ন্যায় টঙ্গীতেও আমরা পরিবহন ধর্মঘটন পালন করেছি।
অপরদিকে ধর্মঘট চলাকালে শ্রমিকরা বেশ কিছু পরিবহন ভাঙচুর করে এবং বিভিন্ন গাড়ি আটকিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছে থাকা নগদ টাকা-পয়সাসহ বিভিন্ন মালামাল ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে টঙ্গী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়।
ফরিদপুরের সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান : সোমবার বেলা সাড়ে দশটা থেকে শুরু হওয়া ফরিদপুর জেলার আভ্যন্তরীণ সকল রুট ও দুর পাল্লার সকল রুটের গণপরিবহন দ্বিতীয় দিনের মতো চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কাস শ্রমিক ইউনিয়নের (১০৫৫) সভাপতি যুবায়ের জাকির জানান, সকাল থেকে ফরিদপুরের বিভিন্ন রুটের পরিবহন চলাচল শুরু করলেও বিভিন্ন এলাকায় বাঁধার সম্মুখীন হয়। এতে বেলা সাড়ে দশটা থেকে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত সকল রুটের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
চরম ভোগান্তিতে নারায়ণগঞ্জবাসী
নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, সড়ক দুর্ঘটনা মামলায় পরিবহন শ্রমিকের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের প্রতিবাদে সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জেও অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছে পরিবহন শ্রমিকরা।একই সাথে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজধানীর ঢাকায় বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা ও গণসংহতি আন্দোলনের ডাকা আধা বেলা হরতাল পালিত হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন শ্রমিকের কর্মবিরতি এবং গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার হরতালের কবলে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে নারায়ণগঞ্জবাসীকেও।
হরতালের কারণে নারায়ণগঞ্জ থেকে দূরপাল্লার বাসসহ অভ্যন্তরীণ রুটের কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। এতে করে কর্মজীবী ও স্কুল কলেজগামী মানুষদের ভোগান্তি ছিল চরমে।
মাদারীপুরে ধর্মঘট  
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা
সাংবাদিক মিশুক মুনীর ও চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের হত্যাকারী চালককে আদালত কর্তৃক যাবজ্জীবন সাজা দেয়ার প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবারও ভোর ৬টা থেকে মাদারীপুর জেলার সকল ধরনের বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা টানা ধর্মঘটে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছে সাধারণ যাত্রীরা।
মাদারীপুর থেকে কোনো ধরনের বাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাসসহ দূর পাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকার পাশাপাশি খুলনা ও বরিশাল বিভাগের থেকেও পরিবহন কাঠালবাড়ি ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরি ফেরী ঘাটে না আসায় ঘাট এলাকায় নেই তেমন কোনো ভিড়। পরিবহন সঙ্কটে পড়েছে ফেরিগুলো।
কাঠালবাড়ি ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ফেরি ঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘ফেরি ঘাট এলাকায় পরিবহন না থাকায় ফেরি চলাচল বিঘœ ঘটেছে। গাড়ির অপেক্ষায় ফেরি ঘাটে ফেরিগুলো নোঙর করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন জেলা থেকে এ্যাম্বুলেন্স ও সরকারি গাড়ি ব্যতীত অন্য যাত্রী পরিবহন নেই।
৩০ রুটে যান চলাচল বন্ধ ছিল
হাটহাজারী উপজেলা সংবাদদাতা : মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের অংশ হিসেবে হাটহাজারীতে পরিবহন শ্রমিককেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মঘট পালন করেছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির নিদের্শনানুসারে এ ধর্মঘট পালনকালে সাজাপ্রাপ্ত চালককের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান। বিক্ষুদ্ধ শ্রমিককেরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি মহাসড়কের হাটহাজারী অংশের বিভিন্ন স্থানে গাড়ির টায়ার পুড়িয়ে, গাছের গুড়ি ফেলে ও সড়কের ডিভাইডার ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে গাড়ি চলাচলে বাধা প্রদান করে এক ডজনেরও বেশি যানবাহন ভাঙচুর করে। এতে দুই পার্বত্য এলাকা খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিসহ প্রায় ৩০ রুটের যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে পর্যটকসহ হাজার হাজার যাত্রী সাধারণ, এসএসসি পরীক্ষার্থী, বিদেশ যাত্রী ও রোগীদের বেশ দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।
পঞ্চগড়ে যাত্রী দুর্ভোগ
পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা জানান, সারা দেশের মতো পঞ্চগড়েও চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। এতে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। মঙ্গলবার সকাল মঙ্গলবার হতে পঞ্চগড় জেলার জেলার  বাস শ্রমিক ট্রার্মিনাল অবরোধ করে পরিবহন ধর্মঘট শুরু করে। ধর্মঘটের কারণে জেলার ৫টি সড়ক ও মহাসড়কে দূরপাল্লাার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্র জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় এক বাসচালকের যাবজ্জীবন, এক ট্রাকচালকের ফাঁসির দন্ডের প্রতিবাদে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে দেশে পরিবহন ধর্মঘট চলছে।

 

গাবতলীতে পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষ, ভাঙচুর-আগুন
রাজধানীর গাবতলীর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের সামনে পুলিশের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ হয়েছে। শ্রমিকেরা পুলিশের একটি রেকারে আগুন দিয়েছে। কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
সংঘর্ষের কারণে আমিনবাজার থেকে ঢাকামুখী ও টেকনিক্যাল মোড় হয়ে সাভারের দিকে যাওয়া শত শত যাত্রী আটক পড়েন।
পুলিশ জানিয়েছে, রাত আটটার দিকে গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনের সড়ক দিয়ে যান চলাচলে বাধা দেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা কিছু গাড়িও ভাঙচুর করে। পুলিশ বাধা দিলে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে। গাবতলী বালুর মাঠের পাশের পুলিশ বক্স ও একটি রেকারে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। পরে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শ্রমিকদের অভিযোগ, বিনা উসকানিতে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
উর্মি ১ মার্চ, ২০১৭, ২:৪৪ পিএম says : 0
দেশে এগুলো কী শুরু হলো ?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন