টেস্ট বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা করা হবে
স্টাফ রিপোর্টার : স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও ওষুধের মানের প্রশ্নে কোনো ধরনের ছাড় চলবে না। একই সঙ্গে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের টেস্ট বাণিজ্য বন্ধে হাতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, অনেকবার বলেছি, কিন্তু কোনো কিছুই করতে পারিনি। একেক প্রতিষ্ঠানের টেস্ট বাণিজ্য একেক রকম। একটির চেয়ে অন্যটির ব্যবধানও অনেক। তবে এ নিয়ে শিগগিরই মালিকদের সাথে বসা হবে। নিয়ন্ত্রণে একটি নীতিমালাও করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএইচআরএফ) আয়োজিত স্বাস্থ্য সেক্টরের ওপর ‘মিট দ্য প্রেস‘ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সচিব সিরাজুল ইসলাম, হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ, সাধারণ সম্পাদক নিখিল মানকিনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন সাফল্যের চিত্র তুলে ধরা হয়।
মোহাম্মদ নাসিম বলেন, মেডিক্যাল শিক্ষার সঙ্গে মানুষের জীবন-মরণের সম্পর্ক রয়েছে। বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর মান বজায় রাখতে হবে। নিম্নমানের কলেজ থেকে বের হয়ে একজন দক্ষ চিকিৎসক এবং মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব নয়। এ ধরনের চিকিৎসকরা অনেক সময় জাতির জন্য হুমকি হয়ে ওঠেন। ভাড়াটে ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকে না। তাই সম্প্রতি বেশ কয়েকটি কলেজে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার উচ্চ আদায়ের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারি হাসপাতালে নামমাত্র ডায়াগনোসিস ফি নেয়া হয়। সরকারি হাসপাতালের অনেকগুণ বেশি ফি নেয়া হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। ফি কমিয়ে আনার জন্য ওই সব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের আহ্বান জানিয়ে আসছি। খুব শিগগিরই ওইসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের আবার ডেকে এনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীর স্বজনের সাথে ইন্টার্ন ডাক্তারদের দুর্ব্যবহারের ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। তদন্তে কয়কেজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তদন্ত্র কমিটি। দোষী ডাক্তারদের ইন্টার্নশিপ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করাসহ বদলি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, মেডিক্যাল কলেজে বেসিক সাইন্সের শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে সত্য, এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, আগামীতে এ সমস্যা থাকবে না। হাসপাতালগুলোতে অ্যানেসথেসিয়া সঙ্কটের বিষয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেনিং কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
স্বাস্থ্য সচিব সিরাজুল ইসলাম স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের নৈতিকতা জাগ্রত রেখে কাজ করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে আইন অনুযায়ী অত্যাবশ্যকীয় ১১৭টি ওষুধের বাইরে অন্যান্য ওষুধের দাম নির্ধারণে সরকার সরকারি হস্তক্ষেপ থাকে না। তাই এ বিষয়ে ভাবার সময় এসেছে উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে বিকেলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান ও বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী লাকী আকন্দকে দেখতে যান। এ সময়ে তিনি তাদের শয্যাপাশে বসেন এবং চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। চিকিৎসায় কোনোরকম ক্রটি না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে নির্দেশ দেন। এ সময় বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. কামরুল হাসান খান, প্রো-ভিসি (গবেষণা) প্রফেসর ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার প্রমুখ।
এ ছাড়া তিনি একই হাসপাতালে সাবেক সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামানের স্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী সাইফুজ্জামান শেখরের মাতা বেগম আসাদুজ্জামানকে দেখতে যান। এর আগে দুপুরে মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে অননুমোদিত কর্মস্থলে অনুপস্থিত চিকৎসকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন