বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সউদি আরব বিনিয়োগে আগ্রহী

| প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থনীতিতে তেলের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং দেশে অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা
ইনকিলাব ডেস্ক : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছে সউদি আরব। এ অঞ্চলে কিভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো যায়, এ লক্ষ্যে এশিয়ার চারটি দেশে মাসব্যাপী এক সফরে বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায় রয়েছেন সউদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদ। এর আগে সফর করেছেন মালয়েশিয়া। এরপর যাবেন ব্রুনাই, চীন এবং জাপানে। মূলত এসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতেই তার এই সফর। গত রোববার থেকে সফর শুরু করেছেন তিনি। সংবাদ মাধ্যমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সউদি আরব থেকে সবচে বেশি তেল ক্রয়কারী দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার, বিনিয়োগ বাড়ানোসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক সুবিধার কথা ভেবেই তার এই সফর। দুই বছর আগে সিংহাসনে আরোহণের পর থেকে নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন সউদি বাদশাহ। অর্থনীতিতে তেলের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং দেশে অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে সউদি আরব। অর্থনৈতিক সংস্কার পরিকল্পনায় ইতিমধ্যে দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জে পড়েছে দেশটি। তেলের দাম কমে যাওয়ায় এ খাত থেকে আয় কমতে শুরু করেছে তাদের। পারস্পরিক বিনিয়োগের হিসেবে মালয়েশিয়ার মতো দেশে সউদি আরবের বিনিয়োগ খুব একটা লাভজনক হবে না। এজন্য অপেক্ষা করতে হবে চীন এবং জাপানে দেশটি কী ধরনের বিনিয়োগ করে তা দেখার জন্য। এর আগে জাপানি প্রতিষ্ঠান সফটব্যাংকের সঙ্গে মিলে দেশটিতে ৪৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে রিয়াদ। সউদি আরবের বাদশাহর মালয়েশিয়া সফরের পর ইতিমধ্যে মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ঘোষণা করেছেন যে, দেশটির একটি তেল শোধনাগারে ৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে সউদি সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মূলত মালয়েশিয়ার তেল কোম্পানি পেট্রোনাস। এই প্রথম সউদি রাজতন্ত্রের সঙ্গে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। ধারণা করা হচ্ছে, এতে পেট্রোনাসের মুনাফা অনেক বেড়ে যাবে। গত কয়েক বছর ধরে তেলের নিম্ন দামের কারণে সঙ্কটে আছে কোম্পানিটি। বিগত এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে এটাই সউদি বাদশাহর প্রথম মালয়েশিয়া সফর হলেও দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই ঘনিষ্ঠ ছিল।
খবরে বলা হয়, আগামী বছরের মধ্যে রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরমাকোর ৫ শতাংশ শেয়ার এশিয়ার বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করতে চায় সউদি আরব। শেয়ার বাজারে গেলে আরমাকো হবে বিশ্বের সবচে বড় আইপিওর কোম্পানি। বর্তমানে তেল নির্ভরতা কমিয়ে নতুন অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাইছে দেশটি। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধান ভূমিকা পালন করবে এশিয়ার ব্যাংক ও অন্যান্য কোম্পানিগুলো। তবে সউদি আরব তার অর্থনীতিতে তেল নির্ভরতা কমিয়ে আনতে চাইলেও বিশ্বের সবচে বড় তেল রফতানিকারক হিসেবেও নিজের অবস্থান ধরে রাখতে চায় এবং এশিয়ার বাজারগুলোতেও তেল সরবরাহকারী হিসেবে প্রধান ভূমিকা পালন করতে চায়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সউদি আরব চাচ্ছে টোকিও এবং বেইজিং তাদের লজিস্টিক, অবকাঠামো এবং প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করুক। তবে এসব দেশ থেকে শুধু সউদি আরবে বিনিয়োগই নয়, দেশগুলোতে নিজের অপরিশোধিত তেলের ব্যবসাও ধরে রাখতে চাইছে সউদি প্রশাসন। বর্তমানে চীন অপরিশোধিত তেলের সবচে বড় বাজার। তেল আমদানিতে ইতিমধ্যে তারা যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৪ সালের এক উপাত্ত অনুসারে, চীন তার প্রয়োজনীয় তেলের বেশিরভাগই ক্রয় করে আরব রাজতান্ত্রিক দেশগুলো থেকে। তবে তেল বিক্রিতে পিছিয়ে নেই রাশিয়া এবং ইরানও। প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মোটেও কম যায় না তারা। এই দুই দেশের তেলক্ষেতেই বিনিয়োগ আছে চীনের। তবে বেইজিং প্রধান সরবরাহকারী হয়ে থাকতে চাইছে চীনই। ২০১৮ সাল থেকে আন্তর্জাতিক শেয়ার বাজারে প্রবেশ করবে সউদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরমাকো। এটা হবে বিশ্বের সবচে বড় শেয়ার বিক্রিকারী কোম্পানি। যদিও এখন পর্যন্ত এর মূল্যমান নিয়ে সংশয় আছে। তবে এসব সত্ত্বেও এশিয়ার বিনিয়োগকারীদের কাছে অন্তত ৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির ইচ্ছা আছে সউদি আরমাকোর। ইতিমধ্যে এশিয়ার বাজার তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আলোচনা চলছে। তবে এখনো তা নিশ্চিত না। অন্যদিকে, ঐতিহাসিকভাবেই সউদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী মিত্র। সেটা রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে বিচলিত সউদি রাজতন্ত্র। রয়টার্স, বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন