বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য নিরঙ্কুশ করার পাঁয়তারা ট্রাম্পের

| প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রশাসনে এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়েছেন যাদের বেশ কয়েকজন ইরাক-আফগান-ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন
ইনকিলাব ডেস্ক : সভ্য পৃথিবীকে ঐক্যবদ্ধ করে বিশ্ব থেকে সন্ত্রাসবাদকে সমূলে উৎপাটনের আহ্বানের মধ্যদিয়েই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার মুসলিম বিদ্বেষী রূপরেখা স্পষ্ট করেছেন। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বুশ যুগের কথিত সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধের মতোই পবিত্রযুদ্ধ আর বিধাতার প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছেন। এ কারণে প্রশাসনে এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়েছেন যাদের বেশ কয়েকজন ইরাক-আফগান-ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিনের মাথায় তিনি জারি করেন মুসলিমবিরোধী নিষেধাজ্ঞা। সিআইএ প্রধানকে তুরস্ক সফরেও পাঠান ট্রাম্প। নিজ দেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রায় সর্বত্র উত্থাপিত সমালোচনা উপেক্ষা করে ট্রাম্প তার উস্কানিমূলক পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন।
গত মঙ্গলবার সামরিক বাজেট ১০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। আর গত বুধবার কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে আবারও সরাসরি ইসলামি চরমপন্থীদের শত্রু হিসেবে ঘোষণা করেন। মুসলিম মিত্রদের নিয়ে প্রধানতম শত্রু ইসলামিক স্টেট (আইএস) নির্মূলের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। আর পুরো সময়জুড়ে শাসিয়ে যেতে থাকেন তেহরানকে। জারি রাখেন ইমিগ্রেশন পলিটিক্স। অর্থাৎ মুসলিম নিষেধাজ্ঞার রাজনীতি। অতীতের মার্কিন পররাষ্ট্রনৈতিক অবস্থান, ট্রাম্প প্রশাসনের নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ভ‚মিকা ও তৎপরতা এবং হোয়াইট হাউসের সাম্প্রতিক বিভিন্ন পদক্ষেপ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সেই বুশ যুগের মতো করেই ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন সামনে এনেছেন। আর এর বিপরীতে হুমকি হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন মুসলমানদের। ভীতি ছড়াতে চাইছেন জনমনে। সব মিলে সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধের নামে তিনি আদতে ইরাক-আফগান যুগে ফিরতে চাইছেন। চেষ্টা করছেন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে মার্কিন আধিপত্য আরো নিরঙ্কুশ করার।
শপথ গ্রহণের পর দেয়া বক্তব্যে ট্রাম্প তার মুসলিম বিদ্বেষের রূপ সুস্পষ্ট করেছেন। তিনি সভ্য পৃথিবীকে ঐক্যবদ্ধ করে বিশ্ব থেকে র‌্যাডিক্যাল ইসলামী সন্ত্রাসবাদকে সমূলে উৎপাটন করার আহŸান জানিয়েছেন। ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে দর্শকদের মধ্যে বেশ চাঞ্চল্য দেখা গেলেও তা মূলত সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবিøউ বুশের কথাই মনে করিয়ে দেয়। বুশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ বলে অভিহিত করেছিলেন। যে যুদ্ধ প্রকৃতপক্ষে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রূপ নিয়েছিল। ট্রাম্প অবশ্য ক্রুসেড শব্দটি ব্যবহার করেননি। যুদ্ধের প্রতি নিরঙ্কুশ সমর্থন জানিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, যখন আপনি দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে মন খুলে দেবেন, তখন সেখানে বিদ্বেষের কোনও স্থান থাকে না। যেমনটা বাইবেলে বলা হয়, যখন ঈশ্বরের মানুষেরা একত্রে বসবাস করে তখন তা হয় অত্যন্ত আরামদায়ক ও সুখকর। গত ২৭ জানুয়ারি ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে পরবর্তী তিন মাসের জন্য সব ধরনের শরণার্থী কার্যক্রম বন্ধ করেন। এতে পরবর্তী তিন মাসের জন্য সাতটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের (ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেন) নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। আদালতের আদেশে ওই মুসলিম নিষেধাজ্ঞাটি স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর তা পুনর্বহালে নতুন নির্বাহী আদেশ জারির ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এরপর বিশেষজ্ঞরা আভাস দেন, নতুন আদেশের এমন কিছু থাকার সুযোগ রয়েছে যার মধ্য দিয়ে আদালতের জটিলতা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। নতুন আদেশে দেয়া ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় মুসলিমপ্রধান দেশের পাশাপাশি অমুসলিম দেশকেও অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ইরান ও ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন। এক নির্বাহী আদেশে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। জাতিসংঘে পাস হওয়া ফিলিস্তিনে অবৈধ বসতি নির্মাণবিরোধী প্রস্তাবের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সোচ্চার ছিলেন ট্রাম্প। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি মধ্যপ্রাচ্য শান্তি-প্রক্রিয়ায় ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধাননীতি অস্বীকারের মধ্য দিয়ে ইসরায়েলি দমননীতিকে অনুমোদন করেন। ইয়েমেনে সউদি জোটের বিমান হামলায় প্রত্যক্ষ মদদ এবং সউদি প্রিন্সকে সন্ত্রাসবাদবিরোধিতার পুরস্কার দিয়ে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার অঙ্গীকার করেন ট্রাম্প। তুরস্কের সঙ্গে সমন্বিতভাবে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তার নির্দেশে তুরস্ক সফর করেন সিআইএ প্রধান। সবমিলে পুরনো ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় মধ্যপ্রাচ্যের চিরবন্ধু শক্তি সউদি-তুরস্ককে নিয়ে ইরান-ফিলিস্তিনবিরোধী অবস্থান সুস্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন তিনি। পারমাণবিক অস্ত্রের সক্ষমতা বাড়ানোর সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ডিসেম্বরের এক টুইটার পোস্টেও তিনি একই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সে (সিপিএসি) বড় আকারের সামরিকবান্ধব বাজেট পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ট্রাম্প। সিপিএসি-র সম্মেলনে ট্রাম্প মার্কিন ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম সামরিক প্রতিষ্ঠার আভাস দিয়েছেন। পুরো নির্বাচনি প্রচারণাজুড়ে মধ্যপ্রাচ্যে লাগামহীন অস্ত্র মজুদের তীব্র সমালোচনা করলেও ক্ষমতায় আসার পর ঠিকই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। আর এজন্য ট্রাম্পের পরিকল্পনায় রয়েছে ৭০টি নতুন যুদ্ধজাহাজ, সেই সঙ্গে তিনি ইরাক ও আফগানিস্তানে বুশ আমলের মতোই সেনাবাহিনীর সংখ্যা বাড়াতে সদা তৎপর। ট্রাম্প পারমাণবিক আধুনিকীকরণের জন্য প্রায় ১০ হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ করেছেন। সিপিএসি কনফারেন্সে ট্রাম্প জানান, আক্রমণ ও আত্মরক্ষা- এই দুই ক্ষেত্রেই সেনাবাহিনীর সামর্থ বাড়াতে বাজেট বৃদ্ধির জন্য তিনি কংগ্রেসে আহŸান জানাবেন। এর মধ্য দিয়ে মার্কিন সামরিক খাতকে আগের চেয়ে বড়, দক্ষ ও শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে বলেও মনে করেন ট্রাম্প। ইরাক আফগান যুদ্ধের সময়ও ওই আত্মরক্ষার অজুহাত তোলা হয়েছিল। ওয়েবসাইট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
তাজরিয়া ৪ মার্চ, ২০১৭, ২:২১ এএম says : 0
এটা এই অঞ্চলকে ধ্বংস করে ছাড়বে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন