স্টাফ রিপোর্টার : লাইসেন্সবিহীন চালক ও ২০ বছরের পুরনো মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে ঢাকা শহরে। সপ্তাহজুড়ে চলা এ অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। ৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এ অভিযানে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধে সর্বমোট ৩৪ জন চালককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-, ৩৪৪টি মামলা, ২৭টি বাস ও লেগুনা ডাম্পিং এবং ছয় লাখ ৪৯ হাজার ৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এ অভিযান চলমান থাকবে বলেও ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে।
নিবন্ধনহীন বা অপেশাদার চালকের হাতে প্রতিদিন নির্মমভাবে মরছে নিরপরাধ মানুষ। গত সপ্তাহজুড়ে ঢাকা শহরে চালানো অভিযানে মাত্র ৩৪ জন অপেশাদার বা নিবন্ধনহীন চালকের শাস্তি হয়েছে। এদের কারো ১৫ দিন কারো একমাস। যেটাকে নামেমাত্র শাস্তিই বলা চলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যমতে, দেশে মোট নিবন্ধিত হালকা ও ভারী গাড়ির সংখ্যা ২৯ লাখ ২০ হাজার ৮৩৬টি। এসব গাড়ির চালক বা নিবন্ধিত ড্রাইভারের সংখ্যা ১৭ লাখ। এর মধ্যে ১২ লাখ গাড়ি রাস্তায় চলাচল করছে নিবন্ধনহীন বা অপেশাদার চালকের হাতে। যাদের নেই কোনো গাড়ি চালানোর অনুমতি।
সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার ফলে অকালে ঝরে যাচ্ছে মূল্যবান প্রাণ। অপেশাদার চালক, যাদের নেই কোনো বৈধতা, তাদের হাত ধরেই যানবাহনের বেপরোয়া গতি আর আইন না মানায় চলছে এই মৃত্যুর মিছিল।
যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরীর দেয়া তথ্যমতে, ২০১৫-১৬ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার নিহত হয়েছেন ১৪ হাজার ৬৯৭ জন। যার ৪৮ শতাংশের জন্য দায়ী যাত্রীবাহী বাস আর ৩৭ শতাংশের জন্য দায়ী ট্রাক।
তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আমরা দেখেছি, ২০১৫ সালে ছয় হাজার ৫৮১টি সড়ক দুর্ঘটনায় আট হাজার ৬৪২ জন নিহত ও ২১ হাজার ৮৫৫ জন আহত হন। আর ২০১৬ সালে চার হাজার ৩১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় হাজার ৫৫ জন নিহত এবং ১৫ হাজার ৯১৪ জন আহত হন।
এ বিষয়ে দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট, বুয়েটের পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, দুর্ঘটনায় নিহতদের এটা একটা বড় পরিসংখ্যান, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া অধিকাংশ সময় চালকদের দোষেই এসব দুর্ঘটনা হয়ে থাকে। চালকদের পরীক্ষার মাধ্যমে নিবন্ধন নিশ্চিত করা গেলেই এ দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব। সাম্প্রতিক সময়ে যাত্রীকল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান বলছে, চলতি ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ১০১২ জন। নিহতদের মধ্যে ৫৪ জন নারী ও ৫৫ জন শিশু।
এ বিষয়ে সাবেক শ্রমিকনেতা ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, এত সব দুর্ঘটনার কারণ একটাই, এই যে ১২ লাখ গাড়ি যারা চালাচ্ছেন তারা অপেশাদার চালক। নেই কোনো জবাবদিহিতা, মানছে না কোনো আইন। এগুলো রোধ না করা গেলে, মৃত্যুর মিছিল কখনোই কমানো সম্ভব নয়।
বিআরটিএ সচিব শওকত আলী জানান, ১২ লাখ গাড়ির কোনো নিবন্ধিত চালক নেই এটা সত্য। তবে মোট নিবন্ধিত গাড়ির ১৭ লাখ ৪৫ হাজার ২৯০টি হলো মোটরবাইক, এই মোটরবাইকের চালকেরা কিন্তু নিয়মিত গাড়ি চালায় না। তাই বলা যায়, মহাসড়কে যারা গাড়ি চালায়, তারা পেশাদার গাড়িচালকই।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এই সেক্টরে বেশ কিছু জনবল ঘাটতি আছে, ১৯৯০ সালে ২৯১ জন নিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে আছে ৮২৭ জন। প্রায় ২৪০টির মতো পদ এখনও শূন্য আছে। এই সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছি, প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ গাড়ির লাইসেন্স দেই আমরা। প্রতিটি গাড়ির বছরে একবার ফিটনেস পরীক্ষা করি।
পরীক্ষা না নিয়ে লাইসেন্স দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের যে অভিযোগ আছে, পরীক্ষা না দিয়েও লাইসেন্স পাওয়া যায় সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন