বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উন্নয়নকাজের ভোগান্তিতে ঢাকাবাসী

প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : খানাখন্দে বেহাল হয়ে আছে রাজধানীর প্রায় সব সড়কই। এর মধ্যে দু-একটি দিয়ে কোনো রকমে চলাফেরা করা গেলেও অনেক রাস্তাই এখন চলাচলের অনুপযুক্ত। সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কগুলোতে কাদা আর পানি মিলে একাকার হয়ে যায়। এতে বোঝার কোনো উপায় থাকে না Ñ কোথায় খানখন্দ আর কোথায় সমতল। এ অবস্থায় চলাচল করতে প্রতিনিয়তই সড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে রোদ উঠলেই বাতাসে ধুলাবালি উড়ে চোখ-মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিশ্বাসের সাথে ধুলাবালি নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট ও এজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী।
শুষ্ক মৌসুমে রাজধানীর উন্নয়ন কাজের জন্য বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থাকে রাস্তা কাটার সীমিত পরিসরে অনুমোদন দেয়ার কথা থাকলেও এজন্য রয়েছে কঠোর নিয়মনীতি। এ নিয়মনীতি তদারকি করার মূল দায়িত্বে রয়েছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন।
কয়েকদিন ধরে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকার চলমান উন্নয়ন কাজ সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের খোঁড়াখুঁড়ির কাজ অনেকটা নিয়মনীতির মধ্যেই চলছে। অন্যদিকে দক্ষিণের উন্নয়ন কাজের নেই কোনো সুনির্দিষ্ট তদারকি। যে কারণে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে নগরবাসী পড়েছে চরম দুর্ভোগে।
ডিএসসিসি’র উন্নয়ন কাজ : বছরের শুরু থেকেই রাজধানীর গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া অংশে চলছে সড়ক সংস্কার ও ড্রেন নির্মাণের কাজ। এ কাজের জন্য সড়কের অর্ধেকজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে ইটপাথরের খোয়ার। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের অংশে সড়কের অর্ধেকেরও বেশি অংশ কেটে পাইপ বসানো হচ্ছে। সড়কটি দিয়ে একসঙ্গে পাশাপাশি দুটি গাড়ি চলতে পারে না। ফলে এখানে সারাক্ষণ লেগে থাকে যানজট।
শান্তিনগর-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারের নিচের অবস্থাও একই। এতে একদিকে যেমন ফ্লাইওভারের নির্মাণ সামগ্রী, অন্যদিকে নিচের সড়কের অর্ধেকেরও বেশি অংশ কেটে চলছে ওয়াসার স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপনের কাজ। ফলে সড়কটিতেও লেগে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট।
সুপ্রভাত পরিবহনের বাসচালক আমজাদ হোসেন বলেন, শান্তিনগরের শান্তি কবে যে ফিরে আসবে জানি না। কোথাও কোনো শান্তি নেই। শুধু শুনি উন্নয়ন আর উন্নয়ন, আর আমাদের ভোগান্তির পর ভোগান্তি।
তিনি জানান, গত চার বছর ধরে শান্তিনগরের এ স্থানটিতে তিনি এ দুর্ভোগ দেখে আসছেন। তাছাড়া প্রতিবছর গ্রীষ্ম থেকে শুরু করে বর্ষায়ও চলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। রাস্তার বিভিন্ন অংশে বড় বড় খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। বর্ষার পানি জমে থাকলে সেইসব খানাখন্দে পড়ে প্রতিদিন দুর্ঘটনা শিকার হয় পথচারী ও যানবাহন।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকার বেশিরভাগ সড়কে চলছে উন্নয়ন কাজ। সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি সেবাদানকারী সংস্থা, ঢাকা ওয়াসা, তিতাস, ডেস্কোসহ সড়কের নিচে থাকা অন্যান্য সংস্থার সার্ভিস লাইন ঠিক করতে প্রতিনিয়ত রাস্তা কাটতে হচ্ছে। বিভিন্ন সেবাসংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে সব সময়ই নগরীর সড়কে এমন চিত্র দেখা মিলে। এতে বাড়ছে নাগরিক দুর্ভোগ, অপচয় হচ্ছে সরকারি অর্থ।
এবিষয়ে খোঁড়াখুঁড়ির কাজে নিয়োজিত ঢাকা ওয়াসার শ্রমিক আমান উল্লা বলেন, মানুষের দুর্ভোগ দেখলে আমাদেরও খারাপ লাগে। আমরা কী করব? যেভাবে নির্দেশ আসে আমরা সেভাবে পালন করি। কিন্তু তখন কষ্ট লাগে যখন মানুষ আমাদেরকে উদ্দেশ করে গালাগাল দেয়।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে আরও জানা গেছে, কিছু শর্ত সাপেক্ষে অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সড়ক খননের অনুমতি দিয়ে থাকে সিটি কর্পোরেশন। এর মধ্যে জনদুর্ভোগ হয় এমন সময় সড়ক খোঁড়া যাবে না। অনুমতির ২৮ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। প্রধান সড়কগুলোতে সরকারি ছুটির দিন ও রাতের বেলায় কাজ করার বেশি তাগিদও থাকে।
কিন্তু তারা এসব নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। আগে খোঁড়াখুঁড়ির জন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে অনুমতি নেয়া হলেও এখন আর তাও নিচ্ছে না। খোঁড়াখুঁড়ির সঙ্গে জড়িতরা নিজেদের ইচ্ছেমতই কাজ করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে সিটি কর্পোরেশনের। জনদুর্ভোগ এড়াতে রাতে সড়ক খোঁড়ার কথা থাকলেও এখন সড়ক খোঁড়া হচ্ছে দিনে। সিটি কপোরেশনের পক্ষ থেকেও এসব বিষয়ে তেমন কোনো তদারকি হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ী থেকে হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের অংশ সড়ক সংস্কারের পাশাপাশি চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। মালিবাগ রেলগেট থেকে রামপুরা বাজার পর্যন্ত সড়কেও চলছে খোঁড়াখুড়ি। কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল সড়কে চলছে ড্রেনেজ পরিষ্কারের কাজ। তাছাড়া একযোগে নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত ফুটপাতে চলছে উন্নয়ন কাজও। ফলে যানবাহনের পাশাপাশি পথচারীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
সম্প্রতি ৩০০ সড়কের তালিকা চূড়ান্ত করেছে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোতে জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু হয়েছে। নগরীর এতগুলো সড়কে একযোগে কাজ শুরু হওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।
ডিএনসিসি’র উন্নয়ন কাজ : এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় চলছে রাস্তা সংস্কারের কাজ। আর রাস্তা সংস্কার কিংবা পানির লাইন মেরামত মানেই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। রাস্তা খোঁড়া মানে রাস্তা জুড়ে মাটির স্তূূপ। সে স্তূপ কখনো কখনো ছোটখাটো টিলা আকার ধারণ করে। ফলে সংস্কার কাজ চলা এলাকায় যানচলাচল এমনকি হেঁটে চলাচলও কঠিন হয়ে পড়ে। এটাই রাজধানী ঢাকার স্বাভাবিক চিত্র।
কিন্তু এবার উত্তর সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজে এসেছে অনেটাই ভিন্নতা। সংস্কার কাজে রাস্তা খোঁড়া হলেও রাস্তাজুড়ে মাটির স্তূপ নেই। যান চলাচলে ব্যাঘাত নেই। শুধু তাই নয়, দিনের আলোতে এসব কাজ করার অনুমতিও নেই। রাতেই কাজ শেষ করে, দিনে যান চলাচলের উপযোগী করে দিতে হবে এমন ধরনের কঠিন নিয়মনীতির মধ্যে রয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারেরা।
আর এ শর্তে মানতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে রাজি করিয়ে চেনা দৃশ্য বদলে দিচ্ছেন ঢাকা উত্তরের (ডিএনসিসি) নগরপিতা আনিসুল হক।
শুক্রবার দিনগত রাতে রাজধানীর ডিএনসিসি’র কয়েকটি রাস্তা ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা যায়।
রাত ১২টার কিছু পরেই বনানী ১৮ নম্বর রোডে গিয়ে দেখা গেলো, নিয়ন আলোর নিচে চলছে ওয়াসার পাইপ বসানোর কাজ। একইসঙ্গে চলছে রাস্তা সংস্কারও। শ্রমিকরা একদিকে মাটি খুঁড়ছেন, মাটি ভরছেন। আবার ঠিক তেমনি রাস্তায় পড়ে যাওয়া বাড়তি মাটি সঙ্গে নিয়ে ট্রাকে তুলছেন।
কারণ জানতে চাইলে ঠিকাদার নাসিরউদ্দিন বলেন, খোঁড়াখুঁড়ির কাজ যতটা সম্ভব রাতে শেষ করতে হবে। সেটা সম্ভব না হলেও রাস্তা খুঁড়ে মাটির স্তূপ করা যাবে না। কাজ শেষে রাস্তা পরিচ্ছন্ন করতে হবে, যেন পরদিন সকাল থেকেই স্বাভাবিক যান চলাচল করতে পারে।
উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রেও সহজ এবং স্বাভাবিক নিয়ম মেনে টেন্ডার দেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন ঠিকাদাররা। একাধিক ঠিকাদার বলেন, আগে সর্বনিম্ন খরচ দেখাতে না পারলেও কিছুটা খরচ করে কাজ পাওয়া যেতো। এখন উত্তর সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব মেয়র আনিসুল হকের হাতে আসার পর থেকে খরচ করে কাজ নেওয়ার সুযোগ আর নেই। স্বাভাবিক নিয়মে টেন্ডার কিনে সর্বনিম্ন রেটে কাজ দেখাতে পারলেই কাজ পাওয়া যায়।
বনানী এলাকার আরেক ঠিকাদার আবুল কাশেম বলেন, গভীর রাত হলেও নিজ থেকেই কাজ তদারকি করছি। না করে উপায় নেই। হঠাৎ করে কোনো একটা ভুল হলে কাজের অর্ডার কিংবা লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে মেয়রের হুমকি আছে। স্বাভাবিক নিয়মে কাজ পাওয়ায় খুশি হয়েছি। এভাবে সর্বনিম্ন খরচ দেখিয়ে কাজ পাওয়া যায়, সেটা তো ভুলেই গিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, অনিয়মের চেনা দৃশ্যগুলো বদলে দিচ্ছেন মেয়র আনিসুল হক। আমাদের প্রিয় নগরপিতা। বলতে বলতে মাটি খুঁড়তে থাকা শ্রমিকদের দিকে এগিয়ে গেলেন আবুল কাশেম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন