শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

৫৭ সেনা কর্মকর্তা হত্যাকান্ডের সেনা তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করুন : বিএনপি

প্রধানমন্ত্রী হত্যার দায় এড়াতে পারেন না

প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৬ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : বিডিআর (বিজিবি) বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা হত্যাকান্ডের ঘটনায় সেনা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল শনিবার বিকালে এক আলোচনা সভায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এই দাবি করেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হাসিনা ওয়াজেদ এই হত্যাকান্ডের দায় এড়াতে পারেন না বলে দাবি করেছেন আরেক ভাইস-চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন।
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বীরবিক্রম বলেন, পিলখানা সদর দফতরে সেদিনের সেনা কর্মকর্তাদের নারকীয় হত্যাকা-ের সুষ্ঠু তদন্তই হয়নি। সামরিক বাহিনী একটি তদন্ত করেছিল, তৎকালীন লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলমের (ওই সময়ের কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল) নেতৃত্বে। সেই সেনাবাহিনী প্রতিবেদনটি আজ অবধি প্রকাশ করা হয়নি। আমরা এই সভা থেকে লে. জেনারেল জাহাঙ্গীরের কর্তৃক সম্পাদিত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে হাফিজ অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর মনোবল দুর্বল ও ধ্বংস করার জন্যে পরিকল্পিতভাবে ওই হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে। দেশী-বিদেশী ব্যক্তিবর্গ ওই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। বিচারের নামে একটি প্রহসন চলছে। মূল হোতারা পর্দার অন্তরালেই রয়ে গিয়েছে।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) সদর দপ্তর বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। ওই বিদ্রোহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোড়ন তোলে। বিদ্রোহের পর সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।
বিডিআর বিদ্রোহের ৫৭টি মামলায় ছয় হাজারেরও বেশি আসামির মধ্যে ৫ হাজার ৯২৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। আর হত্যা ও লুটপাটের মামলায় ৮২৪ আসামির মধ্যে ১৫২ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দফতরে বিদ্রোহ ঘটনায় নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির হত্যাযজ্ঞের ঘটনার কথা উল্লেখ হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ওই হত্যাকা-ের হাজার হাজার সেনা কর্মকর্তা বেদনাবিধুর। আমাদের উপলব্ধি আমরা আমাদের অতি আপনজনকে হারিয়েছি। এই শোকের কোনো তুলনা হয় না। কিন্তু আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, এত বড় হত্যাকা-ের ঘটনা আমরা ভুলেই যাচ্ছি। ক্রিকেট খেলা ই-িয়া-পাকিস্তানের ম্যাচ হলেও ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার হত্যাকা-ের খবর নেই। পারপাসলি ভুলিয়ে দেয়া হচ্ছে মানুষ যাতে ভুলে যায়।
বিডিআর হত্যাকা-ে নিহত কর্মকর্তারা সেনাবাহিনীর কৃতীমান কর্মকর্তা ছিলেন বলে উল্লেখ করে সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী বলেন, ওই হত্যাকা-ে যারা শহীদ হয়েছেন, তারা সেনাবাহিনীর দক্ষ কৃতী অফিসার ছিলেন। গুলজার নামে একজন অফিসার যিনি পুলিশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র‌্যাব) মধ্যে জীবনসঞ্চার করেছিলেন। অপরাধীদের দমন করে দেশজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলন। অন্যান্য সেনা কর্মকর্তারাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন, দেশে-বিদেশে বিশেষ করে শান্তিরক্ষা বাহিনীতে অত্যন্ত সম্মানের সাথে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। যারা ষড়যন্ত্র করেছে তারা জানে, এ ধরনের হত্যাকা-ের ফলে অনেক দুর্বল মানুষ সেনাবাহিনী ছেড়ে চলে যাবে, সব সময় তারা আতঙ্কে থাকবে এবং দেশের প্রতি তাদের কর্তব্য পালনে তারা সক্ষম হবে না।
বিডিআর হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত দাবির পাশাপাশি ওই হত্যাকা-ের নিহত পরিবারকে সরকারের তরফ থেকে আরো সাহায্য-সহযোগিতা দেয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
বিডিআর হত্যাকা-ের সময়ে সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদকে একজন ‘কাপুরুষ’ বলে অভিহিত করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দিন।
এই ধরনের বিদ্রোহ হলে কী করতে হবে, তা সেনাবাহিনীর কেতাবে লেখা আছে। এটা নিয়ে চিন্তা করার কোনো দরকার নেই। বিদ্রোহ হলে প্রতিটি সদস্যের দায়িত্ব এটা দমন করতে হবে। এজন্য কারো কোনো অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই। সেদিন সেনাবাহিনীর কাপুরুষ সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ কেন আদেশের জন্য গিয়েছিলেন, নাকি কোনো কাজের জন্য, নাকি নিজেই সারেন্ডার করতে গিয়েছিলেন Ñ আমরা তা জানি না।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমার বয়স আশির কাছাকাছি। আজকে মৃত্যুর আগে চোখে পানি আসে। আমাদের সবচেয়ে উপযুক্ত ভালো ছেলেগুলোকে বেছে বেছে এই সরকারের চররাই, এই সরকারের লোকেরাই এই সরকারের মুরুব্বিরাই হত্যা করেছে। এই ফেব্রুয়ারি মাস হত্যার মাস। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে হত্যা হয়েছে, ২০০৯ সালে ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করা হলো। দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হাসিনা ওয়াজেদ এই হত্যাকা-ের দায় এড়াতে পারেন না।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুববিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের সাধারন সম্পাদক শিরিন সুলতানা, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, মেজর (অব.) মিজানুর রহমান, লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ কামরুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন