শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

কি বার্তা দিতে চেয়েছিলো টিম ম্যানেজমেন্ট?

| প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা কলম্বো (শ্রীলঙ্কা) থেকে : সাকিবের বোলিং ধার কমে গেছে অনেক। সেই আগের সাকিবকে যাচ্ছে না দেখা টেস্টে। সম্প্রতি মিরাজের সামনে ম্রিয়মান হয়ে পড়ায়, কিংবা তাইজুলের সঙ্গে লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ায় সাকিব সম্পর্কে এতো কঠিন মন্তব্য করতে দ্বিধা করেননি হেড কোচ হাতুরুসিংহে। কোচ হাতুরুসিংহে ম্যানেজার সুজন জুটি অধ্যায়ে পারফরমার সকিবকে কঠোর সিদ্ধান্ত দিতে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব পড়তে হয়নি বিসিবিকে। সাকিবকে ২ দফায় বহিস্কার করেছে বিসিবি, দিয়েছে অর্থদন্ড, সিপিএলে খেলে কোটি টাকা আয়ের পথ পর্যন্ত একবার করেছে রুদ্ধ বিসিবি। ২০১৫ বিশ্বকাপ চলাকালে শৃঙ্খলা ভঙের অভিযোগে আল আমিনকে দেশে ফেরত পাঠিয়েও কঠোর বার্তা দিয়েছে বিসিবি। শৃঙ্খলা ভঙে কঠোর বিসিবি এবার ক্রিকেটারদের পারফরমেন্সেও রাখছে সার্বক্ষণিক চোখ, শততম টেস্টকে সামনে রেখে মাহামুদুল্লাহকে দেশে ফেরত পাঠানোর মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকারান্তরে সে বার্তাই দিয়েছে বিসিবি। এমনটাই জানিয়েছেন টিম ম্যানজার খালেদ মেহমুদ সুজন ‘সিনিয়র জুনিয়র বলে কোনো কথা নেই। এখানে পারফরম্যান্সটাই মেইন। দলে খেলতে হলে পারফরম্যান্স করতে হবে। স্বাভাবিক ব্যাপার এটা সবার জন্যই ম্যাসেজ। পারফরম্যান্স একটা মূখ্য ব্যাপার থাকেই এছাড়া টিমের কম্বিনেশন সবকিছুরই একটা ব্যাপার থাকে। সত্যি বলতে কি পারফরম্যান্সের উপর কিছুই নেই।’
খাবার সামনে দিয়ে, সেই খাবার কেড়ে নেয়ার মতোই ঘটনা। শততম টেস্ট খেলতে না পারার কষ্ট সারা জীবনই বয়ে বেড়াবেন মাহামুদুল্লাহ। একাদশ থেকে বাদ পড়েও তো রাখা যেতো তাকে দলের সঙ্গে। সামনে যখন ওয়ানডে এবং টি-২০ অপেক্ষা করছে, তখন তো মাহামুদুল্লাহ’র মতো একজন অলরাউন্ডারের প্রয়োজন আছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোমে ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ জয়ের নায়ক (৭৫ রান) সর্বশেষ ৪ ওয়ানডেতে রান পাননি (৬, ০, ১, ৩), তার পরও সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটে অপরিহার্যতা আছে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই সেঞ্চুরিয়ানের। নিউজিল্যান্ড সফরে টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান (৫২) বিপিএলে অল রাউন্ড পারফরমেন্সে আসর সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কারে ভুষিত হয়েছেন, পাকিস্তান সুপার লীগ (পিএসএল) এ কোয়েটা গøাডিয়েটর্সের হয়ে ৬ ম্যাচে ৭ উইকেটে বোলিং দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাহলে কেন এই দু’টি সিরিজের কথা মাথায় রেখে দলের সঙ্গে রাখা হলো না মাহামুদুল্লাহকে। যেখানে টেস্ট খেলার সম্ভাবনা নেই জেনেও মোসাদ্দেক ঘুরে বেড়াচ্ছেন দলের সঙ্গে, নিউজিল্যান্ড সফরে ২৩ জনের লম্বা বহরের খরচ সিরিজজুড়ে বহন করেছে বিসিবি, সেখানে মাত্র ক’দিনের জন্য মাহামুদউল্লাহ হয়ে গেলেন বোঝা!
চলমান সিরিজে ওয়ানডে এবং টি-২০ সিরিজের দলে যোগ দিবেন যারা, তারা কলোম্বোয় পা রাখবেন ১৮ মার্চ। অর্থাৎ মাহামুদউল্লাহকে এভাবে দেশে ফেরত পাঠানোর অর্থ এই ক্রিকেটারের জন্য সুখকর নয়। ওয়ানডে এবং টি-২০ সিরিজের দলটিও তাকে বাইরে রেখে করা হতে পারে। তবে এ শঙ্কা করছেন না সুজন, বরং ওয়ানডে এবং টি-২০ সিরিজে মাহামুদুল্লাহ’র খেলার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি ‘যেহেতু তাকে দ্বিতীয় টেস্টের জন্য বিবেচনা করা হয়নি সেহেতু দেশে ফিরে যাচ্ছে। ওয়ানডের জন্য ২২ তারিখ থেকে আমাদের প্র্যাকটিস। আজ (গতকাল) কেবল ১৩ তারিখ। ওয়ানডের সিলেকশন হয়তো কয়েকদিনের মধ্যেই দিবে। হয়তো ওয়ানডেতে হি উইল কাম ব্যাক। এটাতো খালি টেস্টের জন্যই বললাম আমি। ওয়ানডেতে সিলেক্টেড হলে হি উইল কাম ব্যাক।’
শততম টেস্টকে নিয়ে স্বপ্নময় পারফরমেন্সে প্রত্যয়ী মাহামুদুল্লাহ বিষয়টি যে স্বাভাবিকভাবে নেননি মাহামুদুল্লাহ, পেয়েছেন কস্ট, তা মনে করছেন টিম ম্যানেজার সুজন ‘প্রত্যেক খেলোয়াড়ের জন্যই এটা কঠিন সিদ্ধান্ত। খেলতে না পারাটা কষ্টের। অবশ্যই রিয়াদ হয়তো কষ্ট পেয়েছে। আমি মনে করি সে যথেস্ট পরিনত। মন খারাপ থাকলেও সে বিষয়টাকে ইতিবাচক নিয়েছে। আশা করি সে আবার ভালভাবে দলে কামব্যাক করবে।’
সৌম্য একটার পর একটা ম্যাচ হতাশ করেও টিকে আছেন, সেখানে মাহমুদউল্লাহ’র এক ম্যাচে অফফর্মই কি না ডেকে আনলো বিপত্তি? সুজন অবশ্য মাহামুদুল্লাহকে দেশে ফেরত পাঠানোর ঘটনাকে মাহমুদউল্লাহ’র জন্য ব্রেক বলছেন ‘অনেক সময় বলে ব্রেক মানুষকে ফ্রেশ করে এটার দরকার হয়। এই ব্রেকটা রিয়াদের জীবনে একটা টার্নিং পয়েণ্ট হতে পারে। আমি ওর জন্য মেন্টর। মনে করি ওর জন্য ভালো হতে পারে।’
গল টেস্টের ব্যর্থতা ঘুঁচিয়ে শততম টেস্ট জিতে সিরিজে সমতার জন্যও নাকি মাহমুদুল্লাহ’র ব্যাপারে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি ‘উই ওয়ান্টস টু বাউন্স ব্যাক। আমরা এই টেস্টে ভালো করতে চাই। আমরা সিরিজ লেভেল করতে চাই। সুতরাং ইমোশান দিয়ে এখানে হবে না। পারফরম্যান্স সবচেয়ে বড় কথা।’
তবে মাহমুদউল্লাহকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়ে টিমমেটদের সবার চোখে-মুখেও সমবেদনা, শততম টেস্টকে সামনে রেখে এক সিদ্ধান্তে দলের পরিবেশ গুমোট হওয়ায় তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় পড়াই স্বাভাবিক। মাহামুদউল্লাহকে এভাবে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানাজানি হওয়ায় তাই গতকাল অনুশীলনে প্রানবন্ত দেখা যায়নি ক্রিকেটারদের। সেই ২০০৯ সাল থেকে দলে নিয়মিত রিয়াদের এভাবে চলে যাওয়ায় অন্যদের মন খারাপ হওয়াকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতেই দেখছেন সুজন ‘মন খারাপ করার কথা সবারই। এটা খুবই স্বাভাবিক। রিয়াদ এতো বছর দলের দলের সঙ্গে আছে, তাই রিয়াদ না থাকলে তো অন্যদের মন খারাপ হবেই। তবে যেহেতু আমরা টেস্ট সিরিজে পিছিয়ে আছি আমাদের হাতে আর কোনো কিছু নেই, তাই আমি বিশ্বাস করি, এখান থেকে বের হয়ে আসব। আমরা পেশাদার ক্রিকেট খেলি। টিমের প্রয়োজনে যেটা করা হয় সবাই সেটা মেনে নেয়।’
প্রশ্ন হচ্ছে টেস্টে যেখানে অভিজ্ঞতাকে দেয়া হয় প্রাধান্য, সেখানে মাহমুদউল্লাহ’র মতো সিনিয়র ক্রিকেটারকে বাদ দিয়ে যে বার্তা দিয়েছে বিসিবি, সেই বার্তা কি সিনিয়রদের অস্বস্তির কারণ হচ্ছে না?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
kader ১৪ মার্চ, ২০১৭, ৩:৩৩ পিএম says : 0
বেশি দামে বাজে জিনিস Send back Saki b.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন