শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেবীগঞ্জে পুরোহিত হত্যা ৩ আসামি ১৮ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা : পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে পুরোহিত যজ্ঞেশ^র রায় হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তারকৃত তিন জেএমবি নেতাকে গতকাল শনিবার ১৮ দিনের জন্য জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ হেফজতে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। দুই মামলায় পুলিশ ২০ দিনের জন্য রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলে আদালত এই আদেশ দেন। আসামিরা হলো দেবীগঞ্জ শহরের কামাতপাড়া মহল্লার রফিকুল ইসলামের ছেলে আলমগীর হোসেন (৩৫), সুন্দরদীঘি ইউনিয়নের কালীরডাঙ্গা গ্রামের ভ্যানচালক হারেজ আলী (৩২) ও দ-পাল ইউনিয়নের কালীগঞ্জ মসজিদপাড়া গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে রমজান আলী (২২)। আলমগীর বর্তমানে ১৫ দিনের রিমান্ডে থাকা জাহাঙ্গীর হোসেনের ভাই। জাহাঙ্গীরসহ তিনজন আগে গ্রেপ্তার হন। রাষ্ট্রপক্ষের পিপি আমিনুর রহমান সংবাদিকদের বলেন, শনিবার পুলিশ এই তিন আসামিকে ২০ দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে আবেদন করলে পঞ্চগড়ের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মার্জিয়া খাতুন ১৮ দিনের অনুমতি দেন। পুলিশ হত্যা মামলায় ১০ দিন এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলায় ১০ দিনের জন্য আবেদন করে। তবে আদালত হত্যা মামলায় ১০ দিন এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরক মামলায় ৮ দিনের অনুমতি দেয়। এদিকে রিমান্ডের আবেদন শুনানিতে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না। গত ২১ ফেব্রুয়রি দেবীগঞ্জের সোনাপোতা গ্রামের সন্তগৌরীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তাদের গুলি ও বোমার বিস্ফোরণে আহত হন আরও দুইজন। ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই রবীন্দ্রনাথ থানায় হত্যা মামলা করেন। অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে পুলিশ আরেকটি মামলা করে। দুটি মামলাই অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের নামে দায়ের করা হয়। এই তিনজন ছাড়াও ঘটনার দিন গ্রেপ্তার খলিলুর রহমান (৫৫), বাবুল হোসেন (২৮) ও জাহাঙ্গীর হোসেন (৩০) বর্তমানে ১৫ দিনের পুলিশ হেফাজতে আছেন।
আটকদের পরিচয় দিয়েছেন স্বজনারা : গ্রেপ্তারের পর পুলিশ নাম প্রকাশ না করলেও তাদের স্বজনরা পরিচয় দিয়েছেন। তারা হলেন দেবীগঞ্জের সুন্দরদীঘি ইউনিয়নের কালীরডাঙ্গা গ্রামের মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে ভ্যানচালক হারেজ আলী (৩২) এবং দ-পাল ইউনিয়নের কালীগঞ্জ মসজিদপাড়া গ্রামের মৃত আবুল খায়েরের ছেলে রমজান আলী (২২)। হারেজ আলীর বাড়ির গোয়াল ঘর থেকে বৃহস্পতিবার রাতে অস্ত্র উদ্ধার করা হয় বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তার স্ত্রী জমিরন (২৭)। জমিরনের ভাষ্যমতে, বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে পুলিশ তাদেরকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। পরে হারেজ ঘর থেকে বের হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাতকড়া পরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখে। এরপরই পুলিশ তাদের কাছ থেকে গোয়ালঘরের চাবি নিয়ে সেখানে ঢোকে। এ সময়ের মধ্যে তাকে শোয়ার ঘরের বাইরে বের হতে দেওয়া হয়নি বলে জানান জমিরন। জমিরন বলেন, হত্যার দিন রাতে নীলফামারী থেকে র্যাবের একটি দল এসে হারেজকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরদিন তার চাচাত ভাই আব্দুস শহীদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়। আমি আমার স্বামীকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এ বিষয়ে জড়িত নন বলে জানান। হারেজের প্রতিবেশী রশিদুল ইসলাম বলেন, “পুলিশ আমাদেরকে উদ্ধার করা অস্ত্রগুলো দেখিয়েছে। এসময় আমি অস্ত্রের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে হারেজ আমাকে জানায় রাহুল নামে এক যুবক তাকে অস্ত্রগুলো দিয়েছে। র‌্যাবের ধরে নিয়ে আবার ছেড়ে দেওয়া প্রসঙ্গে পুলিশের তদারক দলের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীন মোহাম্মদ বলেন, সেটি র‌্যাবের বিষয়। তারা কী করেছে সেটা আমাদের জানা নেই।” স্থানীয়রা জানান, হারেজ প্রতিবেশীদের সঙ্গে তেমন মেলামেশা করতেন না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে তার পরিবার একদিন আগে ঈদ করে। এদিকে, রমজানের বড় ভাই মিজানুর রহমান (৩৫) বলেন, রমজানকে গত বুধবার রাতে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ছাতনাই কলোনির এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে আমরা শুনেছি। সে সেখানে কিছুদিন আগে বেড়াতে গিয়েছিল।” মিজানুর বলেন, রমজান নীলফামারীর ডোমার কলেজে বিএ পড়ছে। সে এক সময় ইসলামী ছাত্রশিবির করলেও পরিবারের বাধায় বর্তমানে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। স্থানীয়রা জানান, রমজান খুব কম সময়ই বাড়িতে থাকতেন। বেশিরভাগ সময় কোথায় থাকতেরন তা পরিবারের লোকজনও জিজ্ঞাসা করলে বলতে পারত না। দেবীগঞ্জের সন্তগৌড়ীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়ের হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সন্দেহভাজন তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ; এদের একজনকে বলা হচ্ছে ওই হত্যাকা-ের ‘হোতা’।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন