শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

সেঞ্চুরি টেস্টে মুশফিকের অন্যরকম ‘সেঞ্চুরি’

| প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী কলম্বো (শ্রীলঙ্কা) থেকে : বাংলাদেশের প্রথম উইকেট কিপার হিসেবে ১০০ ডিসমিসালের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা মাত্র ৫টি ডিসমিসাল। এমন এক মাইলস্টোনের সামনে দাঁড়িয়েও কোন আর্জিতে কাজ হয়নি। গল টেস্টে কিপিং গ্ল্যাভস খুলে শুধুই ব্যাটসম্যান পরিচয়ে খেলতে হয়েছে বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ককে। তবে কপালে লেখা ছিল বলেই, শততম টেস্টে ডিসমিসালের সেঞ্চুরিটা হয়েই গেল মুশফিকুর রহিমের। হায়দারাবাদ টেস্টে রিদ্ধিমান সাহা’র স্ট্যাম্পিং মিস করে বিসিবি’র রোষানলে এতোটাই পড়েছিলেন যে, গল টেস্টে কিপিং গ্ল্যাভস খুলে ফেলে, সেই গ্ল্যাভস টেস্টে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন মুশফিক। শততম টেস্টকে সামনে রেখে পি সারা ওভালের নেটে ব্যাটিং অনুশীলনের সময় পাঁজরে চোট পেয়ে লিটন দাস দেশে ফিরে যাওয়ায় তৃতীয় দফায় ফিরে পেলেন কিপিং গ্ল্যাভস।
নিজের কিপিং নিয়ে সমালোচনা এতোটাই তাতিয়ে দিয়েছিল যে, কাকতালীয়ভাবে ফিরে পাওয়া এই গ্ল্যাভসই সেঞ্চুরি টেস্টে সেঞ্চুরি ডিসমিসালে উদ্বুদ্ধ করলো। যে স্ট্যাম্পিং মিস নিয়ে গায়ে লেগেছে অপবাদ, পি সারায় প্রথম ইনিংসে কুশল মেন্ডিজকে অসাধারন তৎপরতায় স্ট্যাম্পিংয়ে ঘুঁচিয়েছেন সেই অপবাদ। সাকিবকে শাফল করে প্যাডেল সুইপ করার চেস্টা ব্যর্থ করে ডিকভেলাকে গ্ল্যাভসে পুরে শততম ডিসমিসালে মেতে উঠেছেন অন্য এক আনন্দে। টেস্ট ক্যারিয়ারে উইকেট কিপিং পরিচয়ে ৪৬ তম ম্যাচে করেছেন এই রেকর্ড। ৮৮ টি ক্যাচের পাশে ১২টি স্ট্যাম্পিংয়ে পূর্ন হয়েছে তার এই মাইলস্টোন।
টেস্ট প্রথম উইকেট কিপার হিসেবে খেলার সুযোগটা পেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে। খালেদ মাসুদ পাইলটের হাত থেকে কিপিং গ্ল্যাভস খুলে যে ভেন্যুতে টিম ম্যানেজমেন্ট মুশফিকুরের হাতে পরিয়ে দিয়েছেন তা, সেই পি.সারা ওভালেই টেস্টে ১০০ ডিসমিসালের মাইলস্টোনে প্রথম বাংলাদেশী উইকেট কিপার তিনি! ডিসমিসালের সেঞ্চুরিতে টেস্টে উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান পরিচয়ে অল রাউন্ড পারফরমারদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় উঠে এসেছে তার নাম। উইকেট কিপার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যাদের ৩ হাজার রানের পাশে আছে ১০০টি ডিসমিসাল, এই এলিট তালিকায় ইংল্যান্ডের অ্যালান নট, অ্যালেক স্টুয়ার্টও ম্যাট প্রায়র, অস্ট্রেলিয়ার রড মার্শ, ইয়ান হিলি, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ব্রাড হাডিন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেফ ডুজন, জিম্বাবুয়ের এন্ডি ফ্লাওয়ার, দ.আফ্রিকার মার্ক বাউচার, ভারতের মহেন্দ্র সিং ধোনী এবং নিউজিল্যান্ডের ব্রান্ডন ম্যাককালামের পাশে পেয়েছেন জায়গা।
টেস্টে ইনিংসে ৫টি করে ডিসমিসালের রেকর্ড ২ বার আছে মুশফিকুরের (২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে ঢাকায়,২০১৩ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রেমাদাসায়)। টেস্টে উইকেট কিপিং ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়েও মুশফিকুরের কিপিং তৎপরতায় পড়েনি ভাটা। জানেন, শততম টেস্টে পি সারা ওভালে ৪ ডিসমিসালে পৌছে গেছেন সেঞ্চুরিতে। তৃতীয় দিনের পড়ন্ত বেলায় গুনারত্নের ক্যাচটি নিতে পারলে আর একটি ৫ ডিসমিসালের রেকর্ড হতো তার। শ্রীলংকার দ্বিতীয় ইনিংসে করুনারত্নেকে ফার্স্ট ¯িøপে নেয়া তার ক্যাচটি পেয়েছে হাততালি।
দেশের শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করে অনন্য রেকর্ডে লিখেছেন নাম সাকিব,দেশের শততম টেস্টে ফিফটি করে বিস্ময়কর রেকর্ড হয়ে গেছে অভিষিক্ত মোসাদ্দেকের। শততম টেস্টের চতুর্থ দিনে মুশফিকুরের ডিসমিসালের সেঞ্চুরি পূর্ন করার দিনে এক ম্যাচে সর্বাধিক ৫টি ক্যাচে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশের সেরা রেকর্ড হয়ে গেছে সৌম্য সরকারেরও। এর আগে এক টেস্টে সর্বাধিক ৪টি ক্যাচের রেকর্ড ছিল রাজিন সালেহ (২০০৩ সালে করাচী টেস্ট), মাহমুদউল্লাহ (২০০৯ সালে গ্রেনাডা টেস্ট), শামসুর রহমান শুভ (২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট) এবং মুমিনুল হক (২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুলনা টেস্ট)।
পি সারা ওভালে প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন সৌম্য ৪টি ক্যাচ । ওটাও এখন পর্যন্ত এক ইনিংসে বাংলাদেশের কোন ফিল্ডারের সর্বাধিক ক্যাচের রেকর্ড। ক্যাচিংয়ে সেরা ফিল্ডারের পরিচয়টা তার নুতন নয়। ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে নেলসনে ৪ ক্যাচে আসরের রেকর্ডটা ছিল সৌম্য’র। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত টি-২০ বিশ্বকাপে শরীরের ভারসাম্য রেখে, শুন্যে লাফিয়ে বল বাউন্ডারি রোপের ভেতরে পাঠিয়ে যেভাবে পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজের ক্যাচ নিয়েছেন সৌম্য, আসরের সেরা ক্যাচের স্বীকৃতি পেয়েছে তা। টেস্টে টানা তিন ইনিংসে ফিফটিতে, ওপেনিংয়ে বড় পার্টনারশিপে অবদান রেখেও ইনিংসকে বড় করতে না পারার আক্ষেপ বয়ে বেড়াচ্ছিলেন সৌম্য। ক্যাচের রেকর্ডে কিছুটা হলেও লাঘব হবে সেই কস্ট।
টেস্টে ৩ হাজার রানের পাশে ১০০ ডিসমিসাল
উইকেটরক্ষক ম্যাচ রান ডিসমিসাল
অ্যালান নট (ইংল্যান্ড) ৯৫ ৪৩৮৯ ২৬৯
রড মার্শ (অস্ট্রেলিয়া) ৯৬ ৩৬৩৩ ৩৫৫
জেফ ডুজন (উইন্ডিজ) ৮১ ৩৩২২ ২৭০
ইয়ান হিলি (অস্ট্রেলিয়া) ১১৯ ৪৩৫৬ ৩৯৫
অ্যালেক স্টুয়ার্ট (ইংল্যান্ড) ১৩৩ ৮৪৬৩ ২৪১
অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার (জিম্বাবুয়ে) ৬১ ৪৭৯৪ ১৫১
মার্ক বাউচার (দ.আফ্রিকা) ১৪৭ ৫৫১৫ ৫৫৫
অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (অস্ট্রেলিয়া) ৯৬ ৫৫৭০ ৪১৬
কুমার সাঙ্গাকারা (শ্রীলঙ্কা) ১৩৪ ১২৪০০ ১৫১
ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম (নিউজিল্যান্ড) ১০১ ৬৪৫৩ ১৭৯
মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ) ৫৪ ৩২৪৩ ১০০
মহেন্দ্র সিং ধোনী (ভারত) ৯০ ৪৮৭৬ ২৯৪
ম্যাট প্রায়র (ইংল্যান্ড) ৭৯ ৪০৯৯ ২৫৬
ব্রাড হাডিন (অস্ট্রেলিয়া) ৬৬ ৩২৬৬ ২৭০

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন