শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সোনালি আসর

বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ ঋতু

| প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বা তে ন বা হা র : শুষ্ক হিমেল হাওয়ার সাথে কুয়াশার চাদর মোড়া শীতের প্রকোপ কমে এলে, নতুন পত্রপল্লবে শোভিত অবয়ব নিয়ে আবির্ভূত হয় মহাজাগরণের ঋতু, ঋতুরাজ বসন্ত। সবুজ পত্রপল্লবে শোভিত এ ঋতুর জাগরণে কোকিলের কুহুতান ভাসে আকাশে-বাতাসে। ফুলে ফুলে ভরে উঠে বাগবাগিচার তরুলতা আর পত্রপল্লব। নতুন এক শিহরণ জাগে কিশোর যুবা আর সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মনে।
এ সময় যব, গম, মসুরি, তিষি, রাই, খেসারি, চিনা, কাউন, ধন্যে অবশেষে পাকা বোরো ধান ঘরে তোলার জন্য ব্যস্ত সময় কাটে কৃষাণ-কৃষাণীর। রাখাল বাঁশির সুরে পুরনো স্মৃতিকথা জাগে হাজার মনের গভীরে। প্রাণে প্রাণে স্পন্দন জাগে সে ঋতুর অভিনব সাজে, পোশাক ও রূপ-লাবণ্যে।
মধ্যযুগের এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবির্ভাবের পূর্বে এ ঋতুকে নিয়ে মেতে থাকতেন তৎকালীন ছোট-বড় সব কবি-সাহিত্যিক আর ভাবুক শ্রেণী। এর মধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তাচেতনা এ ঋতুকে ছাড়িয়ে অন্য একটি বিশেষ ঋতু তার ছড়া-কবিতা-গল্পে তথা মন-মননে ঠাঁই দিয়ে ঐ ঋতুকে মহিমান্বিত করে তুলেছেন। সত্যিই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূর্বে কমবেশি সব কবি-সাহিত্যিক এ ঋতুকে নিয়ে মেতে থেকেছেন। এর ব্যতীক্রম শুধু বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি বর্ষা ঋতুকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন এবং এ ঋতুকে নিয়েই মেতে থেকেছেন। যেমন-
‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে
বাদল গেছে টুঁটি
আজ আমাদের ছুটি ও ভাই
আজ আমাদের ছুটি।’
কিংবা
‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে
তিল ঠাঁই আর নাহিরে
ওগো আজ তোরাÑ
যাসনে ঘরের বাহিরে।
তবে, বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতির প্রিয় ঋতু হচ্ছে বসন্ত। কারণ, এ ঋতু ঘিরেই বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জনসমূহ এসেছে। মহান ৮ই ফাল্গুন বা একুশে ফেব্রæয়ারিতে সালাম, জব্বার, রফিক, শফিক, বরকতসহ নাম জানা-না জানা শত শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে মাকে মা ঢাকার অধিকার, মায়ের ভাষা বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার। ‘মহান একুশে ফেব্রæয়ারি’ যা আজ বিশ্ববাসীর কাছে বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। আর এ মাতৃভাষার আন্দোলন এবং জয় থেকে এসেছে স্বাধিকার আন্দোলন। যে আন্দোলনের রক্তাক্ত পথ পেরিয়ে ১৩৭৭ বাংলা সনের ১২ চৈত্র বা ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ সশস্ত্র ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে মা-মাটি এবং বাংলা ভাষার চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জিত হয়। তাই বসন্ত ঋতু আজ বাঙালি জাতির জীবনে মা-মাটি মাতৃভাষা আর স্বাধীনতার মহান দিনক্ষণ। যা চিরস্মরণীয় হয়ে আছে এবং থাকবে।
তাই পাতা-পল্লবে শোভিত এ বসন্ত ঋতু বাংলার ঘরে ঘরে প্রিয় ঋতু। ফসল তোলার এবং ফসল বোনার ঋতু। শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী এবং সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রিয় ঋতু। কারণ এ ঋতু বা সময়ে অর্জিত শ্রেষ্ঠ অর্জনের জন্যই আমরা বাঙালি জাতি বিশ্বে নন্দিত জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে এবং চলতে শিখেছি। আলোর পথে ক্ষীপ্র পায়ে হাঁটতে শিখেছি এবং হিমালয়ের মত মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখেছি। আমাদের সকল সত্তাজুড়ে আজ বসন্ত ঋতুর অর্জিত উল্লাসÑ
আগামী দিনের স্বপ্নে স্বাধীন সূর্য উঠে
পুব আকাশের রক্ত লাল দৃশ্যপটে সুখ
সম্ভাবনার শপথ প্রিয় নবীন আশায়
মা ও মাটির স্বাধীনতায় ঋদ্ধ স্বাধীন বুক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন